মাত্র দু’সপ্তাহের ব্যবধানে দু’টো নববর্ষ। প্রথমটি আর্থিক নববর্ষ। দ্বিতীয়টি বাংলার নতুন বছর। নতুন জামা-জুতো, ভাল-মন্দ খাওয়া ছাড়াও নতুন বছরে আমরা নতুন শপথও নিই। শেষ করি আগের বছরের অসমাপ্ত কাজ। নতুন বছরের জন্য যে-সব পরিকল্পনা গোড়াতেই ছকে নিতে চাই, আর্থিক পরিকল্পনা তাদের মধ্যে অন্যতম। জীবন অনেক সহজ হতে পারে যদি বছরের শুরুতেই আর্থিক পরিকল্পনা ছকে নিয়ে গোটা বছর ধরে তা মেনে চলা যায়।
একই রকম পরিকল্পনা সকলের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে না। বয়স, আয়ের মাত্রা, পারিবারিক দায়িত্ব, ঝুঁকি নেওয়ার সামর্থ্য ইত্যাদি অনুযায়ী পরিকল্পনা আলাদা হবে। তা ছকতে হবে সন্তানের শিক্ষা, বয়স্কদের চিকিৎসা, বাড়ি ও গাড়ি কেনার ইচ্ছে, মাঝেমধ্যে বেড়ানো, কর বাবদ দায় ও কর সাশ্রয়ের সুযোগ নেওয়া, স্বাস্থ্য ও জীবনবিমা ইত্যাদির কথা মাথায় রেখে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, পরিকল্পনা ছকার সময়ে কোন কোন বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
১) মাসিক আয়-ব্যয়ের বাজেট তৈরি করুন। দেখে নিন, সব খরচের পর কত উদ্বৃত্ত থাকছে। উদ্বৃত্ত অনুযায়ী ছকতে হবে বিনিয়োগ এবং কর পরিকল্পনা।
২) বাড়ি, গাড়ির মোটা ঋণ নিয়ে থাকলে, দেখে নিন পর্যাপ্ত অঙ্কের জীবনবিমা করা আছে কি না। না-থাকলে নতুন পলিসি নেওয়ার কথা ভাবতে পারেন। এতে ঋণগ্রহীতার কিছু হলে ঋণের দায় পরিবারের উপর চাপে না।
৩) চিকিৎসা খাতে খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না। দেখে নিন পরিবারের সবার জন্য পর্যাপ্ত অঙ্কের চিকিৎসা বিমা করা আছে কি না। না-থাকলে করে নিন।
৪) এখনও পিপিএফ অ্যাকাউন্ট না- থাকলে, দ্রুত খুলে ফেলুন। ৮০সি ধারায় কর সাশ্রয়ের প্রয়োজন না-থাকলেও এই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। পিপিএফ অ্যাকাউন্টের সুদ পুরো করমুক্ত। সুদ ৮.৭%, যা কোনও কোনও ব্যাঙ্কের থেকেও বেশি। স্বনিযুক্ত অসংখ্য মানুষের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে টাকা জমানোর একটি অত্যন্ত সুরক্ষিত জায়গা। যাঁদের প্রভিডেন্ড ফান্ডের সুবিধা আছে, তাঁরাও যোগ দিতে পারেন পিপিএফ প্রকল্পে।
৫) এক বছর বিরতির পরে আবার বাজারে আসছে করমুক্ত বন্ড। বাজেট প্রস্তাবের ভিত্তিতে এই বন্ড ইস্যুর অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্র। আশা, সুদের হার ভালই হবে। উঁচু হারে করদাতাদের জন্য অতি আদর্শ লগ্নির জায়গা। যাঁরা সম্প্রতি অবসর নিয়েছেন বা নেবেন, তাঁরা পরিকল্পনায় এই বন্ডকে রাখতে পারেন।
৬) যাঁরা ৮০সি ধারায় ১.৫ লক্ষ টাকা লগ্নির পরে কর বাঁচাতে আরও সঞ্চয় করতে পারবেন, তাঁরা ন্যাশনাল পেনশন স্কিম প্রকল্পে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত রাখতে পারেন। বাজেটে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে। স্বনিযুক্ত মানুষ ও কর্মক্ষেত্রে যাঁদের পেনশনের ব্যবস্থা নেই, তাঁদের জন্য এটি ভাল। কর্মজীবনের শুরু থেকে ৫৫ বছর বয়স্ক মানুষ দীর্ঘ মেয়াদে এই প্রকল্পে অল্প অল্প করে জমিয়ে জীবনের শেষ অধ্যায়ে ন্যূনতম পেনশনের ব্যবস্থা করতে পারেন। ন্যূনতম জমা বছরে মাত্র ৬০০০ টাকা।
৭) ঝুঁকি থেকে যাঁরা চিরকাল দূরে থেকেছেন, টাকা রেখেছেন শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে, তাঁরা হয়তো জানেন না, সুরক্ষার দিকটা দেখতে গিয়ে আদতে কত টাকা লোকসান করেছেন। মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে ঝুঁকি অনেকটা বাগে রেখে শেয়ার বাজারে লগ্নি করে বড় ফসল ঘরে তোলা যায়। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, দীর্ঘ মেয়াদে লাভই হয়। যেমন ১৯৯৪ সালে অর্থাৎ কমবেশি ২০/২১ বছর আগে সেনসেক্সের অবস্থান ছিল ৪,০০০ অঙ্কের আশেপাশে। ২০ বছরে এই সূচক বেড়ে হয়েছে ৭ গুণ অর্থাৎ ২৮,০০০ অঙ্ক। একই সময়ে ব্যাঙ্কে ৪,০০০ টাকা রাখলে এই মেয়াদে বেড়ে হত বড়জোর ২০,০০০। এই বাড়তি টাকা আবার করযোগ্য। দীর্ঘ মেয়াদে শেয়ার বাজারে লগ্নি সূচকের বৃদ্ধির তুলনায় অনেক বেশিও হতে পারে। যেমন ১৯৯৪ সালে ১০ টাকা মূল্যে ইস্যু করা বিশেষ একটি মিউচুয়াল প্রকল্পের বর্তমান নিট অ্যাসেট ভ্যালু ৮৪০ টাকা। অর্থাৎ ২১ বছরে বেড়েছে ৮৪ গুণ। সুতরাং ’৯৪ সালে যাঁরা মাত্র ৪,০০০ টাকা লগ্নি করেছেন, তার বর্তমান মূল্য ৩.৩৬ লক্ষ টাকা।
এ রকম রিটার্ন শেয়ারেই পাওয়া সম্ভব। যে-কারণে খুব অল্প টাকার উপর অঙ্ক কষার ঝুঁকি নেওয়া যায়। দীর্ঘ মেয়াদে এসআইপি পদ্ধতিতে মাসে ৫০০/১০০০ টাকা লগ্নি করতে পারেন। মনে করা হচ্ছে, ভারতের অর্থনীতি আরও অনেক এগোবে। সে ক্ষেত্রে ভাল প্রকল্পে এসআইপি করে ফায়দা হওয়া উচিত। এই কথা মাথায় রেখেই প্রভিডেন্ড ফান্ডের ৫% টাকা শেয়ার বাজারে লগ্নির কথা ভাবা হচ্ছে। পরিচালনায় ত্রুটি না-থাকলে ভাল লাভ হওয়ার কথা। অর্থাৎ যাঁরা শেয়ার বাজার ও মিউচুয়াল ফান্ডের পথ মাড়াননি, তাঁরা বছরের গোড়াতেই এসআইপি শুরুর কথা ভাবতে পারেন। ইএলএসএস প্রকল্পে লগ্নি করে এ পথে করও বাঁচানো যায়। সামান্য টাকায় ঝুঁকি নিলে আকাশ ভেঙে পড়বে না। বরং বড় লাভের সম্ভাবনা।
৮) ৮০সি এবং ৮০সিসিডি ধারায় ১.৫ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লগ্নি করে কর বাঁচাতে চাইলে, বছরের গোড়া থেকেই পরিকল্পনা মাফিক লগ্নি করে গেলে পরে চাপ আসবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy