বৈঠকের পরে জেটলি।-পিটিআই
জিএসটি জমানায় করের হার নিয়ে ঐকমত্য অধরাই থেকে গেল। সেসের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না-হওয়ার জেরেই হার নিয়েও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারল না কেন্দ্র ও রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের নিয়ে গড়া জিএসটি পরিষদ।
এই পরিস্থিতিতে আগামী বছরের ১ এপ্রিল থেকে জিএসটি চালু করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। এ বার জিএসটি পরিষদের তিন দিনের বৈঠকে আজ দু’দিনের শেষেই ইতি টানা হয়েছে। করের হার, প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মতৈক্যে আসতে ৩ ও ৪ নভেম্বর ফের পরিষদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে ফয়সালা হলে, তারপর কেন্দ্রীয় জিএসটি ও আন্তঃ-রাজ্য জিএসটি বিল দু’টির খসড়া চূড়ান্ত করতে ৯ ও ১০ নভেম্বর আবার পরিষদের বৈঠক বসবে। জেটলির পরিকল্পনা ছিল, সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেই ওই দু’টি বিল পাশ করানো। ১৬ নভেম্বর থেকে এক মাসের অধিবেশন শুরু হচ্ছে। ফলে একটু এদিক ওদিক হলেই ১ এপ্রিলের লক্ষ্য ফসকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট মহলের।
মঙ্গলবার সর্বোচ্চ করের হার ২৬ শতাংশে বেঁধে রাখার সুপারিশ করে অরুণ জেটলির অর্থ মন্ত্রক। তার আওতায় বিলাসবহুল গাড়ি, সোডা-জাতীয় পানীয়, তামাক, পান মশলা, পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকর পণ্যেই এই হারের উপর বাড়তি সেস বসানোর কথা বলা হয়। সেই সেস থেকে আদায় করা অর্থেই রাজ্যগুলিকে ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দিতে চায় কেন্দ্র। এতেই কিছু রাজ্য আপত্তি তোলায় সেস নিয়ে চূড়ান্ত সহমত হয়নি। সেস বসবে কি বসবে না, তা ঠিক না-হওয়ায় করের হার নিয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। কারণ সেস বসানো হবে ধরে নিয়েই কেন্দ্র কর কাঠামোয় ৪টি হারের প্রস্তাব দেয়। সেস না-বসলে নতুন কাঠামো ঠিক করতে হবে।
সেসের পাশাপাশি করদাতাদের উপর নজরদারি নিয়েও নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। আগে ঠিক হয়েছিল, বছরে দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যবসায় শুধুমাত্র রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ থাকবে। ব্যবসার অঙ্ক তার বেশি হলে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়পক্ষই নজরদারি করবে। কিন্তু ১১ লক্ষ পরিষেবা করদাতার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ থাকবে। কারণ রাজ্যের পরিষেবা কর আদায়ের অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু এখন রাজ্যগুলির তরফে প্রশ্ন উঠেছে, রেস্তোরাঁ, নির্মাণ সংস্থার মতো ব্যবসার ক্ষেত্রে পণ্য ও পরিষেবা, দু’রকম করই আদায় করা হয়। অনেক ডিলার রয়েছেন, যাঁরা পণ্যের উপর ভ্যাট ও উৎপাদন শুল্কের পাশাপাশি পরিষেবা করও মেটান। ফলে এই ভাবে পণ্য ও পরিষেবা করের আড়াআড়ি বিভাজন করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে তাই ফের আলোচনা শুরু করতে হবে।
জেটলির অবশ্য দাবি, ‘‘সেস নিয়ে আমরা ঐকমত্যের প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছি। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না-হওয়ায় কর কাঠামো নিয়েও ফয়সালা হতে পারেনি। কারণ সেস বসবে কি না, সেটাই প্রথম প্রশ্ন। সেস না-বসলে, ক্ষতিপূরণ মেটানোর অর্থ কোথা থেকে আসবে, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে। তবে আমার আশা, আগামী বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে।’’ সকলেই অবশ্য এ বিষয়ে নিশ্চিত নন। কারণ ২৬% জিএসটি-র উপর ফের সেস বসানো নিয়ে শিল্পমহলেরও আপত্তি রয়েছে। সেস বসলেও সব পণ্যের উপর একই হারে তা বসবে না। সোডা জাতীয় পানীয় বা বিলাসবহুল গাড়ির উপরে সেসের হার পৃথক হতে পারে।
বাম শাসিত কেরলের অর্থমন্ত্রী টমাস আইজ্যাক ইতিমধ্যেই দাবি তুলেছেন, সেস না-বসিয়ে ভোগ্যপণ্যে ২৬ শতাংশের আরও বেশি হারে জিএসটি বসানো হোক। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রের বক্তব্য, ‘‘হার আরও বাড়ালে তাতে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। কংগ্রেস বা বিজেপি শাসিত কোনও রাজ্যই তা চাইছে না। আশ্চর্যজনক ভাবে বাম শাসিত রাজ্য সেই দাবি করেছে।’’ টমাসের যুক্তি, মোদী সরকার বিলাসবহুল পণ্য, তামাকে ৪০% হারে কর না-বসিয়ে অধিকাংশ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি, কনজিউমার্স ডিউরেবল্স)-এর উপর ২৬% কর বসাতে চাইছে। তা না-করে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের পণ্যগুলির উপরে কর কমানো উচিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy