Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
সঙ্কটে সিদ্ধান্ত রাজ্যের

ফের দরজা খুলছে কয়লা আমদানির

নবান্ন সূত্রে খবর, প্রচণ্ড গরম-সহ নানা কারণে সম্প্রতি বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে সারা দেশেই। তার উপরে এ রাজ্যে এখন উৎসবের মরসুম। ফলে বিদ্যুতের চাহিদা বেশি। অথচ পুজোর আগেই রাজ্যের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে প্রবল কয়লা সঙ্কট শুরু হয়।

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:০৯
Share: Save:

বছর তিনেক আগে যে-দরজা বন্ধ করা হয়েছিল, হ্যাঁচকা টানে তা ফের খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে রাজ্য। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে কয়লার জোগানে ঘাটতি মেটাতে আবার তা আমদানির পথেই হাঁটবে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম। নবান্নের খবর, পুজোর পরেই আন্তর্জাতিক বাজারে সেই বরাত দেবে তারা। এ জন্য নিগমকে অনুমতিও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

২০১৪-’১৫ সালের মাঝামাঝি কয়লা আমদানি না-করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নিগমের পরিচালন পর্ষদ। যুক্তি ছিল, বেশি দামে কয়লা আমদানি করলে, উৎপাদন খরচ বাড়বে। ফলে মাসুল বাড়বে বিদ্যুতের। কিন্তু তখনই এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে বিদ্যুৎ শিল্পমহলের একাংশ বলেছিল, বেশি দরে কয়লা আমদানি কাজের কথা নয় ঠিকই। কিন্তু শুধু কোল ইন্ডিয়া আর নিজেদের খনির কয়লার উপর ভরসা করে বসে থাকাও ঝুঁকির। সে জন্য আমদানির রাস্তাটুকু খোলা রাখা ভাল। তিন বছর পেরিয়ে কার্যত সেই পথেই পা বাড়াচ্ছে রাজ্য।

নবান্ন সূত্রে খবর, প্রচণ্ড গরম-সহ নানা কারণে সম্প্রতি বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে সারা দেশেই। তার উপরে এ রাজ্যে এখন উৎসবের মরসুম। ফলে বিদ্যুতের চাহিদা বেশি। অথচ পুজোর আগেই রাজ্যের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে প্রবল কয়লা সঙ্কট শুরু হয়। বিশেষত নানা কারণে নিগমের নিজস্ব খনিগুলি থেকে কয়লা পাওয়া না-যাওয়ায় বক্রেশ্বর, সাগরদিঘি, সাঁওতালডিহি, কোলাঘাটের মতো কেন্দ্রগুলিতে তার মজুত তলানিতে ঠেকে। যেখানে গড়ে অন্তত ছ’সাত দিনের কয়লা মজুত থাকার কথা, সেখানে তা দাঁড়ায় তিন-চার দিনে।

এর জেরে পুজোয় বিদ্যুতের বর্ধিত চাহিদা মেটাতে নিগম-কর্তারা বাড়তি কয়লার ব্যবস্থা করে ফেললেও, দীর্ঘ মেয়াদি ব্যবস্থা হিসেবে খুলে দেওয়া হচ্ছে আমদানির পথ। অন্তত কর্তাদের সে রকমই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তা ছাড়া, নবান্নের খবর, এই মুহূর্তে বিশ্ব বাজারে আগের তুলনায় অনেকটা নেমে এসেছে কয়লার দাম। চিন, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো নানা দেশ কয়লা কেনা কমানোয় দু’বছরে তা আরও নামার সম্ভাবনা। ফলে বিশ্ব বাজার থেকে কয়লা আমদানি করলে, জোগান ঠিক থাকার পাশাপাশি খরচও মাত্রাছাড়া হবে না বলে রাজ্যের আশা। আর সেই কারণেই প্রয়োজন মতো কয়লা আমদানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত। সূত্রের খবর, পুজোর পরেই প্রায় ২ লক্ষ টন কয়লা আমদানি করবে নিগম।

উল্লেখ্য, কোলাঘাট, ব্যান্ডেল, বক্রেশ্বর, সাঁওতালডিহি ও সাগরদিঘি — রাজ্যের এই পাঁচ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে দিনে গড়ে ৩,০০০ মেগাওয়াটের বেশি উৎপাদন করতে পারে নিগম। সে জন্য বছরে গড়ে কয়লা লাগে ২ কোটি টনের মতো। এর মধ্যে কোল ইন্ডিয়া দেয় ১ কোটি ৬০ লক্ষ টন। ২০ লক্ষ টনের মতো আসত নিগমের নিজস্ব খনিগুলি থেকে। বাকিটা মেটানো হত জরুরি ভিত্তিতে। এখন নিগমের নিজস্ব খনি থেকে কয়লা পাওয়া কার্যত বন্ধ। অথচ চাহিদা বেড়েছে বিদ্যুতের। তাই সঙ্কট মেটাতে ফের ভরসা আমদানিই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE