Advertisement
০৩ মে ২০২৪

পড়তি বাজারে শেয়ার কেনার হিড়িকে হঠাৎ চাঙ্গা সূচক

আচমকাই তেজী হয়ে উঠল শেয়ার বাজার। সোমবার সপ্তাহের প্রথম লেনদেনের দিনেই সেনসেক্স এক লাফে বেড়ে গিয়েছে ৫৬৮ পয়েন্ট। বাজার বন্ধের সময়ে সূচক থিতু হয় ২৩,৫৫৪.১২ অঙ্কে। ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক নিফ্‌টিও ১৮২ পয়েন্ট বেড়ে ছুঁয়েছে ৭১৬২.৯৫ পয়েন্ট।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:০০
Share: Save:

আচমকাই তেজী হয়ে উঠল শেয়ার বাজার। সোমবার সপ্তাহের প্রথম লেনদেনের দিনেই সেনসেক্স এক লাফে বেড়ে গিয়েছে ৫৬৮ পয়েন্ট। বাজার বন্ধের সময়ে সূচক থিতু হয় ২৩,৫৫৪.১২ অঙ্কে। ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক নিফ্‌টিও ১৮২ পয়েন্ট বেড়ে ছুঁয়েছে ৭১৬২.৯৫ পয়েন্ট।

পাশাপাশি এ দিন বেড়েছে টাকাও। ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম বেড়েছে ১৬ পয়সা, যার ফলে দিনের শেষে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ৬৮.০৭ টাকায়।

এ দিকে রফতানি পড়তে থাকলেও কৃত্রিম ভাবে টাকার মূল্যহ্রাসের কোনও সম্ভাবনার কথা পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন। তিনি জানিয়েছেন যে, আর্থিক উন্নয়ন ঘটানোর খাতিরে চিনের পথে হেঁটে টাকার মূল্যহ্রাস করার কোনও অভিপ্রায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অথবা কেন্দ্রীয় সরকার কারওরই নেই।

এ দিন উঠলেও গত সপ্তাহভর কিন্তু পড়েছে শেয়ার বাজার। পতনের অঙ্কও ছিল বিশাল, ১৬৩১ পয়েন্ট। একই ভাবে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক নিফ্‌টির পতন হয়েছিল ৫০৮ পয়েন্ট।

মূলত পড়তি বাজারে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের শেয়ার কেনার হিড়িকই সূচককে টেনে তুলেছে বলে বাজার সূত্রের খবর, যার জেরে গত ত্রৈমাসিকে লোকসান করা ব্যাঙ্ক অব বরোদার দর বেড়েছে ২২%। এসবিআই বেড়েছে প্রায় ৮%।

উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে ইন্ডিয়ান অয়েলের শেয়ারের দাম। বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে তা ৬.৫৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৩৮৮.৫৫ টাকা। আগের বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে লোকসানের পরে ২০১৫-’১৬ আর্থিক বছরের ওই একই সময়ে আইওসি ৩০৫৬.৮৬ কোটি টাকার নিট মুনাফা করেছে।

যে-সব লগ্নিকারী আগাম লেনদেনে হাতে শেয়ার না-থাকা সত্ত্বেও তা বিক্রি (শর্ট সেলিং) করে রেখেছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই শেয়ার হস্তান্তরের জন্য তৈরি হওয়ার উদ্দেশ্যে শূন্য ঝুলি পড়তি বাজারে যতটা পেরেছেন ভর্তি (শর্ট কভারিং) করেছেন বলেই সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর।

পড়তি বাজারে শেয়ার কেনা ছাড়াও এ দিন বাজার তেজী করে তোলার জন্য যে-সব বিষয় বিশেষ ভাবে কাজ করেছে সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির ভোকাল টনিক। গত সপ্তাহে শেয়ার বাজারে যে-ধস নেমেছিল, তার জন্য প্রধানত দায়ী ছিল দেশের ব্যাঙ্কিং শিল্পে অনুৎপাদক সম্পদের বোঝার দ্রুত বৃদ্ধি। ওই খাতে আর্থিক সংস্থান করতে গিয়ে স্টেট ব্যাঙ্ক, ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক, দেনা ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্ক অব বরোদা-সহ অধিকাংশ ব্যাঙ্কেরই মুনাফা চলতি আর্থিক বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। অনেক ক্ষেত্রেই খাতায় লেখা হয়েছে লোকসান। এর ফলে লগ্নিকারীদের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক অবস্থার উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের ইঙ্গিত দিয়েছেন রবিবারই। পাশাপাশি তিনি ফের উল্লেখ করেছেন যে, ব্যাঙ্কগুলিকে বাড়তি মূলধন জোগাবে কেন্দ্র। অর্থমন্ত্রীর এই সব প্রতিশ্রুতি লগ্নিকারীদের আতঙ্ক কাটাতে সাহায্য করেছে বলে বাজার সূত্রের খবর।

এ দিন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এশিয়া এবং ইউরোপের শেয়ার বাজারও চাঙ্গা ছিল। বিশ্বায়নের যুগে বিদেশের বাজারের তেজী ভাব ভারতের বাজারকে চাঙ্গা করতে সাহায্য করেছে। বিশ্ব বাজার তেজী হওয়ার পিছনে প্রধান কারণ ছিল, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়া। এর প্রভাব পড়েছে ভারতেও।

তবে দেশের অর্থনীতির সাম্প্রতিক তথ্য চিন্তার রেখা ফেলছে বিশেষজ্ঞদের কপালে। কারণ, গত ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত হিসাবে দেশের শিল্পোৎপাদন কমেছে। জানুয়ারিতেও বেড়েছে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি।

যাই হোক, ভারতের বাজার কি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করল? বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অবশ্য অধিকাংশই এখনও সেটা মনে করছেন না। ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন ডিরেক্টর এস কে কৌশিক বলেন, ‘‘বাজারের ওঠা-পড়াটা বড় কথা নয়। গত সপ্তাহে শেয়ার বাজার যে-ভাবে পড়েছে, তাতে এটা প্রকট হয়েছে যে, লগ্নিকারীরা বিনিয়োগের আগ্রহই হারিয়ে ফেলেছেন। আমার মনে হয়, এ দিন বাজারের উত্থানের একটা প্রধান কারণ শর্ট কভারিং। প্রকৃত অর্থে লগ্নি নয়। বোঝা যাচ্ছে না যে, লগ্নির আগ্রহ বিনিয়োগকারীরা ফিরে পেয়েছেন কি না। এটা অবশ্য বোঝা যাবে আগামী দিন তিনেক বাজারের গতি দেখার পরেই।’’

এ দিনও অবশ্য বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলিকে সেই বিক্রেতার ভূমিকাতেই দেখা গিয়েছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের খবর অনুযায়ী, ওই সব সংস্থা ভারতের বাজারে এ দিন ১,৩০০ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে। তবে তার বিরপীতে হেঁটে ভারতীয় লগ্নিকারী সংস্থাগুলি ২,০০০ কোটির শেয়ার কিনেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

stock market downturn sensex
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE