সুযোগ বুঝে ফের মাথা তুলছে পুরনো অভ্যাস।
বাজারে নগদের জোগান বাড়তেই মানুষ আবার ডিজিটাল থেকে নগদমুখী। অথচ, ডিজিটাল লেনদেনে উৎসাহ দিতে লটারি করে কোটি কোটি টাকার পুরস্কারও বিলি করছে মোদী সরকার। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কী হয়েছে, পরিসংখ্যান দেখে তা নিয়ে সন্দিহান অর্থ মন্ত্রকের একাংশই।
দেশের বিভিন্ন অংশ থেকে অর্থ মন্ত্রকে আসা রিপোর্ট বলছে, ৮ নভেম্বর পুরনো ৫০০, ১০০০ টাকার নোট নাকচের পরে বাজারে নগদের টানাটানিতে বাধ্য হয়েই ডেবিট কার্ড, পেটিএম-ভীমের মতো অ্যাপের মাধ্যমে কেনাকাটা করছিলেন মানুষ। নগদের জোগান স্বাভাবিক হতে নগদ লেনদেনও বাড়তে শুরু করেছে। পরিস্থিতি যা, তাতে ফের নগদে লেনদেন আগের জায়গায় পৌঁছে যাওয়ার আশঙ্কা করছে সরকার। এটা যে চ্যালেঞ্জ, মানছেন নীতি আয়োগ-এর সিইও অমিতাভ কান্ত-ও। তিনি বলেন, ‘‘মানুষ নগদ ব্যবহারে ফের অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন। এই অভ্যাস বদলানো কঠিন। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত নগদ লেনদেন যে ধীরগতিতে বাড়ছিল, তা ধরে রাখাটাই চ্যালেঞ্জ।’’
মোদীর নোট নাকচ করার অন্যতম ঘোষিত উদ্দেশ্য ছিল, কম নগদের অর্থনীতি গড়ে তোলা বা ডিজিটাল লেনদেন বাড়ানো। কালো টাকা, জাল নোট বা সন্ত্রাসে আর্থিক মদত বন্ধ করার মতো উদ্দেশ্য কতখানি সফল, তা নিয়ে আগেই প্রশ্ন উঠেছে। বাকি ছিল ডিজিটাল লেনদেন বাড়ানোর লক্ষ্য। এতে উৎসাহ দিতে লটারির মাধ্যমে পুরস্কার দেওয়ার জন্য ৩৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে সরকার। এ পর্যন্ত হিসেব, ৯.৮ লক্ষ মানুষ ডিজিটাল লেনদেন করে পুরস্কার জিতেছেন। ১৫৩.৫ কোটি টাকার পুরস্কার বিলি হয়েছে। কিন্তু ফল কী মিলেছে?
দেশ জুড়ে শপিং মল, বড় মাপের পণ্য বিপণি, সংগঠিত খুচরো ব্যবসা থেকে অর্থ মন্ত্রকের কাছে আসা রিপোর্ট বলছে, নোট নাকচের পরে নভেম্বর-ডিসেম্বরে মাত্র ৫ থেকে ১০% লেনদেন নগদে হচ্ছিল। কিন্তু জানুয়ারিতে নগদের জোগান ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ায় তা ফের ২০ থেকে ৩০ শতাংশে পৌঁছেছে। ৮ নভেম্বরের আগে এইসব ক্ষেত্রে গড়ে ৪০ থেকে ৫০% লেনদেন নগদে হত। এ সপ্তাহের সোমবার থেকেই ব্যাঙ্কের সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে সপ্তাহে ৫০ হাজার টাকা তোলার ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, ১৩ মার্চের পর ব্যাঙ্ক-এটিএম থেকে টাকা তোলায় আর কোনও ঊর্ধ্বসীমা থাকবে না। তারপর নগদে লেনদেন ফের আগের জায়গাতেই পৌঁছে যেতে পারে।
নীতি আয়োগের তথ্য বলছে, নভেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে সাধারণ মোবাইলে ব্যাঙ্ক লেনদেন ৪৫ গুণ বেড়েছে। আধার নির্ভর লেনদেন বেড়েছে ৫৩%। ১ কোটি ৭০ লক্ষ ভীম অ্যাপ ডাউনলোড হয়েছে। কার্ডে দাম মেটানোর জন্য পিওএস যন্ত্রের সংখ্যা ৮-৯ লক্ষ থেকে বেড়ে হয়েছে ২৮ লক্ষ। সরকারও বুঝতে পারছে, এর মধ্যে আশ্চর্যের কিছু নেই। নগদ ছিল না বলেই মানুষ অন্য পথ ধরতে বাধ্য হয়েছেন। অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘শপিং মল বা বড় মাপের পণ্য বিপণির ক্ষেত্রেই আমরা দেখছি, মানুষ ফের নগদ লেনদেনে ফিরে যাচ্ছেন। তা হলে ধরে নেওয়া যায়, স্থানীয় বাজার-হাটে বা মুদির দোকানে, যেখানে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তের ভিড় বেশি, সেখানে আরও দ্রুত হারে মানুষ নগদ লেনদেনে ফিরে যাচ্ছেন।’’
তা হলে উপায় কী? অমিতাভ বলেন, ‘‘মানুষ যাতে ডিজিটাল লেনদেন থেকে না-সরেন, তার জন্য সরকার আরও কিছু ব্যবস্থা নেবে।’’ উদাহরণ, টাকা লেনদেনের জন্য সরকারের তৈরি ভীম অ্যাপ ডাউনলোড করার লিঙ্ক কাউকে পাঠালে, তিনিও যদি ডাউনলোড করেন, তা হলে প্রথম জন নগদ পুরস্কার পাবেন। কার্ডে লেনদেনের জন্য বাড়তি যে খরচ মেটাতে হয়, সেই ‘মার্চেন্ট ডিসকাউন্ট রেট’-ও কমানোর উপায় খোঁজা হচ্ছে। লক্ষ্য, ডিজিটাল লেনদেনের খরচ কমিয়ে নগদ লেনদেনের জায়গায় নিয়ে আসা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy