Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
বাজারের বাইরে

নোট-কাণ্ডে ছন্দপতন লগ্নির দুনিয়ায়

হঠাৎ উষ্ণতা বাড়ায় শীতের আমেজটা যেমন মাটি হচ্ছে, তেমনই একটি সম্ভাবনাময় বছরে লগ্নির জগতে সব কিছুই নীচের দিকে নামায় বেশ দুশ্চিন্তায় লগ্নিকারীরা।পতন এখন সর্বত্রই। শেয়ার বাজার পড়ছে। নামছে সুদ।

অমিতাভ গুহ সরকার
শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:২৪
Share: Save:

হঠাৎ উষ্ণতা বাড়ায় শীতের আমেজটা যেমন মাটি হচ্ছে, তেমনই একটি সম্ভাবনাময় বছরে লগ্নির জগতে সব কিছুই নীচের দিকে নামায় বেশ দুশ্চিন্তায় লগ্নিকারীরা।

পতন এখন সর্বত্রই। শেয়ার বাজার পড়ছে। নামছে সুদ। কমছে মিউচুয়াল ফান্ডের ন্যাভ। গত সপ্তাহে সেনসেক্স নেমেছে প্রায় ৫০০ পয়েন্ট। কোনও মতে টিকে আছে ২৬ হাজারের ঘরে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ না-কমালেও জমায় সুদ কমাচ্ছে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক। গত সপ্তাহে সুদ কমেছে পিএফেও। সরকারি বন্ডের উপর প্রকৃত আয় বা ইল্ড যে-জায়গায় নেমেছে, তাতে নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে আর এক দফা সুদ কমার সম্ভাবনা প্রবল। এই পরিস্থিতিতে বেশ বিভ্রান্তির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন সাধারণ লগ্নিকারীরা। কোন পথে হাঁটবেন তা বুঝতে পারছেন না।

এই রকম কিন্তু হওয়ার কথা ছিল না। দু’বছর বাদে ভাল বৃষ্টি এবং অশোধিত তেলের দাম কম থাকায় ২০১৬ ছিল বেশ সম্ভাবনাময়। চাহিদা বা কেনাকাটায় খরচের উপর ভর করে ভাল রকম চাঙ্গা হওয়ার কথা ছিল অর্থনীতির। কিন্তু তা হয়নি। নোট বাতিলের কারণে হঠাৎই হয়েছে ছন্দপতন। মানুষ বাধ্য হয়েছেন কেনাকাটা কমাতে। প্রয়োজনীয় ছাড়া অন্য খরচে তাঁরা আগ্রহী নন। ফলে চাহিদা কমছে। মার খাচ্ছে শিল্প। কাজ হারাচ্ছেন বহু মানুষ। খোদ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নামিয়েছে জাতীয় আয় বৃদ্ধির সম্ভাব্য হার। এই সব প্রতিকূল শক্তির প্রভাব পড়ছে বাজারে। মোক্ষম সময়ে আমেরিকায় বেড়েছে সুদ। যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। ওই দেশে সুদ বাড়ায় ও ভারতে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি প্রতিকূল হওয়ায় এ দেশ থেকে লগ্নি গোটানোর পথে এগোচ্ছে অনেক বিদেশি সংস্থা।

ডিসেম্বর থেকে অবশ্য পরিস্থিতি কিছুটা শোধরানোর আভাস মিলছে। যত বাতিল নোট ব্যাঙ্কে জমা
পড়েছে, তার প্রায় অর্ধেক পরিমাণ নতুন নোট বাজারে ফিরেছে। ধীরে ধীরে প্রাণচঞ্চল হচ্ছে বাজার। শুক্রবার বাতিল নোট জমার শেষ দিন। বাজারের নজর থাকবে জমার পরিসংখ্যান ও কেন্দ্রের নতুন ঘোষণার উপর।

নোট বাতিলের কারণে এক দিকে যেমন বন্ড ও শেয়ার কেনা খাতে ব্যাঙ্কিং শিল্পে ট্রেজারি লাভ বাবদ আনুমানিক ৩৭ হাজার কোটি টাকার আয় বাড়ার সম্ভাবনা, অন্য দিকে তেমনই ধাক্কা লাগতে পারে ঋণ আদায়ে। জানুয়ারির মাঝামাঝি শুরু হবে তৃতীয় ত্রৈমাসিক ফল ঘোষণার পালা। এ বার যে ফল ভাল হবে না, তা ধরেই নেওয়া যায়। অর্থাৎ বাজারের এখনই চাঙ্গা হওয়ার সুযোগ কম। ফল বেশি খারাপ হলে হয়তো আরও পতনের সম্ভাবনা থাকবে। তবে আশা, অর্থবর্ষের শেষ তিন মাসে শিল্প ও বাজার ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরতে শুরু করবে। এরই মধ্যে পেশ হবে ২০১৭-’১৮ সালের কেন্দ্রীয় বাজেট, যার বড় প্রভাব থাকবে বাজারে। অর্থাৎ এখন অত্যন্ত সজাগ থাকতে হবে লগ্নিকারীদের। উচিত হবে প্রতিটি পতনে অল্প অল্প করে ভাল শেয়ার সংগ্রহ করা।

যাঁরা শেয়ারে লগ্নি করেন না, তাঁদের সমস্যাও গভীর। সুদ কমছে সর্বত্র। ফলে এঁরা বুঝতে পারছেন না কোথায় টাকা রেখে বেশি আয় পাওয়া যায়। বর্তমানে বাজারের বাইরে সঞ্চয়ের যে-সব সুযোগ রয়েছে, সঙ্গের সারণি থেকে তা দেখে নিতে পারেন।

কোম্পানি বন্ড: সুদ ব্যাঙ্কের তুলনায় ২/২.৫% বেশি। গত সপ্তাহে ভাল সাফল্য পেয়েছে রিলায়্যান্স হোম ফিনান্স। সর্বোচ্চ সুদ ছিল ৯.৪%। ৩ জানুয়ারি বাজারে আসবে শ্রেয়ী ইকুইপমেন্ট ফিনান্স-এর অরূপান্তরযোগ্য ডিবেঞ্চার ইস্যু। রেটিং ‘এএ’। সর্বোচ্চ সুদ ৯.৭৭%। আগামী দিনেও অন্যান্য ইস্যুতে রেটিং দেখে লগ্নি করা যেতে পারে

করযুক্ত সরকারি বন্ড ইস্যু: সুদের হার ৮%

করমুক্ত বন্ড: বাজার থেকে প্রিমিয়াম-সহ কিনলে প্রকৃত আয় বা ইল্ড প্রায় ৬.১৫%। উঁচু আয়ের মানুষের জন্য ভাল

ডেট ও লিক্যুইড ফান্ড: ৭ থেকে ৮.৫% পর্যন্ত আয়/বৃদ্ধি সম্ভব। ৩ বছর ধরে রাখলে করছা়ড়

গৃহঋণ সংস্থার জমা প্রকল্প: সুদ প্রায় ৮%। তবে করযোগ্য

সিনিয়র সিটিজেন্স সেভিংস স্কিম ও সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা: সুদ ব্যাঙ্কের তুলনায় অনেকটাই বেশি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

demonetisation investment world
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE