নোট নাকচের জেরে বেসামাল সারা দেশ। তার আঁচ কম-বেশি লেগেছে প্রায় সকলেরই গায়ে। তবে নরেন্দ্র মোদী সরকারের ওই সিদ্ধান্তের ধাক্কায় সব থেকে বিপর্যস্ত গরিব, খেটে খাওয়া মানুষ। উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভোটের মুখে সেই ক্ষতে প্রলেপ দিতে বাজেটে সম্ভবত তাঁদের জন্য নতুন স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প ঘোষণা করতে চলেছে কেন্দ্র। সেই সঙ্গে অটল পেনশন যোজনায় নাম লেখানোর বয়সের সীমা আর পেনশনের সর্বোচ্চ অঙ্কও বাড়াতে পারে তারা।
অর্থ মন্ত্রক সূত্রে খবর, প্রথমে এই বিমার আওতায় আনা হবে আবাসন, সড়ক ইত্যাদি তৈরিতে নিযুক্ত শ্রমিক, বাড়ির পরিচারক-পরিচারিকাদের। এখন কারখানার কর্মী, সংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা এমপ্লয়িজ স্টেট ইনশিওরেন্সের (ইএসআই) সুবিধা পান। এ বার অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদেরও এর আওতায় আনতে চাইছে কেন্দ্র। সেই লক্ষ্যেই নতুন স্বাস্থ্যবিমা ঘোষণার এই পরিকল্পনা।
এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রথম ধাপে নির্মাণ-কর্মী, পরিচারক-পরিচারিকাদের এই স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। পরের ধাপে আসতে পারেন অটোরিকশ চালকরা।’’ তাঁর মতে, নোট বাতিলের জেরে সমাজের এই অংশের মানুষই সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছিলেন। সে কথা ভেবেই এই পরিকল্পনা। শ্রম মন্ত্রক প্রকল্পের খুঁটিনাটি দিকগুলি চূড়ান্ত করছে বলেও জানান তিনি।
দারিদ্রসীমার নীচে থাকা মানুষের জন্য রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা চালু হয়েছিল মনমোহন সিংহের জমানাতেই। কিন্তু ইএসআইয়ের সুবিধা সেখানে মেলে না। এ বার সেই খামতি পূরণ করতে চায় কেন্দ্র।
নতুন স্বাস্থ্যবিমা আনার পাশাপাশি খেটে খাওয়া মানুষের জন্য অল্প খরচায় পেনশনের সুবিধার পরিধিও সম্ভবত বাড়তে চলেছে বাজেটে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর নামে অটল পেনশন যোজনা আগেই চালু করেছে মোদী সরকার। সেখানে এখন ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী যে -কেউ নাম লেখাতে পারেন। প্রতি মাসে অল্প টাকা রেখে ৬০ বছরের পরে পেনশন পেতে পারেন ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।
সরকারি সূত্রে খবর, ওই প্রকল্পে এ বার ৪০-এর বদলে ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত নাম লেখানোর সুযোগ দেওয়া হবে। ডিসেম্বর অবধি প্রায় ৩৯ লক্ষ জন ওই পেনশন প্রকল্পে নাম লিখিয়েছেন। বয়স বাড়লে অনেক বেশি মানুষ এর আওতায় আসবেন বলে কেন্দ্রের ধারণা। তা ছাড়া, এখন ওই প্রকল্পে মাসে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত পেনশন মেলে। তা-ও বেড়ে হতে পারে ১০ হাজার টাকা, যাতে মধ্যবিত্তরাও উৎসাহিত হন।
উল্লেখ্য, বাজেটের আগে শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠকে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের জন্য ‘উপহার’ তুলে রাখার কথা বলেছিলেন। অর্থ মন্ত্রকের কর্তারাও বলছেন, ওই ক্ষেত্রের শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা, চাকরির মেয়াদ, ঠিক সময়ে বেতনের মতো প্রায় কোনও কিছুতেই নিশ্চয়তা নেই। আবার নোট বাতিলে তাঁরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সবচেয়ে বেশি। রাহুল গাঁধী তাই মোদী সরকারের গায়ে যতই স্যুট-বুটের সরকারের তকমা সাঁটার চেষ্টা করুন, এখন ভোটের মুখে নিজেদের গরিবদরদি প্রমাণে মরিয়া মোদী-জেটলি জুটি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy