Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
পরিবারে অন্তত দু’টি অ্যাকাউন্ট, মহিলা সদস্যের নামে একটি

সকলের জন্য ব্যাঙ্ক পরিষেবা প্রকল্পের সূচনা ১৫ অগস্ট

প্রতিটি পরিবারে অন্তত দু’জনের নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। তার মধ্যে একটি অ্যাকাউন্ট অবশ্যই বাড়ির মহিলা সদস্যের নামে। দেশের প্রতিটি বাড়িতে ব্যাঙ্ক পরিষেবা পৌঁছে দিতে এই ‘মিশন’ নিয়ে মাঠে নামছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। ঢাকে কাঠি পড়ছে আগামী ১৫ অগস্ট। স্বাধীনতা দিবসে লাল কেল্লায় প্রথম বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাতীয় পতাকা তুলবেন মোদী। সে দিনই ঘোষণার পরে এই কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক সূচনা হবে।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৪ ০২:৪০
Share: Save:

প্রতিটি পরিবারে অন্তত দু’জনের নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। তার মধ্যে একটি অ্যাকাউন্ট অবশ্যই বাড়ির মহিলা সদস্যের নামে।

দেশের প্রতিটি বাড়িতে ব্যাঙ্ক পরিষেবা পৌঁছে দিতে এই ‘মিশন’ নিয়ে মাঠে নামছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। ঢাকে কাঠি পড়ছে আগামী ১৫ অগস্ট। স্বাধীনতা দিবসে লাল কেল্লায় প্রথম বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাতীয় পতাকা তুলবেন মোদী। সে দিনই ঘোষণার পরে এই কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক সূচনা হবে।

২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, দেশের ২৪.৫ কোটি পরিবারের মধ্যে ১৪.৫ কোটি ব্যাঙ্ক পরিষেবার আওতায় আসেন। যার অর্থ বাকি ১০ কোটি পরিবারের সঙ্গে ব্যাঙ্কের কোনও সম্পর্কও নেই। এই সব পরিবারের কারওরই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। মোদী সরকারের সিদ্ধান্ত, প্রাথমিক ভাবে এই ১০ কোটি পরিবারে ব্যাঙ্ক পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া। সেই হিসেবে অন্তত ২০ কোটি নতুন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামছে কেন্দ্র। বাজেটেই এর ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তিনি বলেন, “এটা শুধুই সকলকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলিয়ে দেওয়ার কর্মসূচি নয়। এর ফলে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার মধ্যে আসবে। যা পরবর্তী কালে পরিকাঠামো তৈরির কাজে ব্যবহৃত হবে। তাতে অর্থনীতিরও লাভ।”

প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, এই মিশনের নাম হবে ‘সম্পূর্ণ আর্থিক সমাবেশন’। পুরোদমে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে অর্থ মন্ত্রকে। অ্যাকাউন্টের সঙ্গে থাকবে ডেবিট কার্ড, এক লক্ষ টাকার দুর্ঘটনা বিমা। অ্যাকাউন্ট থেকে স্বল্প মেয়াদে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ধার নেওয়া যাবে। ওই অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার কার্ডের সংখ্যাও যুক্ত করা হবে। আগামী দিনে রান্নার গ্যাস বা অন্য জ্বালানির জন্য নগদ ভর্তুকি, একশো দিনের কাজের ভাতা ব্যাঙ্কের মাধ্যমে দেওয়া হলে তা ওই অ্যাকাউন্টেই সরাসরি পৌঁছে যাবে। সরকারি সূত্রের দাবি, প্রকল্পটি রূপায়িত হলে এক দিকে সকলের জন্য থাকবে অ্যাকাউন্ট, লাভ হবে অর্থনীতির, আবার ব্যাঙ্কে টাকা রাখলে সাধারণ মানুষের বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার ফাঁদে পা দেওয়ার সম্ভাবনাও কমবে।

কাজটা যে খুব একটা সহজ নয়, অর্থ মন্ত্রকের কর্তারাও তা মানছেন। কারণ এক বছরের মধ্যে প্রায় ১৫ কোটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা, ডেবিট কার্ড তৈরি, সকলের তথ্য নথিভুক্ত করা, তাঁদের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য চাই উন্নত প্রযুক্তি ও পরিকাঠামো। অর্থ মন্ত্রক এ জন্য শিল্প মহলের সাহায্য চাইছে। শিল্প সংস্থাগুলির কাছে কী ধরনের প্রযুক্তি রয়েছে, তা দেখার জন্য ১১ অগস্ট দিল্লিতে সম্মেলন ডাকা হয়েছে। মুম্বইয়ে গিয়ে ব্যাঙ্কগুলির সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক সেরে এসেছেন আর্থিক পরিষেবা সচিব জি এস সাঁধু।

আর একটি চ্যালেঞ্জ হল, দেশের প্রত্যন্ত কোণেও ব্যাঙ্কের পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া। মোদী-জেটলির পরিকল্পনা, আদিবাসী, পার্বত্য, মরুভূমি বা জঙ্গলে ঘেরা এলাকা বাদ দিয়ে যে-কোনও জনবসতির ৫ কিমির মধ্যে কোনও একটি ব্যাঙ্কের শাখা খোলা। এ জন্যই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নতুন ব্যাঙ্ক তৈরির লাইসেন্স দিচ্ছে। মোবাইল বা সুপারমার্কেট সংস্থাগুলিকেও ছোট মাপের ব্যাঙ্ক বা লেনদেন ব্যাঙ্ক তৈরির আহ্বান জানানো হচ্ছে। কিন্তু ব্যাঙ্ক শাখা খুললেই যে গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দারা সেখানে আসবেন, তা নয়। এ জন্য ব্যাঙ্ককেই তাঁদের কাছে পৌঁছতে হবে। ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি বা ‘ব্যাঙ্ক মিত্র’-রাই সে ক্ষেত্রে গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে দেবেন। তাঁরাই ঋণ নেওয়া ও তা শোধ করার পথ বাতলাবেন, পেনশন, বিমার ব্যবস্থা করবেন। এ জন্য ৬০ হাজার ‘ব্যাঙ্ক মিত্র’ নিয়োগ করা হবে।

মনমোহন সরকারের আমলেও সকলের জন্য ব্যাঙ্ক পরিষেবা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু লক্ষ্য ছিল, সব গ্রামে ব্যাঙ্কের শাখা খুলে দেওয়া। মোদী সব পরিবারে পৌঁছতে চাইছেন। শুধু গ্রাম নয়, শহরেও নজর দিচ্ছেন তিনি। তা ছাড়া মিশন ভিত্তিক কর্মসূচি এর আগে নেওয়া হয়নি। অন্যান্য সামাজিক প্রকল্পের সঙ্গে মিশন ভিত্তিক কর্মসূচিগুলির পার্থক্য হল, এর লক্ষ্যপূরণের জন্য নির্দিষ্ট সময় বাঁধা থাকে। সব পরিবারের জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার কাজটি যেমন চলতি অর্থবর্ষেই (২০১৪-’১৫) সেরে ফেলতে চাইছে মোদী সরকার। অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি কাজের অগ্রগতি দেখাশোনা করবে। ওই কমিটিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর, আর্থিক পরিষেবা সচিব, ব্যাঙ্ক সংগঠনের কর্তা, পেনশন তহবিল ও বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যানরা থাকবেন। এর পরে দ্বিতীয় দফায় ২০১৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সকলের জন্য ন্যূনতম পেনশন, ঋণের মতো সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে।

স্বাধীনতা দিবসে লাল কেল্লা থেকে তিনি যাতে জোরগলায় সরকারের সাফল্যের কথা বলতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে বাজেটে ঘোষিত সমস্ত প্রকল্প রূপায়ণ শুরুর জন্যই মন্ত্রীদের নির্দেশ দিয়েছেন মোদী। ১০ অগস্টের মধ্যে সব মন্ত্রককে এ বিষয়ে রিপোর্ট দিতে বলেছেন ক্যাবিনেট সচিব অজিত শেঠ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

premangshu chowdhury banking facility for all
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE