Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
রাজস্ব ক্ষতির দায় নেবে না পশ্চিমবঙ্গ

নেট লেনদেনে ২% কর ছাড়ের প্রস্তাব

অর্থ মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী, জিএসটিতে এই ছাড় দিতে গেলে চলতি অর্থবর্ষেই প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হতে পারে। প্রশ্ন হল, কোথা থেকে সেই ক্ষতি পূরণ হবে।

প্রেমাংশু চৌধুরী
শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:১২
Share: Save:

নোট বাতিলের অন্যতম লক্ষ্য ছিল ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড, মোবাইল এবং সাধারণ ভাবে অনলাইনে আর্থিক লেনদেন বাড়ানো। এমনটাই দাবি করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

বাস্তবে তা হয়নি। নোট বাতিলের পরে নগদ টাকার অভাবে মানুষ ডিজিটাল লেনদেন করতে বাধ্য হয়েছিলেন। নোটের জোগান বাড়তেই আবার নগদ কেনাবেচা বেড়েছে। ডিজিটাল লেনদেন কমে গিয়ে প্রায় আগের দশায়, যা ধরা পড়েছে সরকারি পরিসংখ্যানেই।

ডিজিটাল লেনদেনে উৎসাহ দিতে এ বার অরুণ জেটলির অর্থ মন্ত্রকের প্রস্তাব, ২ শতাংশ জিএসটি ছাড়। অর্থাৎ, যেখানে ১৮ শতাংশ জিএসটি লাগার কথা, সেখানে কার্ড, অনলাইন বা মোবাইল অ্যাপে টাকা মেটালে ১৬ শতাংশ হারে জিএসটি দিলেই হবে। তবে এই ছাড় প্রতি লেনদেনে ১০০ টাকার বেশি হবে না।

মুশকিল হল অন্যত্র। অর্থ মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী, জিএসটিতে এই ছাড় দিতে গেলে চলতি অর্থবর্ষেই প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হতে পারে। প্রশ্ন হল, কোথা থেকে সেই ক্ষতি পূরণ হবে।

অর্থ মন্ত্রকের প্রস্তাব, এর অর্ধেক দায় রাজ্যও নিক। ২ শতাংশ ছাড় দেওয়া হলে, তার ১ শতাংশ যাবে কেন্দ্রীয় জিএসটি থেকে, বাকি ১ শতাংশ যাবে রাজ্যের জিএসটি থেকে। প্রশ্ন হল, রাজ্যগুলি কি সেই দায় নেবে? অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের রাজি করানোটাই এখন জেটলির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।

পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বুধবারই সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এ ধরনের কোনও প্রস্তাব পশ্চিমবঙ্গ মানবে না। অমিতবাবু এখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে স্কটল্যান্ডে। সেখানেই তাঁর কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি লন্ডনে আসার আগে গুয়াহাটিতে জিএসটি পরিষদের বৈঠকে ছিলাম। সেখানে এই ধরনের একটি কথা কানে আসে। তার আগে দিল্লিতে আধিকারিক পর্যায়ের একটি বৈঠকের পরেও পশ্চিমবঙ্গের আধিকারিকরা এমন সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু গুয়াহাটির বৈঠকে আমি স্পষ্ট ভাবে বলে এসেছি পরিষদে আলোচনা ছাড়া এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। ফলে আমরা তার তীব্র বিরোধিতা করব।’’ অমিতবাবুর আশা, জিএসটি পরিষদে আলোচনা হলে অনেক রাজ্যই সমস্বরে প্রতিবাদ জানাবে। কারণ কেন্দ্র যা করতে চাইছে, তা আসলে জিএসটির একটি নতুন হার, যেটা ১৮% থেকে কমে ১৬%। অমিতবাবুর দাবি, সকলের সঙ্গে জিএসটি কাউন্সিলে আলোচনা ছাড়া কখনওই এটা করা চলবে না। পশ্চিমবঙ্গ নীতিগত ভাবে সর্বদাই এর বিরোধিতা করবে।

কংগ্রেস শাসিত এক রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর যুক্তি, ‘‘আমাদের ক্ষতি হলেই তো একটা অংশ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারকে মিটিয়ে দিতে হবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, কেন্দ্রের কি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার রসদ থাকবে? ওরা বরঞ্চ সেটা আগে ভাবুক।’’

হঠাৎ ডিজিটাল লেনদেনে উৎসাহ দিতে মোদী সরকার জিএসটিতে ছাড় দিতে চায় কেন?

সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, গত বছরের ৮ নভেম্বর নোট বাতিলের সময়ে নরেন্দ্র মোদী তিনটি লক্ষ্যের কথা ঘোষণা করেছিলেন: কালো টাকার বিনাশ, জাল নোট খতম করা ও সন্ত্রাসে আর্থিক মদত বন্ধ করা। সমালোচনার মুখে পরে কেন্দ্র বলেছিল, চতুর্থ লক্ষ্য নগদ লেনদেন কমানো। প্রথম তিনটি লক্ষ্যই পূরণ হয়নি বলেই অভিযোগ। সংশ্লিষ্ট মহলের ইঙ্গিত, এ বার তাই চতুর্থ লক্ষ্য পূরণে মরিয়া মোদী সরকার।

অর্থ মন্ত্রকের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জিএসটি ছাড় পাওয়ার জন্যই গ্রাহকরা কেনাকাটা করার সময়ে নগদের বদলে কার্ডে বা মোবাইল অ্যাপে দাম মেটাতে চাইবেন। ফলে ডিজিটাল লেনদেন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে। কিন্তু এমনিতেই জিএসটি চালুর পরে রাজস্ব আদায় প্রতি মাসে কমেছে। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সড়ক তৈরিতে, ব্যাঙ্কে পুঁজি জোগাতে বেশি করে অর্থ ঢালতে হচ্ছে। গুয়াহাটিতে জিএসটি পরিষদের বৈঠকে প্রায় শ’দুয়েক পণ্যে জিএসটি কমানোর সিদ্ধান্তের পরে এমনিতেই ২০ হাজার কোটি টাকা আয় কমবে। তার উপরে ডিজিটাল লেনদেনে ছাড় দেওয়ার ঠেলা সামলাবে কে?

অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের যুক্তি, প্রথমে রাজস্ব ক্ষতি হলেও পরে তা পূরণ হয়ে যাবে। কারণ ডিজিটাল লেনদেন হলে কোনও ভাবেই জিএসটি ফাঁকি দেওয়া যাবে না। তাই আখেরে রাজস্ব আদায় বাড়বে। প্রথম দিকের ধাক্কা সামলাতেই রাজ্যগুলিকে দায় নিতে বলবে কেন্দ্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tax Net transaction
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE