কারখানা বিক্রি করা যেত। অথচ হাতবদল করা যেত না সেখানে ব্যবহৃত কাঁচামালের খনি। নতুন খনন আইনে এ বার সেই গেরো কাটবে বলে আশার আলো দেখছে সিমেন্ট ও ইস্পাত শিল্প। খুশি বিপুল অনুৎপাদক সম্পদের বোঝা ঘাড়ে চেপে থাকা ব্যাঙ্কগুলিও। কারণ, ধুঁকতে থাকা সিমেন্ট বা ইস্পাত কারখানা অন্য সংস্থার হাতে দেওয়া গেলে, ধারের টাকা আদায় কিছুটা অন্তত সহজ হবে বলে মনে করছে তারা।
সংসদে এই বিল শেষমেশ পাশ হওয়াকে স্টেট ব্যাঙ্কের একবগ্গা লড়াইয়ের জয় হিসেবেও দেখছেন অনেকে। তাঁদের মতে, এই জরুরি সংশোধনে অনুঘটকের কাজ করেছে বিষয়টি নিয়ে দেশের বৃহত্তম ব্যাঙ্কের প্রায় তিন মাস লাগাতার লড়ে যাওয়া।
গত ১৬ মার্চ লোকসভায় পাশ হয়েছিল খনন আইনের সংশোধনী। আর রাজ্যসভা তাতে সায় দিয়েছে সোমবার। নতুন আইন তৈরির জন্য এখন শুধু রাষ্ট্রপতির সিলমোহরের অপেক্ষা। এই নতুন আইন কার্যকর হলে, সিমেন্ট ও ইস্পাত কারখানার হাতবদল সহজ হবে। পথ প্রশস্ত হবে দু’টি সিমেন্ট বা ইস্পাত সংস্থা মিশে যাওয়ারও।
কেন? সিমেন্ট, ইস্পাতের মতো শিল্পে সাধারণত কারখানা গড়ে ওঠে তার কাঁচামালের খনির কাছাকাছি। যাতে সেই খনি থেকে তোলা কাঁচামাল (সিমেন্টের ক্ষেত্রে চুনাপাথর, ইস্পাতের জন্য আকরিক লোহা) দিয়ে পণ্য উৎপাদন করা যায়। তাই কারখানা কেনার সময়ে সঙ্গে যদি ওই কাঁচামালের খনিও হাতে পাওয়া না-যায়, তবে তা মস্ত সমস্যার। চালু আইনে সেটিই কাঁটা। কারণ, কোনও কারখানায় ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট খনি সেখানে হাতবদলের জো নেই।
কিন্তু নতুন নিয়মে সেই বেড়ি আর থাকবে না। কারখানা বিক্রির সময় তার নিজস্ব ব্যবহারের জন্য চিহ্নিত (ক্যাপটিভ) খনি থেকে উত্তোলনের স্বত্বও ক্রেতার হাতে দেওয়া যাবে।
যেমন, মূলত পুরনো খনন নীতির জন্যই দেনায় ডুবে থাকা জয়প্রকাশ অ্যাসোসিয়েটসের সিমেন্ট ব্যবসা ১৫,৯০০ কোটি টাকায় কিনতে চেয়েও এগোতে পারেনি আল্ট্রাটেক সিমেন্ট। বিড়লা কর্পকে দু’টি সিমেন্ট কারখানা বেচতে পারেনি লাফার্জ। এই সমস্ত হাতবদলে এ বার পথের কাঁটা দূর হবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। খনন দফতরের সচিব বলবিন্দর কুমারও জানিয়েছেন, মূলত সিমেন্ট সংস্থাগুলির সামনে তাদের কারখানার সঙ্গে চুনাপাথর খনিরও হাতবদলের রাস্তা খুলে দিতে এই উদ্যোগ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এতে সুবিধা হবে ব্যাঙ্কগুলিরও। বিশ্ব জুড়ে দাম তলানিতে ঠেকায় অবস্থা সুবিধার নয় অনেক সিমেন্ট ও ইস্পাত কারখানার। অথচ বিভিন্ন ব্যাঙ্কের কাছে বিপুল ধার তাদের। ব্যবসার হাল খারাপ হওয়ায় তা সময়ে ফেরত দিতে খাবি খাচ্ছে তারা। ফলে অনুৎপাদক সম্পদের অঙ্ক বেড়েছে।
সংশ্লিষ্ট মহলের অনেকের ধারণা, নতুন খনন আইনের দৌলতে আর্থিক ভাবে নড়বড়ে কারখানা যাবে তুলনায় পোক্ত সংস্থার হাতে। অনেক ক্ষেত্রে তা বিক্রি করবে ঋণদাতা ব্যাঙ্ক। সম্ভাবনা তৈরি হবে দুই সংস্থা মিশে যাওয়ারও। সে ক্ষেত্রে ধারের টাকা ফেরত পেতে সুবিধা হবে ব্যাঙ্কগুলির। স্টেট ব্যাঙ্কের কর্ণধার অরুন্ধতী ভট্টাচার্যের মতে, এতে ধার না-মেটানো সংস্থার সম্পদ (কারখানা) বিক্রি সহজ হবে। আইন সংশোধন না হলে, খনি ছাড়া কারখানা বিক্রি করতে যাওয়াই কার্যত অর্থহীন হয়ে দাঁড়াচ্ছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy