Advertisement
১১ মে ২০২৪

মাস প্রায় শেষ, এখনও বেতন তুলতে নাকাল ডাক-কর্মীরা

নোট বাতিলের জালে এখনও নগদ-সঙ্কটে ডাকঘর। এর জেরে সাধারণ গ্রাহক ও পেনশনভোগীরা তো প্রয়োজন মতো টাকা তুলতে না-পারায় ভুগছেনই।

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৫২
Share: Save:

নোট বাতিলের জালে এখনও নগদ-সঙ্কটে ডাকঘর।

এর জেরে সাধারণ গ্রাহক ও পেনশনভোগীরা তো প্রয়োজন মতো টাকা তুলতে না-পারায় ভুগছেনই। পাশাপাশি, মাস শেষের দিকে গড়ালেও নিজেদের বেতনের টাকা পুরোপুরি তুলতে পারেননি ডাকঘরের অনেক কর্মী। ডাক বিভাগ সূত্রের অভিযোগ, চাহিদার ৫০ শতাংশের বেশি অর্থ পাচ্ছে না তারা।

চিফ পোস্ট মাস্টার জেনারেল (ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্কেল) অরুন্ধতী ঘোষের দাবি, ‘‘কর্মী ও পেনশনভোগীদের অনেকেই সমস্যার কথা আমাদের জানিয়েছেন। সাধ্য মতো সমাধানের চেষ্টা করছি।’’

সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, এ রাজ্যে ডাকঘরের সংখ্যা প্রায় ৮০০০। মূলত দু’ধরনের কর্মী আছেন। বিভাগীয় কর্মীর সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার। গ্রামীণ ডাক সেবক প্রায় ১৭ হাজার। গ্রামীণ ডাক সেবকদের বেতন কম ও তা নগদেই দেওয়া হয়। বিভাগীয় কর্মীদের বেতন নগদে মেটানো হয়, কিংবা তাঁদের ডাকঘর বা ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে। ন্যাশনাল ফেডারেশন অব পোস্টাল এমপ্লয়িজ (এনএফপিই)-এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার সাধারণ সম্পাদক জনার্দন মজুমদারের দাবি, বিভাগীয় কর্মীদের ১০ শতাংশের বেতন ব্যাঙ্কে ও ৩০ শতাংশের ডাকঘর সেভিংস অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে। বাকিরা নেন নগদে। যদিও ডাক কর্তৃপক্ষের দাবি, নগদে বেতন নেওয়া কর্মীর সংখ্যা এখন মাত্র ২০%।

নোট বাতিলের পরে এখন নগদে বেতন সম্পূর্ণ বন্ধ। অ্যাকাউন্টে বেতন জমা পড়েছে। অ্যাকাউন্ট না-থাকলে ডাকঘরে অ্যাকাউন্ট খুলতে বলা হচ্ছে। বাকিদের চেক-এ বেতন দেওয়া হচ্ছে। বেতন হয়তো অ্যাকাউন্টে পড়ছে। কিন্তু একে তো সপ্তাহে ২৪ হাজার টাকা তোলার ঊর্ধ্বসীমা রয়েছে। তার চেয়েও বড় সমস্যা টাকার অভাব। ডাকঘরগুলিতে টাকা প্রায় নেই। ফলে এমনিতেই ওই সীমার চেয়ে অনেক কম টাকা মিলছে। এমনকী এ রাজ্যে ডাক বিভাগের সদর দফতর খোদ ‘যোগাযোগ ভবন’-এর ডাকঘরেও নগদে টান।

জনার্দনবাবুর অভিযোগ, ‘‘আমরা জিপিও-র কাছে দৈনিক যে-টাকা এত দিন চাইতাম, এখন তার অর্ধেক চেয়েও পাচ্ছি না। শহরেই এই অবস্থা। গ্রামের পরিস্থিতি সহজেই অনুমেয়।’’ তিনি উদাহরণ দিয়ে জানান, তিন দিন পরে শনিবার তাঁদের প্রিন্সেপ স্ট্রিট ডাকঘরে টাকা আসে। তা-ও বেলার দিকে। ততক্ষণে গ্রাহকদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় কাউন্টার বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

গ্রাহকদের দাবি মতো টাকা না-দিয়ে কর্মীদের একাংশ ডাকঘর নিজেরাই থেকে টাকা তুলছেন, কোথাও কোথাও এই অভিযোগ উঠছে। তবে তা মানতে নারাজ জনার্দনবাবু। তাঁর পাল্টা দাবি, গ্রাহকদের অগ্রাধিকার দিতে গোড়াতেই তাঁর সংগঠন কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে। অবসরপ্রাপ্তদের পেনশন বণ্টনেও অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

নগদ জোগানের জন্য ডাকঘরগুলি পুরোপুরি নির্ভরশীল স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া-র উপর। নগদ-ঘাটতির কথা আংশিক মানছে এসবিআই-ও। তবে তাদের যুক্তি, অনেকেই টাকা মজুত করে রাখায় সমস্যা বাড়ছে। এসবিআই-এর ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্কেলের এক শীর্ষ কর্তার দাবি, নগদের জোগান স্বাভাবিক না-হলেও আগের চেয়ে বেড়েছে। বাজারে থাকা নোটের বেশিটাই যদি হাতবদল হয়, তা হলে সমস্যা অনেকটাই কাটবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

demonetisation post offices
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE