Advertisement
১৮ মে ২০২৪

মাসুল বৃদ্ধির ঘোষণা এ বার জিয়োর

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মাসুল বৃদ্ধির কথা জানানোর পাশাপাশি জিয়ো দাবি করেছে, দেশে ডেটা পরিষেবার এখন যে রমরমা, তার কৃতিত্ব তাদেরই।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:১২
Share: Save:

‘সস্তা’য় ঢালাও মোবাইল পরিষেবা পাওয়ার দিন কি তবে পুরোপুরি শেষ হতে চলল? ভোডাফোন আইডিয়া ও এয়ারটেল আগামী মাস থেকে মাসুল বাড়ানোর কথা জানিয়েছে সোমবার। মঙ্গলবার রিলায়্যান্স-জিয়োও একই পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিল। গ্রাহকদের প্রশ্ন, সস্তায় মোবাইল পরিষেবা পেয়ে ভাত-ডালের মতোই দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে ওঠা মুঠোফোন কতটা মহার্ঘ হবে? কিন্তু মাসুল কত বাড়বে, তা মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত খোলসা করেনি তিন সংস্থার কেউই।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মাসুল বৃদ্ধির কথা জানানোর পাশাপাশি জিয়ো দাবি করেছে, দেশে ডেটা পরিষেবার এখন যে রমরমা, তার কৃতিত্ব তাদেরই। জিয়োর আশ্বাস, ডেটা ব্যবহারের উপর যাতে প্রভাব না পড়ে সে দিকে লক্ষ্য রেখেই মাসুল বাড়াবে তারা। বাজারে জল্পনা, মাসুল ১০% বাড়তে পারে। তবে সব ধরনের মাসুলই বাড়বে, নাকি কিছু ক্ষেত্রে, তা নিয়ে চর্চা চলছে।

টেলিকম ব্যবসায় বাজারই দাম নির্ধারণ করলেও কোনও রকম অনিয়ম হচ্ছে কি না তা দেখে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ট্রাই। সংস্থার এক কর্তা জানিয়েছেন, তাঁরা মাসুল বৃদ্ধির প্রস্তাব পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।

বছর তিনেক আগে ‘নিখরচায়’ কথা বলা ও সস্তার ইন্টারনেট পরিষেবা এনে টেলিকম শিল্পে কার্যত সুনামি এনেছিল মুকেশ অম্বানীর সংস্থা জিয়ো। ব্যবসা বাঁচাতে সেই প্রবাহে পা মিলিয়েছিল বাকিরাও। তবে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করাচ্ছে, জিয়ো ব্যবসায়িক ভাবে যাত্রা শুরু করার পর পরই খুব কম টাকার ‘রিচার্জ প্যাক’গুলি উঠে যায়। পাশাপাশি সিমের সংযোগ চালু রাখতে প্রতি ২৮ দিনের জন্য ন্যূনতম মাসুল চালু করে অন্য সংস্থাগুলি।

ভোডাফোন-আইডিয়া এবং এয়ারটেলের অভিযোগ, জিয়োর ‘আগ্রাসী’ মাসুলের জেরে বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তারা। চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতির কথা বলেছে ভোডাফোন-আইডিয়া, ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতির কথা জানিয়েছে এয়ারটেল। জিয়ো অবশ্য লাভ করেছে ৯৯০ কোটি টাকা।

গ্রাহকদের একাংশের প্রশ্ন, এত দিন সস্তার পরিষেবার কথা বলে এখন কেন উল্টো পথে হাঁটছে সংস্থাগুলি? মোবাইল পরিষেবা নিয়ে তিতিবিরক্ত অনেকের আবার বক্তব্য, তাঁরা বাড়তি মাসুল দিতে রাজি। কিন্তু পরিষেবার উন্নতি হবে তো? কারণ কাউকে ফোন করলে সংযোগ হতে দেরি হওয়া, কথা বলার মাঝে সংযোগ কেটে যাওয়া (কল ড্রপ), এমনকি আগেকার আমলের ল্যান্ডলাইনের মতো মোবাইলেও ‘ক্রস কানেকশন’ হওয়ার অভিজ্ঞতা হচ্ছে অনেক গ্রাহকেরই। কারও আবার প্রশ্ন, সংস্থাগুলি ঘটা করে পরিকাঠামো নির্মাণ ও সম্প্রসারণের কথা ঘোষণা করার পরেও পরিষেবার হাল খারাপ হলে কী ভাবে ফের মাসুল বৃদ্ধির কথা বলছে?

টেলিকম শিল্পের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের অনেকে অবশ্য বলছেন, মাসুল বৃদ্ধির সম্ভাবনা ছিলই। কারণ বিশ্বে এখনও ভারতে মোবাইল পরিষেবা, বিশেষ করে ডেটার খরচ সবচেয়ে কম।

সস্তার পরিষেবা দিয়ে হয়তো নতুন গ্রাহক টানতে সংস্থাগুলি সফল হয়েছে, কিন্তু পরিষেবা দেওয়ার খরচের তুলনায় গ্রাহক পিছু আয় সে ভাবে বাড়েনি। অথচ এই শিল্পে বিপুল লগ্নির প্রয়োজন হয়। দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির জন্য নিয়মিত টাকা ঢালাও জরুরি।

এই অবস্থায় দু’টি ভিন্ন সংস্থার মধ্যে কল সংযোগ বাবদ যে ইন্টারকানেক্ট ইউসেজ চার্জ (আইইউসি) এখন একে অপরকে দেয়, সেটি পূর্ব পরিকল্পনা মতো আগামী জানুয়ারি থেকে তুলে দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে ফের আলোচনা শুরু হয়েছে। তা উঠে গেলে সংস্থাগুলির আয়-ব্যয়ের হিসেবেও তার প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি, লাইসেন্স ও স্পেকট্রাম ফি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়ের পরে পুরনো সংস্থাগুলির ঘাড়ে দীর্ঘদিনের বিপুল বকেয়া মেটানোর দায় চেপেছে। সব মিলিয়ে কেন্দ্রের কাছে আর্থিক সাহায্যের আর্জি জানিয়েছে জিয়ো ব্যতীত অন্য সংস্থাগুলি।

টেলিকম শিল্পের একটি সূত্রের খবর, তার আগেই তাদের দিক থেকে অন্তত আয় বাড়ানোর ভাবনা বাজারে কী প্রভাব ফেলে সেই জল মাপতে চাইছে সংস্থাগুলি। বস্তুত, মাসুল হার বৃদ্ধির প্রাথমিক ঘোষণার পরই এ দিন ভোডাফোন আইডিয়া ও এয়ারটেলের শেয়ার দরও বেড়ে যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Reliance JIO Airtel Vodafone TRAI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE