সবাই যখন ঢাকে কাঠি পড়ার অপেক্ষায়, সেই সময়ে সুদ কমার ঘোষণা এল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে। এই দফায় ২৫ বেসিস পয়েন্ট। শিল্পের জন্য ভাল হলেও এটা আদৌ সুখবর নয় সুদ-নির্ভর মানুষদের জন্য। রেপো রেট (যে-সুদে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে টাকা ধার দেয়) কমলে এক দিকে যখন ঋণে সুদ কমে, অন্য দিকে তেমন সুদ নামে জমার উপরেও। বাস্তব অভিজ্ঞতা কিন্তু একটু অন্য রকম। গত দু’বছরে কয়েক দফায় রেপো রেট কমানো হলেও সেই অনুপাতে ঋণে সুদ কমেনি। ঋণে সুদ না-কমলে উৎপাদন খরচ কমে না। ফলে দামও কমে না শিল্পপণ্যের।
উল্টো দিকটা দেখুন। গত দু’বছরে জমার উপর সুদ কমেছে কম-বেশি ২%। ব্যাঙ্কে সুদের হার ৯.৫% থেকে নেমেছে ৭.৫ শতাংশে। সরকারি হিসেব মতো দাম কমছে, তাই সুদ কমছে। বাস্তবে দাম কমলে কিছু বলার থাকত না। সত্যিই কি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নীচে নেমেছে? মনে রাখতে হবে, মূল্যবৃদ্ধির হার কম হওয়ার মানে কিন্তু দাম কমা নয়। দাম বাড়ার হার কমা। পাহাড়প্রমাণ অনুৎপাদক সম্পদ নিয়ে রেপো রেট কমা সত্ত্বেও ব্যাঙ্কগুলি সেই অনুপাতে ঋণে সুদ কমাতে পারছে না। তবে খুব বেশি দেরি করছে না জমায় সুদ কমাতে। অর্থাৎ পণ্যমূল্য তেমন কমেনি, কিন্তু মানুষের সুদ বাবদ আয় অনেকটাই নেমে এসেছে।
একই ভাবে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম যখন তলানিতে ঠেকেছে, তখনও কিন্তু এ দেশে দর সেই অনুপাতে কমেনি। নতুন করের বোঝা চাপিয়ে তেলের দাম যতটা কমা উচিত ছিল তা হতে দেওয়া হয়নি। এটা কি বাজার-নির্ভর দাম নির্ধারণের নমুনা?
১ এপ্রিলের পরে আর এক দফা সুদ কমানো হয়েছে ডাকঘর ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে। এরই মধ্যে শিল্পমহলে দাবি উঠেছে ঋণে সুদ আরও কমানোর। গত সপ্তাহে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী খুচরো ও পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি দুই-ই কমেছে। পাশাপাশি আর এক প্রস্ত বেড়েছে পেট্রোল-ডিজেলের দাম। জমায় সুদ আরও কমলে সত্যিই বিপাকে পড়বেন সুদ-নির্ভর অসংখ্য মানুষ। ২০১৫-র জানুয়ারিতেও প্রবীণরা ব্যাঙ্কে সুদ পেয়েছেন ৯.৫%। বর্তমানে সুদ খুব বেশি হলে ৮%। অর্থাৎ প্রতি ১০ লক্ষ টাকায় বার্ষিক আয় কমেছে ১৫,০০০ (মাসিক ১,২৫০) টাকা। অন্য দিকে খুচরো পণ্যমূল্য বেড়েছে ৫ থেকে ৮%। এই পরিস্থিতিতে মানুষকে বিকল্প লগ্নি প্রকল্প খুঁজতে হচ্ছে— যেখানে সুদ বাবদ লোকসান কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। আজ দেখার চেষ্টা করব, ব্যাঙ্ক -ডাকঘরের বিভিন্ন প্রকল্পের বিকল্প কী হতে পারে এবং তাতে ঝুঁকিই বা কতটা। পুরো চিত্রটি দেওয়া হল সঙ্গের সারণিতে।
যাঁরা শেয়ার বাজার ও ইকুইটি ফান্ডে লগ্নি করেন, তাঁদের জন্য কিন্তু সময়টা ভাল। সুদ কমা শেয়ার বাজারের কাছে সদর্থক। সুদ কমলে বাজারে নথিবদ্ধ বন্ডগুলিরও দাম বাড়ে। ফলে ভাল করছে বন্ড ফান্ডগুলিও। শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডে করের দিক থেকেও আছে মস্ত সুবিধা। সদ্য এক দফা সুদ কমেছে। ভাল বর্ষার সুবাদে পণ্যমূল্য যদি কমতে থাকে, তবে অদূর ভবিষ্যতে আরও এক দফা সুদ কমার সম্ভাবনা থাকবে।
দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক তথা ষাণ্মাসিক কোম্পানি ফলাফল প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। মোটের উপর বাজার ভাল ফল আশা করছে। এরই মধ্যে নজরকাড়া ফল প্রকাশ করেছে ইন্ডাসইন্ড ব্যাঙ্ক। টিসিএস এবং ইনফোসিস উন্নত ফলাফল প্রকাশ করলেও গোটা বছরের জন্য বড় কোনও আশার ইঙ্গিত দিতে পারেনি।
সেপ্টেম্বরে গাড়ির রেকর্ড বিক্রি অর্থনীতি সম্পর্কে সদর্থক ইঙ্গিত দেয়। চাহিদা বাড়তে থাকায় দাম বাড়ছে সিমেন্টের। গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হলে চাহিদা বাড়বে বহু পণ্যের। ফলে শিল্প ও অর্থনীতি গতি পাবে। উৎসবের মরসুমে বাড়তি বিক্রির প্রভাব প্রতিফলিত হবে তৃতীয় ত্রৈমাসিক ফলাফলে। সব মিলিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি বাজারের পক্ষে বেশ অনুকূল। মাঝেমধ্যে জল ঘোলা করে দিচ্ছে মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভের সুদ বৃদ্ধির সম্ভাবনা এবং ব্রেক্সিট-জনিত লোকসানের আশঙ্কা। এই পরিস্থিতিতে লগ্নি করতে হবে সত্যিকারের ভাল কোম্পানিতে। ইকুইটি এবং ইকুইটি ফান্ডে লগ্নি করতে হবে প্রত্যেকটি মাঝারি থেকে বড় পতনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy