Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
সুযোগ কেন্দ্রীয় প্রকল্পে

এই প্রথম নিগমের পাট বীজ রাজ্যে

পাটের ফলন বাড়াতে এ বার কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পের আওতায় আনা হচ্ছে রাজ্যের চাষিদের। এই প্রথম রাজ্যের পাট চাষিরা জাতীয় বীজ নিগমের (ন্যাশনাল সিড কর্পোরেশন) পরীক্ষিত এবং স্বীকৃত বীজ পেতে চলেছেন।

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৪৪
Share: Save:

পাটের ফলন বাড়াতে এ বার কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পের আওতায় আনা হচ্ছে রাজ্যের চাষিদের।

এই প্রথম রাজ্যের পাট চাষিরা জাতীয় বীজ নিগমের (ন্যাশনাল সিড কর্পোরেশন) পরীক্ষিত এবং স্বীকৃত বীজ পেতে চলেছেন। এত দিন পরীক্ষামূলক ভাবে স্বীকৃত অন্য সংস্থার বীজ চাষিদের দেওয়া হলেও জাতীয় বীজ নিগমের নিজস্ব খামারে পরীক্ষিত পাটের বীজ কখনও বণ্টন করা হয়নি।

এ বছরেই জাতীয় পাট পর্ষদ (ন্যাশনাল জুট বোর্ড) কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রকের অধীনে আই-কেয়ার প্রকল্পে ৯০০ টন বীজ চাষিদের মধ্যে বণ্টন করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার মধ্যে ৯০ শতাংশই পেতে চলেছেন এ রাজ্যের চাষিরা। ফলে আগামী মরসুমে নদিয়া, মুর্শিদাবাদের মতো পাট প্রধান জেলাগুলিতে বিঘে প্রতি কমপক্ষে ২০ শতাংশ করে পাটের ফলন বাড়বে বলেই পর্ষদ মনে করছে।

শিল্প মহলের বক্তব্য, দেশের মোট পাট উৎপাদনের ৮০ শতাংশই হয় পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু বাজারে বীজ কিনতে গিয়ে চাষিদের অনেক সময়েই ঠকতে হয়। কারণ মোড়কবন্দি যে-সমস্ত বীজ বাজারে বিক্রি হয়, তার অধিকাংশই সরকারি ভাবে স্বীকৃত নয়।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাজার চলতি বীজ কিনে শেষে ফলনে মার খেতে হয় চাষিদের। অনেক সময়ে আবার পুরনো অপরীক্ষিত বীজের সঙ্গে নতুন বীজ মিশিয়ে চাষিদের বিক্রি করে দেওয়া হয়। সাধারণত ওই ধরনের বীজের ফলনে পাটের আঁশ ও গাছের উচ্চতাও কম হয়।

ফলনে নিশ্চয়তা

• সরকারি পরীক্ষিত বীজে ফলন প্রায় নিশ্চিত যদি না প্রকৃতি বাদ সাধে

• পাট গাছ উচ্চতায় বড় হয়

• পাটের মানও ভাল হয়

অন্য বীজের ঝুঁকি

• কত ফলন হবে, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না

• পাট গাছের উচ্চতাও ছোট হয়

ইতিবৃত্ত

• দেশে পাটের বীজ উৎপাদন হয় ১০ হাজার টন

• বাংলাদেশে রফতানি হয়চার হাজার টন

• পশ্চিমবঙ্গে দরকার হয় সাড়ে তিন হাজার টন

• সারা দেশে পরীক্ষিত বীজ তৈরি হয় তিন হাজার টন

তথ্যসূত্র: পাট পর্ষদ

এই সব কারণেই বস্ত্র মন্ত্রকের আর্জি মেনে জাতীয় বীজ নিগম উচ্চ ফলনশীল এবং ভাল মানের পাট হবে, এমন বীজ তৈরি শুরু করে। জাতীয় পাট পর্ষদ ও জাতীয় পাট নিগমের (জুট কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া) সঙ্গে ২০১৭ সালে বীজ নিগমের একটি সমঝোতা চুক্তিও হয়। সেই চুক্তির সূত্র ধরে নিগম এ বছরেই প্রথম তাদের উৎপাদিত ৯০০ টন স্বীকৃত বীজ পর্ষদকে দিতে চলেছে। বস্ত্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, ২০১৯ সালে নিগম ১৫০০ টন বীজ পর্ষদকে দেবে বলে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।

প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রকের আওতায় আই-কেয়ার প্রকল্প রূপায়ণের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে, বিজ্ঞানসম্মত চাষের মাধ্যমে পাটের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি তার মান ও রং উজ্জ্বল করা।

পাট পর্ষদের কর্তাদের দাবি, জাতীয় নিগমের তৈরি বীজে ফলন হবে ৯৯ শতাংশ। এবং আগে যেখানে হেক্টর পিছু ২৩-২৪ কুইন্টল পাট হত, সেখানে নতুন বীজে হেক্টর পিছু কমপক্ষে ৩২ কুইন্টল উৎপাদন করা সম্ভব হবে। নতুন বীজে অন্তত এক লক্ষ হেক্টর জমিতে পাট চাষ শুরু হবে, যা তৈরি করে দিয়েছে ব্যারাকপুরের কেন্দ্রীয় পাট গবেষণা কেন্দ্র।

রাজ্যে পর্ষদের পক্ষে আই-কেয়ার প্রকল্পের প্রধান কর্তা সুশান্ত পাল জানিয়েছেন, জাতীয় পাট নিগমের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে রাজ্যের ৪৮টি ব্লকে বীজ বণ্টনের কাজ শুরু হবে। এর মধ্যে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদেই দেওয়া হবে সব থেকে বেশি। এ ছাড়াও, উত্তর ২৪ পরগনা, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ, হুগলির চাষিরাও নিগমের বীজ পাবেন বলে তিনি দাবি করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Farmers Jute National Seed Corporation NSC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE