২০১৫ ভাল গেল না লগ্নিকারীদের। শেয়ার বাজারে অনিশ্চয়তা চলছে চলতি আর্থিক বছরের গোড়া থেকেই। মাঝেমধ্যে ভাল খবরে ভর করে খানিকটা উঠলেও বাজার তা ধরে রাখতে পারছে না। এই অস্থিরতার প্রভাব পড়ছে মিউচুয়াল ফান্ডেও। গত দেড় বছরে যাঁরা এসআইপি পদ্ধতিতে লগ্নি করেছেন, তাঁদের অনেকে এখনও লাভের মুখ দেখেননি। যাঁরা স্থির আয়ের উপর নির্ভর করেন, সুদ কমায় লোকসান গুনছেন তাঁরাও। সুদ কমলে সাধারণত বন্ডের দাম বাড়ে। না, এ বার তা-ও তেমন হয়নি। কোনও ভাবেই লগ্নিকারীদের জন্য ‘অচ্ছে দিন’-এর দেখা মেলেনি।
আগামী দিন সম্পর্কেও তেমন কোনও আশার বাণী শোনানো যাচ্ছে না। সরকারি হিসেবে মূল্যবৃদ্ধির হার কমতে থাকলে আরও নামতে পারে সুদের হার। সুদ কমলে শিল্প চাঙ্গা হবেই এমন কথা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। তবে এ কথা অবশ্যই বলা যায়, জমায় সুদ কমলে সুদ-নির্ভর মানুষের আর্থিক অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাবে। পণ্য-পরিষেবা কর বিল পাশ না-হওয়া এবং একনাগাড়ে রফতানিতে পতন অর্থনীতিকে স্বস্তি দেবে না। অদূর ভবিষ্যতে মার্কিন মুলুকে সুদ যদি আরও এক দফা বাড়ে, তবে পালে যতটুকু হাওয়া আছে, তাও কেড়ে নিতে পারে। পরিস্থিতি খারাপ দেখে উন্নতির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়েছে খোদ ভারত সরকার। এই অবস্থায় লগ্নির দিশা পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। পরিস্থিতি কবে শোধরাবে তা বলা যাচ্ছে না। তবে বসে না-থেকে এই বাজারেই সুযোগ মতো লগ্নি করতে হবে। সক্রিয় থেকে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারলে মন্দ বাজারেও ফায়দা তোলা সম্ভব। ঝুঁকে পড়া বাজারই কিন্তু সুযোগ করে দেয় সস্তায় ভাল শেয়ার কেনার। এক নজরে দেখব কী ভাবে এই অনিশ্চিত বাজারেও লাভের মুখ দেখা যায়।
১) ২০১৫ সালে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মোট সুদ কমিয়েছে ১২৫ বেসিস পয়েন্ট। ফলে ব্যাঙ্ক-জমার উপর সুদ নেমে এসেছে অনেকটাই নীচে। আগামী দিনে সম্ভাবনা রয়েছে তা আরও কমার। ডাকঘর ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে কিন্তু সুদ এখনও কমানো হয়নি। ব্যাঙ্ক-সুদ ৭.৫ শতাংশে নেমে এলেও ডাকঘরে কিন্তু এখনও তা ৮.৫% থেকে ৯.৩% পর্যন্ত। যাঁদের স্থির আয় প্রয়োজন, তাঁরা এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারেন।
২) বাজারে এখন চলছে করমুক্ত বন্ড ইস্যু। খুচরো লগ্নিকারীদের সর্বোচ্চ সুদ দেওয়া হচ্ছে করমুক্ত ৭.৬০%। যাঁরা ২০ এবং ৩০% করের আওতায় পড়েন, তাঁদের কাছে এই সুদ যথাক্রমে করযুক্ত ৯.৫৭% এবং ১১ শতাংশের সমান। প্রতিশ্রুতি, এই সুদ পাওয়া যাবে ১৫ বছর ধরে। বাজারে সুদ আরও নামলেও। উঁচু হারে করদাতাদের কাছে আকর্ষণীয়।
৩) ব্যাঙ্কের মেয়াদি জমা করযোগ্য। অর্থাৎ সর্বোচ্চ ক্ষেত্রে ৩০% কর বাদ দেওয়ার পরে প্রকৃত আয় দাঁড়ায় ৫.১৮%। অন্য দিকে মিউচুয়াল ফান্ডের ঋণপত্র-নির্ভর প্রকল্পে (ডেট ফান্ড) ৭.৫ থেকে ৮% আয় সম্ভব এবং এখানে লগ্নি ৩ বছর ধরে রাখলে কর দিতে হয় নামমাত্র। ডিভিডেন্ড নিলে তার উপর কোনও কর লাগে না।
৪) ছোট মেয়াদে সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সুদের থেকে বেশি আয় করা যায় মিউচুয়াল ফান্ডের শর্ট টার্ম ফান্ডে টাকা রেখে।
৫) গত ১৫ মাসে তেমন লাভের দেখা না-মিললেও এসআইপি পদ্ধতিতে লগ্নি করলে ৩ থেকে ৫ বছর মেয়াদে ভালই লাভের সন্ধান পাওয়া যায়।
৬) যাঁরা লগ্নির বাজারে সক্রিয়, তাঁরা তহবিল নিয়ে অপেক্ষা করুন এবং বাজারের প্রতিটি মাঝারি থেকে বড় পতনে পছন্দের মিউচুয়াল ফান্ড প্রকল্পে লগ্নি করুন। এই ভাবে প্রতিটি পতনে ‘টপ আপ’ করে গেলে এসআইপি-র থেকেও ভাল ফল পাওয়া সম্ভব।
৭) নিয়মিত ওঠা-নামা চলছে শেয়ার বাজারে। দেশের পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতি অস্থির থাকায় এই পরিস্থিতি চলবে আগামী দিনেও। হাতে আগে কেনা শেয়ার থাকলে একটু উঁচু বাজারে সেটি বেচে একই শেয়ার ফের তুলে নেওয়া যায় বাজারের পরের পতনে। এই ভাবে বারবার লাভ ঘরে তোলা যায় বাজারে সক্রিয় থেকে।
৮) বাজারের প্রতিটি বড় পতনে একটু করে ভাল শেয়ার কিনুন। এই পথে গড়ে তুলুন ব্লু-চিপ ভাণ্ডার। দীর্ঘ মেয়াদে তা ভাল লাভ দিতে পারে। গড়ে তুলতে পারে বড় আকারের সম্পদ।
৯) সোনা আরও নামলে এখানেও কিছু টাকা লগ্নি করতে পারেন। বিশেষ করে ভবিষ্যতে যাঁদের প্রকৃত সোনার প্রয়োজন।
১০) যাঁদের কর সাশ্রয়ের জন্য লগ্নি করতে হবে, তাঁরা আগামী তিন মাসে বাজারের প্রত্যেকটি পতনে ইএলএসএস প্রকল্পে পুঁজি ঢালতে পারেন।
১১) নতুন ইস্যুর বাজার অনেক দিন পরে ভাল লাভের সন্ধান দিচ্ছে। কিছু টাকা লাগানো যেতে পারে ভাল মানের নতুন ইস্যুতেও।
অতএব দেখা যাচ্ছে, সক্রিয় থাকলে ঝুঁকে পড়া বাজারেও লাভের খোঁজ পাওয়া যেতে পারে। এই কথা মাথায় রেখে নতুন বছরের গোড়া থেকেই লগ্নি করতে হবে। তহবিলকে অলস ভাবে বসিয়ে রাখা চলবে না। এ বছরের শেষ ক’দিনের মধ্যে আর একটি কাজ করতে হবে। ফান্ডগুলি কেওয়াইসি সংক্রান্ত নতুন কিছু তথ্য চাইছে, যা অনলাইনে দাখিল সম্ভব। দাখিল না-করলে পরে সমস্যা হতে পারে। নতুন বছরে দেশের অর্থনীতি এবং বাজারের উন্নতি হবে, এই আশা রেখে এবং সব লগ্নিকারীকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে এ বছরের শেষ প্রতিবেদনে ছেদ টানছি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy