দু’মাসে এই নিয়ে তিন বার। ঘরে-বাইরে প্রবল চাপের মুখে কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ড (ইপিএফ) নিয়ে ফের পিছু হটল মোদী সরকার। জানাল, অছি পরিষদের পরামর্শ মেনে ২০১৫-’১৬ সালের জন্য ইপিএফে দেওয়া হবে ৮.৮% সুদই। অর্থ মন্ত্রক তা ৮.৭% করার যে ঘোষণা সম্প্রতি করেছিল, তা ফিরিয়ে নিচ্ছে তারা। অনেকে অবশ্য বলছেন, বারবার এ ভাবে পিছু হটায় প্রশ্ন উঠছে সংস্কারের কড়া দাওয়াই প্রয়োগে মোদী সরকারের সাহস নিয়েই।
গত অর্থবর্ষের জন্য পিএফে ৮.৮% সুদ দেওয়ার সুপারিশ করেছিল অছি পরিষদ। কিন্তু তা খারিজ করে ওই সুদ ১০ বেসিস পয়েন্ট কমানোর কথা বলে অরুণ জেটলির অর্থ মন্ত্রক। জানায়, সুদ দাঁড়াবে ৮.৭%। তাদের দাবি ছিল, ৮.৮% সুদ দিতে গেলে তহবিলে টান পড়ার সম্ভাবনা।
কিন্তু ওই ঘোষণার পর থেকেই বিরোধিতায় সোচ্চার হয় বাম, কংগ্রেসি, এমনকী সঙ্ঘ পরিবারের শ্রমিক সংগঠন বিএমএস-ও। বিজেপির অনেক নেতাও এর বিরুদ্ধে ছিলেন। তাঁদের যুক্তি ছিল, এমন জনবিরোধী সিদ্ধান্তের মূল্য চোকাতে হবে পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্যের ভোটে। কারণ, স্বল্প সঞ্চয়ের পরে এ বার পিএফেও সুদ ছাঁটাইয়ের কড়া সমালোচনা করছেন বিরোধীরা। তাই সমস্যা আরও গাঢ় হওয়ার আগেই শুক্রবার নিজেদের সিদ্ধান্ত বাতিল করল অর্থ মন্ত্রক। শ্রমমন্ত্রী বন্দারু দত্তাত্রেয় বলেন, ‘‘অর্থমন্ত্রী ৮.৮% সুদ দিতে রাজি হওয়ায় আমি খুশি।’’
বাজেটে ইপিএফের টাকার একাংশ তোলার উপরে কর বসানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন জেটলি। কিন্তু বিরোধিতার মুখে এবং প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরতে হয় তাঁকে। এরপর চলতি মাসে পিএফের পুরো টাকা ৫৮ বছর বয়সের আগে তোলা যাবে না বলে ঘোষণা করেও পিছু হটতে হয় মোদী সরকারকে। এ বার সেই ধারা অব্যাহত থাকল সুদের ক্ষেত্রেও। অনেকের ধারণা, ঋণে সুদ কমানোর পথ প্রশস্ত করতেই ডাকঘর স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের পরে এ বার ইপিএফে সুদ ছাঁটতে চেষ্টা করেছিলেন জেটলি। সঙ্গে ছিল, তহবিলে টান পড়ার আশঙ্কা।
এ দিনের সিদ্ধান্তের পরে অবশ্য সংস্কারের ক্ষেত্রে মোদী সরকারের সাহস নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অনেক অর্থনীতিবিদের যুক্তি, সুদ কমানোর প্রতিক্রিয়া হবেই। কিন্তু তার জন্য যদি অর্থ মন্ত্রক সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসে, তা হলে সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। সিদ্ধান্তে অটল থাকতে না পারলে, অছি পরিষদের সুপারিশ খারিজ করারও দরকার ছিল না। ভোটের মরসুমে যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, তা-ও মাথায় রাখা উচিত ছিল। সুদ কমানোর ঘোষণার আগে আলোচনায় বসা উচিত ছিল শ্রম মন্ত্রক ও শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে। বোঝানো উচিত ছিল যে, মূল্যবৃদ্ধি ৫ শতাংশে নেমে আসায় ৮.৭% সুদই যথেষ্ট। বলার চেষ্টা করা উচিত ছিল, ১০ বেসিস পয়েন্ট সুদের ফারাকে আয়ের বিরাট হেরফের হবে না। কিন্তু এ সবের বদলে সরাসরি ঘোষণা করে ফের জেটলি হাত পোড়ালেন বলে তাঁদের দাবি।
অছি পরিষদের দুই সদস্য, ইনটাকের রাজ্য সভাপতি রমেন পান্ডে এবং এআইইউটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর সাহার দাবি, ‘‘কর্মী সংগঠনগুলির যৌথ আন্দোলনেই পিএফ সদস্যদের স্বার্থ রক্ষা করা গেল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy