Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
প্রকল্প চালানোর খরচ বেশি

প্রধানমন্ত্রী জীবন জ্যোতি বিমা টিকিয়ে রাখা নিয়ে সংশয়

প্রধানমন্ত্রী জীবন জ্যোতি বিমা প্রকল্প শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবে কি না, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই সংশয় তৈরি হয়েছে বিভিন্ন মহলে। ওই বিমার যে-প্রিমিয়াম ঠিক করা হয়েছে, তা দিয়ে প্রকল্পটির খরচ মিটিয়ে লাভজনক ভাবে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৫ ০২:১৪
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রী জীবন জ্যোতি বিমা প্রকল্প শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবে কি না, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই সংশয় তৈরি হয়েছে বিভিন্ন মহলে।

ওই বিমার যে-প্রিমিয়াম ঠিক করা হয়েছে, তা দিয়ে প্রকল্পটির খরচ মিটিয়ে লাভজনক ভাবে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। প্রকল্পে বার্ষিক প্রিমিয়াম মাত্র ৩৩০ টাকা। প্রসঙ্গত, সাধারণ গরিব মানুষের জন্য সম্প্রতি যে-তিনটি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছেন, তার অন্যতম এই জীবন জ্যোতি বিমা প্রকল্প।

প্রকল্পটি যাতে লোকসানের মুখে না-পড়ে, তার জন্য ইতিমধ্যেই স্ট্যাম্প ডিউটি ছাড়ের আর্জি জানিয়েছে লাইফ ইনশিওরেন্স কাউন্সিল। পাশাপাশি, ওই প্রকল্পে রি-ইনশিওরেন্সের খরচ (ঝুঁকি এড়াতে বিমার যে-অংশের দায়িত্ব অন্য সংস্থার হাতে দেওয়া হয়) অর্ধেক করার আর্জি জানিয়েও আইআরডিএ-র কাছে প্রস্তাব দিয়েছে তারা। একই সঙ্গে জীবনবিমা প্রকল্প কেনার সময়ে আবেদনকারী যাতে বিমা সংস্থাকে কোনও রকম ভাবে প্রতারণা করতে না-পারেন, তার জন্য একটি ‘ফ্রড মনিটরিং মেক্যানিজম’ তৈরি করতেও উদ্যোগী হয়েছে জীবনবিমা কাউন্সিল।

শনিবার কলকাতায় ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত বিমা নিয়ে এক আলোচনাসভা শেষে লাইফ ইনশিওরেন্স কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল ভি মাণিকম বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ওই বিমা প্রকল্পটিকে লাভজনক করার উদ্দেশ্যেই আমরা স্ট্যাম্প ডিউটি এবং রি-ইনশিওরেন্সের হারে ছাড় চেয়েছি।’’

কীসের জন্য সংশয়? জীবন জ্যোতি বিমা ২ লক্ষ টাকার টার্ম প্রকল্প। বিক্রির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নির্দিষ্ট কিছু ব্যাঙ্ককে। প্রকল্পে গ্রাহক মারা গেলে তবেই তাঁর নমিনি বিমার টাকা পাবেন। মেয়াদপূর্তির পরে কোনও টাকা পাওয়া যাবে না। মাণিকম বলেন, ‘‘বার্ষিক ৩৩০ টাকার প্রিমিয়াম থেকে ৪১ টাকা কমিশন এবং পরিষেবা খরচ বাবদ যাবে ব্যাঙ্কের ঘরে। স্ট্যাম্প ডিউটি খাতে ৪০ টাকা যাবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের ঘরে। এ বার রি-ইনশিওরেন্সের জন্য লাগবে প্রায় ১৮০ টাকা। ৬০ টাকা পড়ে থাকবে সংশ্লিষ্ট বিমা সংস্থার ঘরে। ফলে প্রকল্পটিকে লাভজনক ভাবে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে বিমা সংস্থাগুলির সমস্যায় পড়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।’’

তাই প্রকল্পটিকে বাঁচাতে জীবনবিমা কাউন্সিল দুটি পদক্ষেপ করেছে বলে জানান মাণিকম। প্রথমত, রি-ইনশিওরেন্স বাবদ যে-টাকা লাগবে, তা যাতে অর্ধেক করা হয়, তার জন্য আইআরডিএ-র কাছে আর্জি জানিয়েছে কাউন্সিল। দ্বিতীয়ত, স্ট্যাম্প ডিউটি পুরোপুরি মকুব করার জন্য তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ করেছেন।

তবে স্ট্যাম্প ডিউটির ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে যে,
এটি রাজ্যের আওতায়। এ প্রসঙ্গে মাণিকম বলেন, ‘‘আমরা কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রককে বলেছি বিষয়টি নিয়ে রাজ্যগুলির সঙ্গে কথা বলতে।’’ অবশ্য জীবনবিমা কাউন্সিলের এই উদ্যোগ কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বিভিন্ন মহলে। তাদের যুক্তি: সরকারি প্রকল্পের স্বার্থে বেসরকারি রি-ইনশিওরেন্স সংস্থা ছাড় দিতে কতটা আগ্রহী হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। এ ব্যাপারে রাজনীতিও একটি অন্তরায় হতে পারে বলে আশঙ্কা কিছু মহলে। কারণ, স্ট্যাম্প ডিউটির টাকা ছেড়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্প সফল করতে সমস্ত রাজ্য সরকার কতটা এগিয়ে আসতে চাইবে, তা বলা মুশকিল।

এ দিকে সম্প্রতি বিমা আইন সংশোধনের ফলে নতুন যে-নিয়ম চালু হয়েছে, তাতে তিন বছর পলিসি চলার পরে গ্রাহক মারা গেলে কোনও অবস্থাতেই বিমার দাবি মেটাতে অস্বীকার করতে পারবে না সংস্থা।

যদি এটাও প্রমাণিত হয় যে, পলিসি কেনার সময়ে গ্রাহক তথ্য গোপন করে বিমা সংস্থাকে প্রতারণা করেছেন, সে ক্ষেত্রেও পুরো টাকা মেটাতে হবে। পুরনো নিয়মে এমনটা প্রমাণিত হলে বিমার দাবি বা ‘ক্লেম’ মেটাতে অস্বীকার করতে পারত সংস্থা।

মাণিকম বলেন, এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে তাঁরা প্রতারণার ক্ষেত্রে তা চিহ্নিত করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা চালু করতে উদ্যোগী হয়েছেন, যাতে পলিসি বিক্রির করার আগে এবং তার পর তিন বছরের মধ্যে বিষয়টি যাচাই করে নেওয়া যায়। এর জন্য আলাদা একটি সংস্থাকে নিয়োগ করা হবে, যারা বিমা সংস্থাকে সাহায্য করবে।

প্রধানমন্ত্রী জীবন জ্যোতি বিমা প্রকল্পের ক্ষেত্রেও যাতে কেউ প্রতারণা করে দু’বার টাকা তুলে নিতে না-পারে, তার জন্য ক্রেডিট ইনফরমেশন বুরো অব ইন্ডিয়া বা সিবিলের সঙ্গেও চুক্তি করবে জীবনবিমা কাউন্সিল। মাণিকম জানান, ‘‘চালু হওয়ার পরে এ যাবৎ ২ কোটি ৬৬ লক্ষ পলিসি বিক্রি হয়েছে। তার মধ্যে ইতিমধ্যেই ৪৫টি দাবি বা ক্লেম জমা পড়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

pradhanmantri jiban jyoti bima sustain sustain pjjb
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE