Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

এক যুগ আগেকার ফাইলে ঝাড়পোঁছ

২০০১ সালে সদারঙ্গানি নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তিনি ব্যাঙ্ক অব মহারাষ্ট্র এবং ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার ৮.৫ কোটি টাকা প্রতারণা করে পালিয়ে গিয়েছেন।

নজরে: নীরব মোদী।

নজরে: নীরব মোদী।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:১৫
Share: Save:

এত দিন তাকে তোলা ছিল। হঠাৎই খোঁজ পড়েছে জরুরি ভিত্তিতে। ধুলো ঝেড়ে বার করে এক যুগেরও বেশি (১৪ বছর) পুরনো এক ফাইলকেই কাজে লাগাতে চাইছে সাউথ ব্লক। পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ককে ১৩ হাজার কোটি টাকা প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত হিরে ব্যবসায়ী নীরব মোদীকে হংকং থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য এই ফাইলটিই শেষমেশ তুরুপের তাস হতে পারে, এমনটাই আশা করছে বিদেশ মন্ত্রক।

২০০১ সালে সদারঙ্গানি নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তিনি ব্যাঙ্ক অব মহারাষ্ট্র এবং ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার ৮.৫ কোটি টাকা প্রতারণা করে পালিয়ে গিয়েছেন। সিবিআই এবং ইন্টারপোল তদন্ত করে দেখে তিনি হংকংয়ে পলাতক। ২০০৪ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের সরকারের সঙ্গে সফল দৌত্যে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পেরেছিল ভারত।

বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, সম্প্রতি এই দৃষ্টান্ত দেখাতেই সংশ্লিষ্ট ফাইলটি তুলে ধরা হয়েছে চিনের সামনে। বলা হচ্ছে, সে বার যে ভাবে আইনি পদক্ষেপ করা হয়েছিল, এ বারও তা করা হোক। বেজিংয়ের নির্দেশে হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের সরকার ভারতের এই অনুরোধ এবং নথিপত্র খতিয়ে দেখছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর।

তবে শেষ পর্যন্ত বিষয়টি ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের টানাপড়েনের উপরেই নির্ভর করবে, এমনটাই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির। জুন মাসে প্রধানমন্ত্রীর চিন সফরে এই বিষয়টি গুরুত্ব পেতে চলেছে বলেও বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়েও নীরব মোদী-বিজয় মাল্যের মতো পলাতকদের দেশে ফেরানোয় সরকার উৎসাহ দেখাচ্ছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

কেন্দ্রীয় বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিংহ সম্প্রতি সংসদে বলেছিলেন, ‘‘গণ প্রজাতন্ত্রী চিনের হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের সরকারের কাছে নীরবকে গ্রেফতার করার দাবি জানিয়েছে ভারত।’’

ইতিহাস

• ২০০১ সালে ব্যাঙ্ক অব মহারাষ্ট্র, ইউবিআইয়ের ৮.৫ কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ সদারঙ্গানির বিরুদ্ধে

• বি আই, ইন্টারপোল তাঁর হদিস পায় হংকংয়ে

• ২০০৪ সালে চিনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের সরকার তাঁকে ফিরিয়ে দেয় ভারতে

নজির তুলে এ বারও...

• ফাইল চিনের সামনে আনল ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক

• নীরবকেও ফেরাতে আর্জি

• বেজিংয়ের নির্দেশে হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল সরকার ভারতের আর্জি ও নথি খতিয়ে দেখছে

• ভারতের সঙ্গে অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে হংকংয়ের

• চুক্তি মেনে নীরবকে গ্রেফতার করে ভারতে ফেরাতে পারে হংকং, জানাচ্ছে চিনও

• তবে বিষয়টিতে ছায়া ফেলবে ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক

চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র গেং শুয়াং কিছুটা ইতিবাচক ভাবেই বলেছেন, ‘‘আমাদের ধারণা এই আর্জি ও নির্দিষ্ট আইন মেনে হংকং ব্যবস্থা নেবে।’’ ভারত-সহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের সরকারের। সেই অনুযায়ী নীরবকে গ্রেফতার করে ভারতে ফেরাতে পারে হংকং, মুখে এমনটাই জানাচ্ছে চিন।

১৯৯৭ সালে হংকংয়ে ব্রিটিশ শাসনের অবসানে চিনকে ওই অঞ্চলের সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এক রাষ্ট্র দুই নীতির তত্ত্ব অনুযায়ী স্থির হয়, বিদেশ নীতি এবং প্রতিরক্ষা নীতির ক্ষেত্রে চিনই শেষ কথা। তার বাইরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বাধীন ভাবে নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারে হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের সরকার। কিন্তু রাজনৈতিক ভাবে হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের সরকারের উপর চিনের সর্বাত্মক নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নাতীত।

ফলে শেষ পর্যন্ত নীরব মোদীকে ফেরানো হবে কি না, তা নির্ভর করবে বেজিংয়ের সবুজ সঙ্কেতের উপরই। প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালেই এডওয়ার্ড স্নোডেনকে (মার্কিন নিরাপত্তা সংস্থার আন্তর্জাতিক নজরদারির বিষয়টি ফাঁস করে দিয়ে যিনি হোয়াইট হাউসকে বিপাকে ফেলেছিলেন) প্রত্যর্পণের মার্কিন অনুরোধ হংকং খারিজ করে দিয়েছিল চিনের নির্দেশে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nirav Modi Foreign Ministry Files
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE