Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

উচ্চশিক্ষার জন্য টাকা জমান ফান্ডে

হাতে টাকা আসে ভালই। কিন্তু তার পুরোটাই রেখে দিচ্ছেন কম সুদের নানা প্রকল্পে। অন্তত কিছুটা ঝুঁকি নিতে না-পারলে কিন্তু তহবিল বাড়ানো যাবে না। সাবধান করলেন শৈবাল বিশ্বাসতাড়াতাড়ি অবসর নিয়ে সুখে জীবন কাটাতে কে না চায়! কিন্তু এ জন্য যে কাজে ঢোকার পরেই লগ্নি শুরু করতে হবে, তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হয়ে ওঠে না।

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৭ ০২:৫৮
Share: Save:

পরিচিতি: জিৎ (৪২)

স্ত্রী (৩৬) বড় ছেলে (৭)
ছোট ছেলে (১ মাস)
বাবা (৭৪) মা (৬৪)

কী করেন: বেসরকারি সংস্থার কর্মী। স্ত্রী স্কুলে পড়ান। বাবা পেনশন প্রাপক

লক্ষ্য: ১০ বছরে ১.৫ কোটির তহবিল। পরিবারের সকলের জন্য স্বাস্থ্যবিমা। সন্তানের উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা

তাড়াতাড়ি অবসর নিয়ে সুখে জীবন কাটাতে কে না চায়! কিন্তু এ জন্য যে কাজে ঢোকার পরেই লগ্নি শুরু করতে হবে, তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হয়ে ওঠে না। জিতের সুবিধা হল, তাঁর পরিবারের তিন জনেরই রোজগার রয়েছে। ফলে মাস গেলে মোটা টাকা হাতে আসে। কিন্তু লগ্নির পরিকল্পনা না-থাকায় সঞ্চয়ের দিকটা কিছুটা এলোমেলো। কী ভাবে তা ঢেলে সাজা যায়, আসুন দেখি।

বিমায় অসুবিধা

জিতের একাধিক জীবনবিমা রয়েছে, সবক’টিই এনডাওমেন্ট পলিসি। সব মিলিয়ে বিমার অঙ্কও ২১ লক্ষের কাছাকাছি। আর স্ত্রীর বিমা মাত্র ৩.৫ লক্ষের। সব মিলিয়ে অঙ্কটা খুব বেশি মনে হলেও, মূল্যবৃদ্ধি হিসেব করলে প্রয়োজনের সময়ে কিন্তু তা একেবারেই কাজে লাগবে না। তার উপরে তাঁদের সব পলিসির মেয়াদই শেষ হচ্ছে ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে। এর পরেও কিন্তু অনেকটা সময় থাকবে। বিশেষত সন্তানদের পড়াশোনার বিশাল খরচ থাকবে সামনে। তাই তাঁদের কিছু হলে, পড়াশোনা যাতে না-আটকায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

মনে রাখবেন বিমা সঞ্চয় নয়। জিৎকে বলব—

• যে-সমস্ত পলিসিতে এককালীন প্রিমিয়াম দিয়েছেন, তা থাকুক।

• নতুন করে ওই ধরনের এককালীন পলিসি করবেন না।

• জিৎ ও তাঁর স্ত্রীর বাদবাকি পলিসির ৩ বছর হয়ে গিয়েছে। তাই সেগুলি পেড-আপের ব্যবস্থা করুন।

• নিজেদের জন্য কমপক্ষে ৫০ লক্ষ টাকা করে টার্ম পলিসি কিনুন। সঙ্গে নিন ক্রিটিক্যাল ইলনেস এবং অ্যাক্সিডেন্ট কভার। দেখবেন তা যেন কমপক্ষে ২৩ বছর (জিতের ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত) চলে।

• টার্ম পলিসি কেনা হলে, জীবনবিমার প্রিমিয়ামের বাকি টাকা লগ্নি করুন পিপিএফে। স্ত্রীয়ের পিপিএফ রয়েছে। জিতেরও উচিত তা চালু করা। এতে করছাড়ের সুবিধা আছে। মেয়াদ শেষে হাতে আসা টাকাও করমুক্ত।

ফান্ডে টাকা ঢালুন

জিৎ জানতে চেয়েছেন, এসআইপি করবেন কি না। উত্তর, অবশ্যই হ্যাঁ।

জিতের প্রোফাইলের সবচেয়ে বড় সমস্যা, ঋণপত্র নির্ভর প্রকল্পেই তাঁর টাকা আটকে। তিনি হয়তো ভাবছেন এমআইএস, পিপিএফ, এনএসসি, স্থায়ী আমানত এবং জীবনবিমার মাধ্যমে তিনি অবসরের তহবিল গড়ে তুলবেন। কিন্তু তা হবে না। কারণ এই ধরনের প্রকল্পে সুরক্ষা বেশি। কিন্তু তেমনই সুদ কমার কারণে টাকা বাড়ার সম্ভাবনাও কমে আসছে। ফলে অন্যান্য খাতে টাকা রাখতে হবে।

জিতের বয়স ৪২ বছর। ৫০ বছরে অবসর নিতে চান। যদি ধরে নিই তিনি ওই বয়সে অবসর নেবেন, তা হলে তাঁর হাতে আর ৮ বছর রয়েছে। তাই মিউচুয়াল ফান্ডের কথা ভাবতেই হবে।

লগ্নি ছড়ানোর উপায়

• মাস গেলে সব খরচ ও সঞ্চয়ের পরেও জিতের হাতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা থাকে। তা এনএসসি-তে রেখে দেন। এত দিন এই প্রকল্পে ভাল সুদ মিলত। তাই লগ্নির মাধ্যম হিসেবে কদর ছিল। কিন্তু সুদ কমে আসায় আগামী দিনে এই টাকা দিয়ে মূল্যবৃদ্ধি সামলানো যাবে না। বরং যত এনএসসি ইতিমধ্যে করেছেন, তা চলুক। কিন্তু নতুন করে আর করবেন না। এনএসসি-র মেয়াদ শেষ হলে তা ডেট ফান্ডে রাখা যেতে পারে। সেই সময়ের সুদ দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

• হাতে থাকা টাকার মধ্যে ২৫ হাজার রাখুন এসআইপি মারফত মিউচুয়াল ফান্ডে। বাছুন লার্জ ক্যাপ, মিড ক্যাপ, ডাইভার্সিফায়েড ইকুইটি ফান্ড।

• বাকি ২৫ হাজার রাখুন ডেট ফান্ডে এসআইপি পদ্ধতিতে।

• স্থায়ী আমানতের টাকা দিয়ে ফ্ল্যাটের ঋণ শোধ করুন। গৃহঋণে করছাড় পাওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু যে টাকা সুদ হিসেবে দিতে হয়, তা যথেষ্ট বেশি। ফলে মাসিক কিস্তি বাঁচিয়ে সেই ১৫,৩০০ টাকা বরং ইকুইটি ফান্ডে এসআইপি করতে পারবেন।

• জীবনবিমা ও গৃহঋণ না-থাকলে করছাড়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য ভাবতে পারেন ইএলএসএস প্রকল্পের কথাও।

• ছেলেদের পড়াশোনা, বিয়ে, নিজের অবসর জীবনের জন্য সঞ্চয় এই ফান্ড থেকেই করতে হবে তাঁকে।

• বাবা-মায়ের এমআইএস চলুক। আপনার এখনই এমআইএসের দরকার নেই। মেয়াদ শেষ হলে, সেই টাকা রাখুন ডেট ফান্ডে। যত দিন না অবসর নিচ্ছেন, তত দিন এখান থেকে তহবিল বাড়ানোর সুযোগ থাকবে।

• পরিবারের সবাই মিলে মাসে ৮,০০০ টাকা রেকারিং করেন। জিৎ এই টাকা প্রতি বছর ছেলের স্কুলের টাকা মেটানোর মতো স্বল্প মেয়াদি লক্ষ্যের জন্য রাখতে পারেন। বাবা-মায়ের রেকারিং চলুক।

• জিৎ ও স্ত্রীয়ের ইপিএফ এবং পিপিএফের টাকা তাঁদের অবসর জীবনে কাজে লাগবে।

জমি বেচবেন না

জিতের নিজের ফ্ল্যাট ছাড়াও ৪ কাঠা জমি এবং অন্য একটি ৪ কাঠা জমির উপর পৈতৃক বাড়ি রয়েছে। জমির দাম কখনও কমবে না। বরং চাহিদা বাড়বে। তাই আইনি ঝামেলা না-থাকলে, জমি লগ্নির ভাল উপায় হতে পারে। ফলে এখনই তা বিক্রির কথা ভাববেন না।

স্বাস্থ্যবিমা চালু করুন

চাকরি ছাড়ার পরে জিতের যখন চিকিৎসা-বিমা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হবে, তখনই তাঁর তা থাকবে না। তাই নিজেদের জন্য স্বাস্থ্যবিমা কিনুন। শুরু করুন ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে। তার পরে অঙ্ক বাড়ান। বাবা-মায়ের জন্য এখন আর নতুন করে বিমা করানো সম্ভব নয়। তাই তাঁদের জন্য প্রতি মাসে সেভিংসে থাকা ৩০ হাজারের মধ্যে কিছু টাকা ক্যাশ ফান্ডে রাখুন। এ ভাবেই তহবিল গড়ুন।

শেষ পাত

৫০ বছরে যদি সত্যিই অবসর নিতে পারেন, তা হলে ওই সময়ে লগ্নি পরিকল্পনা ফের খতিয়ে দেখতে হবে।

লেখক: বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ

(অনুরোধ মেনে নাম পরিবর্তিত)

মতামত ব্যক্তিগত

পরামর্শের জন্য লিখুন: ‘বিষয়’, ব্যবসা বিভাগ, আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা, পিন-৭০০০০১। ই-মেল: bishoy@abp.in ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানাতে ভুলবেন না

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Higher Education Fund
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE