বাড়িওয়ালা বনাম ভাড়াটিয়া। ঝগড়া নিশ্চয় দু’পক্ষই এড়াতে চান। তবুও ঝামেলা বাধে আইনি বিষয়গুলি গোড়াতেই খুঁটিয়ে না-দেখার কারণে। তাই সেই সম্ভাবনা নির্মূল করতে অন্তত চুক্তির সময়ে নীচের কথাগুলি খেয়াল রাখুন—
বাড়ি বা ফ্ল্যাটের বিবরণ
• জায়গা কতটা (কত বর্গ ফুট)।
• গ্যারাজের (থাকলে) মাপ।
• ‘কমন এরিয়া’ (থাকলে)— যা ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালা উভয়েই ব্যবহার করবেন। যেমন, বাড়িতে ঢোকা-বেরোনোর পথ, সিঁড়ি ইত্যাদি।
• ঢোকা-বেরোনোর রাস্তা, সিঁড়িও আলাদা কি না।
চুক্তির মেয়াদ
• কত দিনের জন্য ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। যে-দিন চুক্তি সই হয়, তার মেয়াদ শুরু হয় সে-দিন থেকেই।
• মেয়াদ ফুরোনোর পরে নতুন করে আর এক দফা চুক্তি করবেন কি না, সে বিষয়ে শুরুতেই খোলাখুলি আলোচনা করে নেওয়া ভাল।
• চুক্তি পুনর্নবীকরণ করলে, নতুন কী শর্ত আরোপ হতে পারে, তা নিয়েও শুরুতে কথা বলে রাখুন।
নোটিস কত দিনের
• কোনও কারণে দু’পক্ষের বনিবনা না-হলে, দুম করে ভাড়াটিয়াকে উঠিয়ে দেওয়া যায় না। তার জন্য নোটিস দিতে হয়।
• চুক্তিতে থাকা উচিত যে, সেই নোটিস কত দিনের।
• বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়া কখন কী ভাবে চুক্তি শেষ করতে পারেন, তার বিবরণ থাকা জরুরি।
• সাধারণত মেয়াদের আগে চুক্তি শেষ করতে চাইলে, অন্তত ৩০ দিন আগে নোটিস দিতে হয়। এবং তা দেওয়া উচিত লিখিত ভাবে
সজাগ বাড়িওয়ালা
আপনি বাড়িওয়ালা হলে, নীচের বিষয়গুলি দেখে নিতে ভুলবেন না—
• সিকিউরিটি ডিপোজিট ও ভাড়ার অঙ্ক সংখ্যা ও শব্দে লেখা আছে কি না।
• সম্পত্তির কোনও ক্ষয়-ক্ষতি হলে, সেই বাবদ টাকা সিকিউরিটি ডিপোজিট থেকে কেটে নেওয়ার শর্ত।
• ভাড়াটিয়ার পরিচয়পত্র ও স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণপত্র।
• প্রতি মাসে কত তারিখের মধ্যে ভাড়া মেটাতে হবে, তার উল্লেখ চুক্তিতে আছে তো?
• ভাড়াটিয়াকে আগাম জানিয়ে সম্পত্তি তদারকির অধিকার। যাতে মাঝেমধ্যে দেখা যায় যে, বাড়ি-ঘর ঠিকঠাক আছে কি না।
• তিন মাস ভাড়া না-পেলে, নোটিস ছাড়াই ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদের অধিকার।
• চুক্তি শেষের পরেও ভাড়াটিয়া বাড়ি খালি করতে না-চাইলে, জোর করে ওঠানোর শর্ত।
• বাড়িওয়ালার বিশেষ দরকারে (যেমন, ছেলে-মেয়ের বিয়ে, ছেলের বিয়ের পরে আলাদা জায়গার প্রয়োজন, নিজে থাকা বা নিজের ব্যবসার জন্য বাড়তি জায়গা জরুরি হয়ে পড়া ইত্যাদি) ভাড়াটিয়াকে উঠে যেতে বলার রাস্তা খোলা রাখা।
• চুক্তিপত্র ১০ বা ২০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে লিখে পাবলিক নোটারিকে দিয়ে তা বৈধ করে নিতে ভুলবেন না।
চৌখস ভাড়াটিয়া
পরে ঝামেলা এড়াতে ভাড়াটিয়া হিসেবে শুরুতেই জেনে রাখুন—
• ভাড়া না-দিলে বাড়িওয়ালা আপনাকে উঠিয়ে দিতে পারেন। অনেক সময়ে সেই অসৎ উদ্দেশ্যের জমি তৈরি করতে বাড়িওয়ালা ইচ্ছাকৃত ভাবে ভাড়া নিতে চান না। সে ক্ষেত্রে রেন্ট কন্ট্রোলারের কাছে তা জমা দিতে পারেন। তা হলে আর ভাড়া না-দেওয়ার দায় আপনার নয়।
• জল, বিদ্যুতের মতো অত্যাবশ্যক পরিষেবা থেকে কখনও ভাড়াটিয়াকে বঞ্চিত করা যায় না। এ ধরনের চেষ্টা করা হলে, তা কিন্তু শাস্তিযোগ্য। সে ক্ষেত্রে পুলিশে খবর দিতে পারেন।
• বাড়িতে ঢোকা ও বেরোনোর রাস্তা আটকে দেওয়ার অধিকার বাড়িওয়ালার নেই। আইনত তিনি কখনও তা করতে পারেন না।
• ভাড়া দিয়ে পাকা রসিদ হাতে নিতে ভুলবেন না। বাড়িওয়ালা যাতে তা দিতে বাধ্য থাকেন, সে জন্য চুক্তিতে বিষয়টির উল্লেখ অবশ্যই রাখুন।
• বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ও সেটিকে বাসযোগ্য অবস্থায় রাখার দায়িত্ব কিন্তু বাড়িওয়ালার। শুধু তার কোনও ক্ষতি যাতে না হয়, সেটি নিশ্চিত করার দায়িত্বটুকু আপনার।
• বাড়িওয়ালার সম্মতি ছাড়া সম্পত্তিতে কোনও রকম অদল-বদল কিন্তু কোনও ভাবেই করা চলবে না।
ভাড়া বাড়ানো
• চুক্তি পুনর্নবীকরণের সময়ে বাড়িওয়ালা ভাড়া কতটা বাড়াবেন, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনও আইন নেই। বিষয়টি দু’পক্ষের সমঝোতা, এলাকায় অন্যান্য বাড়ি বা ফ্ল্যাটের ভাড়া ইত্যাদির উপর নির্ভরশীল।
• অনেক জায়গায় অবশ্য আগে থেকেই ঠিক করা থাকে যে, ফি বছর ১০% করে ভাড়া বাড়বে। এই হার অবশ্য ক্ষেত্র বিশেষে আলাদা।
বিরোধ মেটাতে
• বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার বিরোধ মেটানোর জন্য শুরু থেকেই সালিশির রাস্তা (আরবিট্রেশন ক্লজ) খোলা রাখা উচিত। তাতে সমাধান খোঁজার সময় ও খরচ দুই-ই বাঁচে।
• তবে সালিশির মাধ্যমে বিরোধের নিষ্পত্তি না-হলে, আইনের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া উপায় নেই।
• ঘটনা এ রাজ্যে হলে, পশ্চিমবঙ্গ বাড়িভাড়া আইন বা ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রেমিসেস টেনেন্সি অ্যাক্ট অনুযায়ী আাদালতের দ্বারস্থ হতে হবে।
• বাড়িওয়ালা বেআইনি ভাবে ভাড়াটিয়াকে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করলে কিংবা ভাড়াটিয়া বাড়ি জবরদখল করতে চাইলে, আইনি পদক্ষেপ ছাড়া উপায় নেই।
ভাড়া নেওয়ার কারণ
• বাড়ি বসবাসের জন্য ভাড়া নিচ্ছেন না বাণিজ্যিক কাজে, চুক্তিতে তার স্পষ্ট উল্লেখ থাকতে হবে।
• সাধারণত বাণিজ্যিক কাজে নেওয়া হলে, ভাড়ার অঙ্ক তুলনায় বেশি হয়।
• ভাড়া নেওয়া বাড়ি বা ফ্ল্যাটে কোনও রকম বেআইনি কাজকর্ম যে চালানো যাবে না, সেই বিষয়টিও চুক্তিতে স্পষ্ট করে দেওয়া ভাল।
সুতরাং
এই কয়েকটি বিষয়ের সঙ্গে উপরের সারণি দু’টিতেও এক বার চোখ রাখুন। সেখানে আলাদা ভাবে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার মাথায় রাখার মতো কিছু জরুরি তথ্য সাজিয়ে দিয়েছি আমরা। এই ছোট্ট কয়েকটি কথা মাথায় রাখলে, যদি উটকো আইনি ঝামেলা আর রোজকার অশান্তি থেকে ছুটি পাওয়া যায়, তবে ক্ষতি কী?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy