Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

অর্থনীতিবিদ থেকে শিল্পপতি, নানা মুনির নানা মত

অরুণ জেটলি বলছেন, অর্থনীতির জন্য সোনায় সোহাগা। অমিত মিত্রের মতে, জোড়া ধাক্কা।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৫২
Share: Save:

অরুণ জেটলি বলছেন, অর্থনীতির জন্য সোনায় সোহাগা। অমিত মিত্রের মতে, জোড়া ধাক্কা।

নোট বাতিলে এমনিতেই বেহাল ব্যবসা-বাণিজ্য। এর পরে জিএসটি চালু হলে অর্থনীতিতে আরও ধাক্কা লাগবে কি না, তা নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের মধ্যে বিবাদ তৈরি হয়েছে। বণিকসভা থেকে শুরু করে অর্থনীতিবিদ, এ বিষয়ে নানা মুনির নানা মত। যার জেরে জিএসটি পরিষদে বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে বৈঠকে শনিবারও সন্ধি হল না। এক দিকে করদাতাদের উপর কেন্দ্র-রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ, অন্য দিকে নোট বাতিলের ধাক্কার মুখে নতুন কর ব্যবস্থা চালু করা কতটা যুক্তিসঙ্গত হবে, সে প্রশ্নে শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া দু’দিনের বৈঠকে ঐকমত্য হয়নি। ১১ ও ১২ ডিসেম্বর ফের বৈঠকে বসছে পরিষদ।

পণ্য-পরিষেবা কর বা জিএসটি চালু করার পক্ষে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির যুক্তি, নোট বাতিল ও জিএসটির যোগফলে অর্থনীতির বহর বাড়বে। বাড়বে বৃদ্ধির হার। নোটের অভাবে এখন ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড, অনলাইনে কেনাবেচা বেড়েছে। জিএসটিতে সমস্ত লেনদেনই সরকারি নজরে এসে যাবে। ফলে কর ফাঁকি কঠিন হবে। এ ব্যাপারে শিল্পমহল, বণিকসভা জেটলির পাশে। রফতানিকারীদের সংগঠন ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশন্সের সভাপতি এস সি রলহনের দাবি, জিএসটি চালুর ঠিক আগে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত তাঁদের পক্ষে ভালই হয়েছে। একই মত অনেক অর্থনীতিবিদেরও।

উল্টো দিকে পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, কেরলের অর্থমন্ত্রী টমাস আইজ্যাক, যাঁরা নিজেরাও অর্থনীতিবিদ, মনে করছেন, নোট বাতিলের পরে জিএসটি চালু হলে ভাল হবে না খারাপ, তা নিয়ে আশঙ্কা থাকছেই।

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৌমেন চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘নোট বাতিলে সবচেয়ে ধাক্কা খেয়েছে অসংগঠিত ক্ষেত্র। কেনা-বেচা কমছে। ফলে কমছে উৎপাদন। জিএসটি এলে তারা আরও বিপাকে পড়বে বলেই আশঙ্কা। যা অমূলক নয়। কারণ সকলেই মনে করছেন, নোট বাতিলের ধাক্কা কাটতে ২-৩ মাস লাগবে। তার ঠিক পরে জিএসটি চালু হলে কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।’’ গত অর্থ বছরে বৃদ্ধির হার ছিল ৭.৫%। এ বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে কমে হয়েছে ৭.৩%। আগামী ৩-৬ মাসে বৃদ্ধি আরও কমবে বলে অর্থ মন্ত্রকেও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ঠিক এই প্রশ্নটাই তুলেছিলেন অমিতবাবু। তাঁর যুক্তি ছিল, হঠাৎ করে নোট বাতিলের ফলে মানুষের হাতে নগদের জোগান কমেছে। পরিষেবা, ছোট ইস্পাত কারখানা থেকে ছোট মাপের ঠিকাদার, খুচরো ব্যবসা, অসংগঠিত ক্ষেত্র— সবেতেই ধাক্কা লেগেছে। অথচ মূলত এই সব ক্ষেত্র থেকেই রাজ্যের বিপুল ভ্যাট আদায় হয়। রাজস্ব কমলে পরিকাঠামো বা সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যয়ও কমবে। দিল্লির অর্থমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়ার দাবি, ‘‘দিল্লির রাজস্ব আয় ৫০% কমেছে।’’

সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের সিনিয়র ফেলো রাজীব কুমারের আবার যুক্তি, ‘‘এই দুইয়ের মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই। কারণ নোট বাতিলের প্রভাব থাকবে পরের ত্রৈমাসিক পর্যন্ত। অর্থাৎ মার্চের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। জিএসটি চালু হচ্ছে তার পরে। ফলে একসঙ্গে দু’টি বিষয় সামলাতে হবে না।’’ অর্থ মন্ত্রকের অধীন সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসির (এনআইপিএফপি) অধ্যাপক এ আর ভানুমূর্তির যুক্তি, ‘‘নোট বাতিল এবং জিএসটি আর্থিক সংস্কারের ক্ষেত্রে পৃথক অস্ত্র। তাদের প্রভাবও আলাদা। জিএসটি নিয়ে বিপুল আশাও তৈরি হয়েছে অর্থনীতিতে। এখন নোট বাতিলের ফলে এমনিতেই ব্যবসায়ীদের অনলাইন লেনদেনে জোর দিতে হচ্ছে। আবার জিএসটি এলেও সব ব্যবসায়ীকে নেটে কর মেটাতে হবে। বারবার ব্যবস্থা বদলের থেকে একবারে বদলে
ফেলাই ভাল।’’

নোট বাতিল এবং জিএসটি নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের লড়াইয়ে অবশ্য কারও পক্ষ নিয়ে বিরাগভাজন হতে চাইছেন না বণিকসভার কর্তারা। তবে ঘরোয়া আলোচনায় সকলেই জিএসটি-র পক্ষে। জেটলির মতো তাঁরাও মনে করছেন, দু’য়ে মিলিয়ে খেলাটাই বদলে যাবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব জিএসটি চালু করা হোক। বণিকসভার এক শীর্ষকর্তার দাবি, ‘‘নোট বাতিলে কালো টাকার লেনদেন কমেছে। অধিকাংশ লেনদেন অর্থনীতির মূল স্রোতে আসছে। জিএসটি-র বড় লাভ সেটাই। এখন সরকারের নজরের বাইরে সিংহভাগ লেনদেন চলে। তার সব থেকে বড় প্রমাণ জাতীয় আয়ে করের হার মাত্র ১৬.৬%। অন্য উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে যা ২১%। ৩ কোটির কম মানুষ আয়কর রিটার্ন দেন। তাঁদেরও অর্ধেকের বেশি করের আওতায় নেই।’’ ফলে জিএসটি চালু হলে রাজ্যগুলিরও শেষ পর্যন্ত কর খাতে আয় বাড়বে বলেই তাঁর দাবি।

অরুণ জেটলি সেই কথাই বলছেন। তাঁর বক্তব্য, হয়তো তিন থেকে ছ’মাস ধাক্কা লাগবে। কিন্তু পরের ১২ থেকে ১৫ মাসে আখেরে লাভই হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

GST
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE