নরেন্দ্র মোদী এবং উর্জিত পটেল
সারা দেশ যখন নিয়ে তাকিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক পর্ষদের সোমবারের বৈঠকের দিকে, ঠিক তখনই সামনে এল ঋণখেলাপি নিয়ে কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার নির্দেশ। যেখানে তারা রীতিমতো ভর্ৎসনা করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে। এবং ফের প্রকাশ করতে বলেছে ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের নাম ও প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজনের পাঠানো বড় অঙ্কের ঋণ খেলাপিদের তালিকা সম্বলিত চিঠি।
তথ্য কমিশনের এ বারের ফরমান প্রায় ৬৬ পাতার। যেখানে তাদের নির্দেশ মেনে রাজনের চিঠি প্রকাশ না করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে তুলোধোনা করেছে তারা। তথ্য কমিশনার শ্রীধর আচার্যলু বলেছেন, ‘‘যদি কোনও ব্যতিক্রমের ভিত্তিতে ওই চিঠি প্রকাশে দফতরের আপত্তি থাকে, তবে সে কথা জানিয়ে আবেদন করা উচিত ছিল। যুক্তি দেওয়া উচিত ছিল নির্দেশ প্রত্যাখ্যানের পক্ষে।’’
ক্ষুব্ধ আচার্যলুর তোপ, ‘‘দফতর যে কারণ দেখিয়ে নির্দেশ মানেনি তা আইনি তো নয়ই। বরং দুর্ভাগ্যজনক।’’
তথ্য কমিশনারের মতে, কারা ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণের টাকা ফেরাননি ও সেই তহবিল উদ্ধারের জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, ভারতের নাগরিকদের তা জানানো প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ‘নৈতিক, সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক দায়িত্ব’। কারণ তা আদতে আয়করদাতাদেরই অর্থ। যে কারণে দফতরের অবস্থান সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষা করে না। আচার্যলু খেলাপিদের নাম ও রাজনের চিঠির বিষয়টি প্রকাশ্যে না আনার সিদ্ধান্তকে তকমা দিয়েছেন তথ্যের অধিকার আইন ও সংসদের সার্বিক উদ্দেশ্যের বিরোধী, গণতন্ত্রের প্রতি আক্রমণ ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সম্পর্কে অশ্রদ্ধা হিসেবে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে একহাত নিয়ে তাঁর কটাক্ষ, শীর্ষ ব্যাঙ্কের অন্দরে আইনি বিষয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ লোকের অভাব নেই। তা সত্ত্বেও স্বেচ্ছায় ঋণ খেলাপিদের নাম প্রকাশের ক্ষেত্রে সরাসরি তথ্যের অধিকার আইন, তথ্য কমিশনারের নির্দেশ, সর্বোপরি শীর্ষ আদালতের অবমাননা হয় কী করে!
কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনের দাবি, বিভিন্ন শ্রেণির তথ্যকেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তাদের তথ্য গোপনীয়তার নীতির অঙ্গ হিসেবে ‘প্রকাশযোগ্য নয়’ ঘোষণা করে। এবং তথ্যের অধিকার আইনকে এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী হিসেবে তুলে ধরে। আচার্যলুর তোপ, ‘‘অথচ খেলাপিদের নাম প্রকাশের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট তথ্যের অধিকার আইনকে আরবিআই আইন ও অন্যান্য আইনের থেকে প্রাধান্য দেওয়ার নির্দেশ দিলেও, আরবিআই তথ্য দিতে চায়নি। নিজেদের আইনের যুক্তি দেখিয়েই।’’
আচার্যলুর অভিমত, এ ভাবে আসলে তথ্যের অধিকার আইন ও সুপ্রিম কোর্টকে উপেক্ষা করেছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। যা আর্থিক প্রতারণা ও ধনীদের আর্থিক নয়ছয় করার পরে দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দেওয়াকে প্রশ্রয় দেবে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কেন স্বেচ্ছায় ঋণ খেলাপিদের নাম জানায়নি, আগের বার গভর্নর উর্জিত পটেলের কাছে তা জানতে চেয়েছিল কমিশন। শীর্ষ ব্যাঙ্কের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও অর্থ মন্ত্রকের কাছেও জানতে চেয়েছিল, রাজনের পাঠানো তালিকা কেন সামনে আনা সম্ভব হল না?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy