Advertisement
১৮ মে ২০২৪

ভিসা বিলে কাঁপল তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প

দুশ্চিন্তার মেঘ জমা হচ্ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই। জল্পনা জোরালো হচ্ছিল আউটসোর্সিংয়ে কোপ পড়া নিয়ে। এ বার ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের শিরদাঁড়ায় আশঙ্কার ঠান্ডা স্রোত বইয়ে দিল মার্কিন প্রতিনিধিসভায় পেশ হওয়া ভিসা বিল।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৪৯
Share: Save:

দুশ্চিন্তার মেঘ জমা হচ্ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই। জল্পনা জোরালো হচ্ছিল আউটসোর্সিংয়ে কোপ পড়া নিয়ে। এ বার ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের শিরদাঁড়ায় আশঙ্কার ঠান্ডা স্রোত বইয়ে দিল মার্কিন প্রতিনিধিসভায় পেশ হওয়া ভিসা বিল। শেষমেশ তা আইন হলে, তাদের যথেষ্ট বেকায়দায় পড়তে হবে বলে মেনে নিচ্ছেন ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের কর্তারা। যদিও এখনই এ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি নয় টিসিএস, উইপ্রো, ইনফোসিসের মতো সংস্থাগুলি।

আতঙ্ক আরও বাড়িয়েছে ফাঁস হওয়া একটি সরকারি নির্দেশ। যাতে পড়া শেষে কাজ করার জন্য বিদেশি পড়ুয়াদের কিছু দিন মার্কিন মুলুকে থেকে যাওয়া বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, ওই এগ্‌জিকিউটিভ অর্ডারে সই করতে চলেছেন ট্রাম্প। তাতেও প্রমাদ গুনছে ভারত-সহ তাবড় বিশ্ব।

মার্কিন প্রতিনিধিসভায় নতুন ভিসা বিল (হাই-স্কিলড ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড ফেয়ারনেস অ্যাক্ট-২০১৭) পেশ করেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার জো লফগ্রেন। সেখানে রয়েছে, এ বার থেকে এইচ-১বি এবং এল-১ ভিসায় নিযুক্ত কর্মীদের বেতন দিতে হবে বছরে অন্তত ১ লক্ষ ৩০ হাজার ডলার। এখন যা সেই ১৯৮৯ সালে ঠিক হওয়া ৬০ হাজার ডলার। প্রশ্ন হল, কম খরচে দক্ষ কর্মী সরবরাহই যেখানে ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির বরাত পাওয়ার চাবিকাঠি, সেখানে এক লাফে ন্যূনতম বেতন দ্বিগুণেরও বেশি বাড়ার ধাক্কা তারা সামাল দিতে পারবে কি? এত বেশি বেতন দিতে হলে, মার্কিন সংস্থাগুলিরও ভারতীয় কর্মী নিতে আগ্রহ আর থাকবে?

এতেই শেষ নয়। বিলে বলা হয়েছে, কোনও কাজ দেওয়ার জন্য আগে ডাকতে হবে সম বা বেশি যোগ্যতার মার্কিন ভূমিপুত্রকে। ২০% এইচ-১বি ভিসা তুলে রাখতে হবে নতুন সংস্থা বা স্টার্ট-আপগুলির জন্য, যেখানে কর্মী সংখ্যা পঞ্চাশের মধ্যে। তা ছাড়া, এখন অনেক ক্ষেত্রে মার্কিন মুলুকে পড়াশোনা শেষে কাজের জন্য কিছু দিন থেকে যাওয়ার সুযোগ মেলে। নতুন সরকারি নির্দেশে জারি হলে ভাটা পড়বে তাতেও।

আর এতেই এ দিন বিপদঘণ্টি শুনেছে এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প। বরাতের কাজে মার্কিন মুলুকে কর্মী পাঠাতে এইচ-১বি এবং এল-১ ভিসা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে তারাই। আশঙ্কার আঁচে টিসিএস, ইনফোসিস-সহ প্রায় সব তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার শেয়ার দর পড়েছে হুড়মুড়িয়ে।

বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপের অবশ্য দাবি, দু’দেশের মধ্যে উচ্চস্তরে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ভারতের স্বার্থ ও উদ্বেগ— দু’ই জানানো হয়েছে মার্কিন প্রশাসনকে।

ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকদের যুক্তি, এইচ-১বি ভিসায় অন্য দেশ থেকে কর্মী আনার মূল উদ্দেশ্য দুনিয়া ঢুঁড়ে সেরা ও সবচেয়ে দক্ষ কর্মীদের মার্কিন মুলুকে নিয়ে আসা। বিশেষত সেই সমস্ত ক্ষেত্রে, যেখানে ওই মানের দক্ষতা আমেরিকায় অমিল। কিন্তু আদপে ওই ভিসায় আসা কর্মীরা কাজ ‘কেড়ে নিয়েছেন’ ভূমিপুত্রদের।

ভারতে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির সংগঠন ন্যাসকমের অবশ্য দাবি, এই ভিসা-নীতি এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকেই শুধু আঘাত করবে না, আমেরিকায় ওই ব্যবসা চালানোর খরচও অনেকখানি বাড়িয়ে দেবে।

ন্যাসকমের প্রেসিডেন্ট আর চন্দ্রশেখরের মতে, ২০১৮ সালের মধ্যে দশ লক্ষেরও বেশি তথ্যপ্রযুক্তির চাকরি মার্কিন মুলুকে খালি পড়ে থাকবে। কারণ, তা পূরণ করার মতো প্রার্থী সেখানে নেই। মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে প্রায় ৫০% বিদেশি পড়ুয়া। তাঁদের কাজে লাগাতেও এইচ-১বি ভিসা দরকার।

এইচ-১বি এবং এল-১ ভিসা নিয়ে কড়াকড়ির প্রতিশ্রুতি আজ অনেক দিন ধরেই মার্কিন মুলুকে ভোট-বাজারে মনজয়ের চেনা রাজনীতি। আগের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জমানাতেও ‘কাজ চুরি’র অভিযোগে ভারতের দিকে আঙুল উঠেছে। রাজনৈতিক ভাবে সওয়াল করা হয়েছে আউটসোর্সিংয়ের বিপক্ষে। প্রস্তাব উঠেছে ওই দুই ভিসা-ফি বৃদ্ধির। কিন্তু নিজের নির্বাচনী প্রচারে এই ‘জেহাদ’কেই আরও চড়া সুরে বেঁধে দেন ট্রাম্প। স্পষ্ট বলেছিলেন ক্ষমতায় এসেই আউটসোর্সিং বন্ধ করার কথা।

ভোটের আগে যা যা বলেছেন, এখন ট্রাম্প একের পর এক তা করছেনও। তাই আগে থেকেই এ নিয়ে রক্তচাপ বাড়তে শুরু করেছিল এ দেশের ১৫ হাজার কোটি ডলারের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের। ফেসবুক, গুগ্‌লের মতো মার্কিন সংস্থাও এর বিরোধিতায় সরব হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

IT Industry Visa bill
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE