বন্দারু দত্তাত্রেয়র সঙ্গে অরুন্ধতী ভট্টাচার্য। মুম্বইয়ে। ছবি: পিটিআই
অবশেষে শেয়ার বাজারে যাত্রা শুরু করল কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ড। বৃহস্পতিবার মুম্বই থেকে কেন্দ্রীয় প্রভিডেন্ট ফান্ড কমিশনার কে কে জালান জানান, ‘‘আজ প্রায় ২০০ কোটি টাকা দিয়ে শুরু হল শেয়ার বাজারে আমাদের বিনিয়োগে।’’
এসবিআই মিউচুয়াল ফান্ডের এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড বা ইটিএফের মাধ্যমে প্রথম শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করছেন প্রভিডেন্ট ফান্ড কর্তৃপক্ষ। এর জন্য ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (এনএসই) এবং বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ (বিএসই)-এ নতুন দুটি ইটিএফ ফান্ড বৃহস্পতিবারই নথিভুক্ত করা হয়।
চলতি আর্থিক বছরে তহবিলে জমা পড়া নতুন টাকার ৫ শতাংশ শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করা হবে বলে মুম্বইয়ে এই উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় শ্রম প্রতিমন্ত্রী বন্দারু দত্তাত্রেয়। কিন্তু তিনি এ কথাও জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী তিন বছরের মধ্যে বিনিয়োগের পরিমাণ ১৫ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হবে। উল্লেখ্য, পিএফের টাকা লগ্নির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার যে-প্রস্তাব গ্রহণ করেছে, তাতেই বলা হয়েছে, ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ টাকা শেয়ার বাজারে লগ্নি করা হবে। ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের জনসংযোগ বিভাগের কর্তা অরিন্দম সাহা জানান, পি এফের যে-টাকা ইটিএফে লগ্নি করা হচ্ছে, তার ৭৫ শতাংশ হবে এনএসইতে। মুম্বইয়ের অনুষ্ঠানে এ দিন দত্তাত্রেয় ও জালান ছাড়াও হাজির ছিলেন এসবিআই চেয়ারপার্সন অরুন্ধতী ভট্টাচার্য এবং বিএসই-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর আশিস কুমার চহ্বাণ।
পিএফ দফতর সূত্র জানিয়েছে যে, চলতি আর্থিক বছরে তাদের তহবিলে নতুন করে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা জমা পড়বে। তারই ৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৫ হাজার কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ করা হবে শেয়ার বাজারে। তবে পিএফ তহবিলে যে-টাকা গত আর্থিক বছরে অর্থাৎ ২০১৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত জমা পড়েছে, সেই টাকার কোনও অংশই আপাতত শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
তবে পিএফের টাকা শেয়ার বাজারে লগ্নির এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলি। এসইউসিআই সমর্থিত ট্রেড ইউনিয়ন এআইইউটিইউসির সাধারণ সম্পাদক এবং পিএফের অছি পরিষদের সদস্য শঙ্কর সাহা বলেন, ‘‘পিএফের উদ্দেশ্য হল, সাধারণ কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা করা। আর শেয়ার বাজার হল মূলত ফাটকার জায়গা এবং চূড়ান্ত ভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। তাই পিএফের টাকা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের আমরা পুরোপুরি বিরোধী।’’ আইএনটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি রমেন পাণ্ডে-ও বলেন, ‘‘পিএফের টাকা কর্মীদের। তার উপর সরকারের কোনও অধিকার নেই। সরকার শুধু তা গচ্ছিত রাখতে পারে নিজের কাছে। তাই একক ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে কেন্দ্রের তরফে তা বাজারে খাটানো অনুচিত।’’
একই ভাবে এর বিরোধিতা করেছেন অছি পরিষদের আর এক সদস্য ভারতীয় মজদুর সংঘের সভাপতি বৈজনাথ রায়। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেশে সাধারণ কর্মীদের অবসরকালীন আর্থিক সুরক্ষার ব্যবস্থা একমাত্র পিএফের মাধ্যমেই কিছুটা করার চেষ্টা হয়েছে। সেই টাকাও ফাটকা বাজারে লাগালে যে-কোনও সময়েই তা মার যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শেয়ার বাজারে যে-টাকা বিনিয়োগ করা হবে, কেন্দ্রীয় সরকার যদি তার গ্যারান্টি দেয়, তা হলে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু তারা তা দিচ্ছে না। তাই আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করছি।’’
পিএফ কর্তৃপক্ষ অবশ্য সরাসরি শেয়ারে বিনিয়োগ করেছেন না। লগ্নির জন্য এসবিআই মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার সূচক ভিত্তিক দুটি ইটিএফ প্রকল্পকে বাছা হয়েছে। একটি ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের এসবিআই-ইটিএফ নিফ্টি এবং অন্যটি বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের এসবিআই সেনসেক্স ইটিএফ। শেয়ার বাজারে লগ্নির ঝুঁকির কথা মাথায় রেখেই মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে ইটিএফ প্রকল্পে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। লক্ষ্য ঝুঁকি কমিয়ে আনা।
কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে নতুন সরকার গত বছর ক্ষমতায় আসার পরে সিদ্ধান্ত নেয় যে, পিএফ তহবিলে প্রতি বছর যে-টাকা জমা পড়বে, তার ৫ থেকে ১৫ শতাংশ টাকা শেয়ার বাজারে লগ্নি করা হবে। তাদের যুক্তি, ব্যাঙ্কের মেয়াদি আমানত ইত্যাদিতে ক্রমশ সুদের হার কমছে। তাই শুধু সুদের উপর নির্ভর করে থাকলে পিএফ সদস্যদের অ্যাকাউন্টের টাকা বাড়ার সম্ভাবনা কমতেই থাকবে। সেই কারণেই অন্য উপায়ে এই তহবিলের আয় বাড়াতে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের পথ বেছে নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
ইটিএফ কী?
সাধারণত মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি করলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর লগ্নিকারী সংশ্লিষ্ট ফান্ড সংস্থার কাছে ইউনিট বিক্রি করে টাকা তুলে নিতে পারেন। এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড বা ইটিএফের নিয়ম হল, এর ইউনিটগুলি শেয়ারের মতো প্রতিদিনই স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে লেনদেন হয়। এর সুবিধা, টাকা তুলতে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় না। যে-কোনও সময়েই শেয়ার বাজারে তা বিক্রি করে বিনিয়োগ তুলে নেওয়া যায়। দ্বিতীয়ত, ফান্ড সংস্থাগুলি তাদের নিযুক্ত বিশেষজ্ঞদের দিয়ে যাচাই করিয়েই শেয়ার বাজারে লগ্নি করে। ফলে লগ্নিকারীদের সুবিধা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy