—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
পশ্চিম এশিয়ায় ইজ়রায়েল-হামাস সংঘাতের ধাক্কা এসে পড়তে শুরু করেছে শেয়ার বাজারে। মূলত এর জেরেই সোমবার কার্যত ধস নামল সূচকে। সেনসেক্স একলপ্তে ৮২৫.৭৪ পয়েন্ট পড়ে নেমে গেল ৬৪,৫৭১.৮৮ অঙ্কে। নিফ্টি দাঁড়াল ১৯,২৮১.৭৫-তে। পতন ২৬০.৯০। বিএসই-তে এক দিনে লগ্নিকারীরা তাঁদের ৭.৫৯
লক্ষ কোটি টাকার শেয়ার সম্পদ হারিয়ে ফেললেন।
এ নিয়ে টানা চার দিন সেনসেক্স নেমেছে মোট ১৯২৫ পয়েন্ট। আর এই ক’দিনে বাজার থেকে মুছে গিয়েছে লগ্নিকারীদের ১২ লক্ষ ৫১ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকার শেয়ার সম্পদ। চার দিনে নিফ্টির পতন হয়েছে মোট ৫৩০। শুধু ভারতে নয়, শেয়ার সূচক পড়ছে বিশ্ব জুড়ে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, মূলত ইজ়রায়েল এবং প্যালেস্টাইনের হয়ে অস্ত্র হাতে নেওয়া জঙ্গি গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে সংঘাতের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল রেখেই পড়ছে সূচক। আগামী দিনে আরও পড়তে পারে। তবে পতনের আরও কিছু কারণের দিকেও আঙুল তুলছেন একাংশ। যেমন, ভারত এবং আমেরিকায় অদূর ভবিষ্যতে সুদ কমার আশঙ্কা না থাকা, মূল্যবৃদ্ধি মাথা তুললে বরং প্রয়োজনে সুদ বৃদ্ধির ইঙ্গিত ইত্যাদি।
বাজার বিশেষজ্ঞ আশিস নন্দীর দাবি, অনিয়মিত বৃষ্টি এবং অনিশ্চিত বিশ্ব অর্থনীতি দেশে খাদ্য-সহ বিভিন্ন পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা জিইয়ে রেখেছে। যে কারণে সম্প্রতি সুদের হার কমানোর বিষয়টিকে সময়ের হাতে ছাড়তে বলেন আরবিআই গভর্নর শক্তিকান্ত দাস। পণ্যের চড়া দামকে পুরোপুরি বাগে আনতে আমেরিকার শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারাল রিজ়ার্ভও সুদের হার এখনই কমানোর কথা ভাবছে না বলে জানিয়েছে। ফলে সে দেশে বন্ডের বাজার ক্রমশ চাঙ্গা হচ্ছে। শেয়ার বাজার থেকে পুঁজি তুলে তা আমেরিকার বন্ডে সরাচ্ছে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি।
আশিসের কথায়, ‘‘এ সবের ফলে শেয়ার বিক্রির বহর বাড়তে থাকার বিরূপ প্রভাব পড়ছে সূচকে। এর উপর হালে ইজ়রায়েল এবং হামাসের মধ্যে সংঘর্ষ মূলধনী বাজারে যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে, তাতে বিশ্ব জুড়েই আতঙ্কিত লগ্নিকারীরা। তুলনামূলক ভাবে কম ঝুঁকির লগ্নি ক্ষেত্র বন্ডের দিকে ঝুঁকছেন অনেকেই। ফলে প্রায় সমস্ত দেশের শেয়ার বাজার পড়ছে।’’
পাশাপাশি আন্তর্জাতিকবাজারে ফের বাড়তে শুরু করেছে অশোধিত তেলের দাম। আশিসবাবু মনে করেন, তেলের দাম বৃদ্ধি মূল্যবৃদ্ধিকে উস্কে দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমেরিকা ফের সুদের হার বাড়ালে, সেখানকার বন্ডে লগ্নির বহর তো বাড়বেই। ধাক্কা খাবে চাহিদাও। যার প্রভাব পড়বে ভারত-সহ বিভিন্ন দেশের রফতানি বাণিজ্য এবং শিল্পের অগ্রগতির উপর।
সংশ্লিষ্ট মহল অবশ্য জানাচ্ছে, এ দিন ভারতে শেয়ার বাজার পড়েছে সাধারণ লগ্নিকারীরা আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করতে নামার কারণে। বরং বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি এ দিনের ২৫২.২৫ কোটি টাকা নিয়ে দু’দিনে ভারতের বাজারে শেয়ার কিনেছে ৭০৮.৪৬ কোটি টাকার। বাজারের পতনকে স্বাগত জানিয়েছেন ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন সভাপতি কমল পারেখ। তিনিবলেন, “সূচক এতটা উপরে উঠেছে প্রধানত বাজারে মিউচুয়াল ফান্ডগুলির নগদ জোগানের জেরে।
অধিকাংশ সংস্থারই শেয়ারের দামের সঙ্গে মুনাফার সামঞ্জস্য নেই। এটা একটা ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপার। তাই শেয়ারের দামের এই সংশোধন কাম্য ছিল। আমি মনে করি, দামে আরও কিছুটা সংশোধন হলে তা বাজারকে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করাবে। লগ্নিকারীরাও নতুন করে বিনিয়োগের সুযোগ পাবেন।’’
তবে আশিসের আশ্বাস, “বিশ্ব অর্থনীতি ধাক্কা খেলেও ভারতের পরিস্থিতি অন্য অনেক দেশের তুলনায় ভাল। এটা একটা বড় ভরসা। এ দেশের বিশাল বাজার আন্তর্জাতিক আর্থিক সঙ্কটের সামনে ঢাল হিসাবে কাজ করবে বলে আমার বিশ্বাস।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy