Advertisement
১১ মে ২০২৪

পিএফের টাকা বাজারে খাটলে খুলে যাবে বাড়তি আয়ের রাস্তা

অবশেষে প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা খাটবে শেয়ার বাজারে। অর্থাৎ প্রত্যক্ষ না-হলেও পরোক্ষ ভাবে অধিকাংশ চাকরিজীবী যুক্ত হতে চলেছেন শেয়ার বাজারের সঙ্গে। অনেক বিতর্ক থাকলেও এই ব্যাপারে কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গিয়েছে। লগ্নি শুরু হবে জুলাই থেকেই। গত ৩১ মার্চ কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ড সংগঠন বা ইপিএফও-র অছি পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রভিডেন্ট ফান্ডে বার্ষিক নতুন জমার ৫% লগ্নি করা হবে শেয়ার বাজারে।

অমিতাভ গুহ সরকার
শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৫ ০১:৪০
Share: Save:

অবশেষে প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা খাটবে শেয়ার বাজারে। অর্থাৎ প্রত্যক্ষ না-হলেও পরোক্ষ ভাবে অধিকাংশ চাকরিজীবী যুক্ত হতে চলেছেন শেয়ার বাজারের সঙ্গে। অনেক বিতর্ক থাকলেও এই ব্যাপারে কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গিয়েছে। লগ্নি শুরু হবে জুলাই থেকেই।

গত ৩১ মার্চ কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ড সংগঠন বা ইপিএফও-র অছি পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রভিডেন্ট ফান্ডে বার্ষিক নতুন জমার ৫% লগ্নি করা হবে শেয়ার বাজারে। পরে আর একটি বিজ্ঞপ্তিতে শ্রম মন্ত্রক জানায়, বেসরকারি প্রভিডেন্ট ফান্ড ট্রাস্টগুলি নতুন জমার ৫ থেকে ১৫% পর্যন্ত লগ্নি করতে পারবে সেখানে। ইপিএফও-কে নির্দেশ দেওয়া হয় যে, শেয়ার বাজারে নতুন জমার ৫% অর্থ লগ্নি করতে হবে এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড বা ইটিএফের মাধ্যমে। অর্থাৎ আলাদা আলাদা শেয়ারে নয়।

বিজ্ঞপ্তি থেকে এটা স্পষ্ট যে, ৩১ মার্চ পর্যন্ত যে-টাকা আপনার-আমার পিএফ অ্যাকাউন্টে জমা ছিল, তা স্পর্শ করা হবে না। গোটা দেশে বছরে নতুন জমার অঙ্ক দাঁড়ায় ১ লক্ষ কোটি টাকা। অর্থাৎ এ বছর থেকে চাকরিজীবীদের কম-বেশি ৫০০০ কোটি টাকা আসবে শেয়ার বাজারে। বাজারের কাছে এটি বড় সুখবর হলেও, ইকুইটি যাঁদের কাছে অস্পৃশ্য, তাঁরা কিন্তু এই সিদ্ধান্ত খুশি মনে মেনে নিতে পারেননি। একটু দেখে নেওয়া যাক ভাল-মন্দের দিকগুলি:

বড় অঙ্কের নতুন লগ্নি শেয়ার বাজারে প্রবেশ করলে বাজার শক্তি পাবে। বিদেশি লগ্নিকারীদের উপর নির্ভরতা কমবে।

প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা অবশ্যই লগ্নি করা হবে দীর্ঘ মেয়াদের জন্য। মাঝেমধ্যে ওঠা-পড়া করলেও অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, বড় মেয়াদে বাজার উপরের দিকেই যায়। লম্বা মেয়াদে শেয়ার বাজার থেকে বার্ষিক গড় আয় অন্য যে-কোনও লগ্নির তুলনায় সাধারণত বেশি হয়। অর্থাৎ নির্ধারিত হারে সুদ ছাড়াও শেয়ার বাজারে লগ্নির কারণে জমা টাকায় অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ থাকবে।

আয়ের দিক থেকে যেমন সুযোগ বেশি, সন্দেহ নেই ঝুঁকির দিক থেকেও শেয়ার বাজার সবাইকে পিছনে ফেলবে। প্রশ্ন হল, আমার-আপনার ঝুঁকি কতটা। নতুন জমার মাত্র ৫%। আমরা নিজেরাও তো অনেক সময়ে বুঝে বা না-বুঝে এমন অনেক প্রকল্পে লগ্নি করি, যেখানে ১০০% লগ্নিই মার যায়। তবে ৫% লগ্নিতে এমন অনীহা থাকবে কেন? এই লগ্নির পুরোটা মার যাওয়ার সম্ভাবনা কখনওই থাকবে না। অন্য দিকে থাকবে বড় লাভের হাতছানি।

আশা করা যায়, অনেক বিচার-বিবেচনা করে তবেই প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা শেয়ার বাজারে লগ্নি করা হবে। অবশ্যই ফাটকা খেলা হবে না। এই কারণে প্রথম দিকে লগ্নি করতে বলা হয়েছে শুধু মাত্র ইটিএফ ফান্ডে। এই ফান্ডের টাকা লগ্নি করা হয় বাছাই শেয়ারে। সিপিএসই নামে একটি ফান্ড আছে, যা লগ্নি করা হয় শুধুমাত্র বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থায়। প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা শেয়ার বাজারে লগ্নি করা হবে, এই খবরে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শেয়ারের দাম এরই মধ্যে বাড়তে শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার যখন কোনও সংস্থার শেয়ার বিলগ্নিকরণের পথে নামবে, তখন তাতেও লগ্নি করা হতে পারে আপনার-আমার প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা। আশা করা যায়, লগ্নির কাজটি দেওয়া হবে কোনও পেশাদার বিশেষজ্ঞ দলের হাতে।

সাধারণ মানুষের টাকা যখন শেয়ার বাজারে খাটানো হবে, তখন বাজারের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে। বাজারের উন্নতির জন্য এটি জরুরি। ভারতে মাত্র ২% মানুষ শেয়ার বাজারে লগ্নি করেন। এটি বাড়া প্রয়োজন।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পিএফ এবং পেনশনের টাকা বেশি লাভের জন্য আমাদের বাজারে খাটছে। এল আই সি-র একটি বড় পরিমাণ তহবিল প্রতি বছর ইকুইটিতে লগ্নি করা হয়। সেটাও তো আমাদেরই টাকা। মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমেও তো আমরা কয়েক লক্ষ কোটি টাকা পরোক্ষ ভাবে লগ্নি করেছি বাজারে। তবে পিএফ-এর একটি ক্ষুদ্র অংশ লগ্নির ব্যাপারে এতটা অনীহা থাকবে কেন?

প্রথম লগ্নির পরে বছর তিনেক গেলে বোঝা যাবে শেয়ার বাজারে প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে লগ্নি কোন পথে যাচ্ছে। ফল তেমন ভাল না-হলে প্রতিবাদ ধ্বনিত হবে সব মহল থেকে। সরকারও বাধ্য হবে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে। অন্য দিকে ফল ভাল হলে আমরাই হয়তো চাইব, লগ্নির পরিমাণ বাড়ানো হোক।

প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ ভাবে শেয়ার বাজারে লগ্নি করে আমরা নিজেদের অজান্তে শিল্পোন্নয়নে মদত জোগাই। বড় শিল্প স্থাপনের জন্য যে-বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়, তার একটি বড় অংশ সংগ্রহ করা হয় শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে। এই কারণে দেশের শেয়ার বাজার চাঙ্গা থাকা অত্যন্ত জরুরি। এই কাজে পিএফ-এর টাকা অবশ্যই মদত জোগাবে। শেয়ার বাজারে প্রাণ থাকলে তা বিদেশি লগ্নি টানার পক্ষে সহায়ক হবে।

অর্থাৎ পিএফের টাকা শেয়ারে লগ্নির ব্যাপারটি মন থেকে গ্রহণ করতে হবে। এটি যেন একজন নিরামিষাশীকে জোর করে বা না-জানিয়ে আমিষ খাওয়ানোর মতো ঘটনা না-হয়। নিত্য পথ চলতেও তো পদে পদে বিপদ থাকে। তাই বলে কি আমরা পথে বেরোই না?

এটুকু ঝুঁকি নিলে আখেরে হয়তো মন্দ হবে না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE