বৃদ্ধি তলানিতে। চাহিদায় ভাটা। রফতানি বাড়ন্ত। মুখ ফিরিয়ে বিদেশি লগ্নি। এমনকী যে কাজের সুযোগ তৈরির প্রতিশ্রুতিতে সওয়ার হয়ে ‘দিল্লি দখল’, তা-ও হচ্ছে না সে ভাবে। অর্থনীতির এই করুণ দশা নিয়ে চাপের মুখে এ বার প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদ তৈরিতে বাধ্য হলেন নরেন্দ্র মোদী।
সোমবার কেন্দ্র এই ঘোষণা করলেও, মোদী সরকারের মন্ত্রীরা অবশ্য দিনভর বোঝালেন, অর্থনীতি সামান্য ধাক্কা খেলেও মোটের উপর ঘাবড়ানোর মতো কিছু ঘটেনি। রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের কথায়, অর্থনীতি ছুটছে বুলেট ট্রেনের গতিতে। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির দাবি, এপ্রিল থেকে জুন— এই তিন মাস ছাড়া অর্থনীতি মোটামুটি ভালই চলেছে! এমনকী ওই সময়ে বৃদ্ধি মূলত জিএসটি চালুর জন্য সাময়িক ভাবে ঠোক্কর খেয়েছে বলেও জানালেন তিনি। আর যাঁর অর্থনীতি পরিচালনা নিয়ে এ দিন বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে প্রশংসার বাণ ডাকল, সেই মোদীর মুখে কিন্তু কার্যত কুলুপ। অর্থনীতি নিয়ে প্রায় কোনও কথাই খরচ করলেন না তিনি!
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোদী যতই মুখ না-খুলুন, অর্থনীতি নিয়ে সরকারের অন্দরেও যে ঠকঠকানি শুরু হয়েছে, তা ৫ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ গড়া থেকে স্পষ্ট। তাঁদের মতে, এত দিন প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি নৃপেন্দ্র মিশ্র, অতিরিক্ত প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পি কে মিশ্র, মোদীর বিশ্বস্ত আমলা হাসমুখ আঢিয়ার মতো হাতে গোনা কয়েক জন অর্থনীতি পরিচালনায় ছড়ি ঘুরিয়েছেন। কিন্তু এখন যে বিবর্ণ ছবি সামনে আসছে, তাতে আর ঝুঁকি নিতে চান না প্রধানমন্ত্রী। আর সেই কারণেই উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করলেন এক ঝাঁক অর্থনীতিবিদকে (রতন ওয়াটল অবশ্য অর্থসচিব ছিলেন)। যেমনটা মনমোহন সিংহের জমানায় হত।
অনেকে আবার বলছেন, এত দিন অর্থ মন্ত্রকে মোদীর বিশ্বস্ত আমলাদের হস্তক্ষেপে বিরক্ত ছিলেন জেটলি, মন্ত্রকের মুখ্য উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন। কিন্তু দেবরায়, ওয়াটলের সঙ্গে জেটলির সম্পর্ক ভাল। ফলে অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গে ভাল সমন্বয় হবে।
পরিষদ গঠনের দিনে বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠকে অবশ্য অর্থনীতি নিয়ে কার্যত রা কাড়েননি মোদী। ফলে প্রশ্ন উঠল, বিষয়টিকে কি তবে অবজ্ঞা করছেন তিনি? জেটলির জবাব, ‘‘মোদী কিছু বলেননি। কিন্তু ক’দিন ধরেই ব্যাখ্যা দিচ্ছি।’’ এ দিন মোদীর কর্মসূচির প্রশংসা করলেন অমিত শাহ থেকে নিতিন গডকড়ী সকলেই। কিন্তু অর্থনীতির ফ্যাকাসে ছবিতে রং ফেরাতে ফের মনমোহনী দাওয়াইয়েই ভরসা করতে হল মোদীকে।
নাগালে সুবিধা
• বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার মেঘ নেই। বরং বৃদ্ধির পালে হাওয়া ফিরছে বিভিন্ন দেশে।
• গত তিন বছর ধরেই অশোধিত তেলের দাম নীচের দিকে।
• ডলারের সাপেক্ষে টাকাও মোটামুটি স্থিতিশীল।
• বর্ষা পুরোপুরি মুখ ফেরায়নি। ফলে কৃষি উৎপাদন মন্দ নয়।
• মূল্যবৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণে।
• না-আসা নয় বিদেশি বিনিয়োগ।
• কর আদায়ের অঙ্ক ভাল।
• রেকর্ড উচ্চতায় বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার।
তবুও অস্বস্তি
• এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে ৫.৭ শতাংশে নেমে এসেছে বৃদ্ধি।
• দ্রুততম বৃদ্ধির দেশের তকমা হাতছাড়া। বরং এখন চিন্তা তার হার একেবারেই ঝিমিয়ে পড়া নিয়ে।
• শিল্প বৃদ্ধি তলানিতে (১.২%)।
• ভাল নয় পরিকাঠামো বৃদ্ধিও (১.২%)।
• শিল্প ঋণের চাহিদা নেই।
• বেসরকারি লগ্নি আসছে না।
• সে ভাবে তৈরি হচ্ছে না কাজের সুযোগও।
দাওয়াই পরিষদ
• নিজে বেহাল অর্থনীতি মেরামতের পরামর্শ পেতে পরিষদ গড়লেন প্রধানমন্ত্রী।
• চেয়ারম্যান বিবেক দেবরায়।
• সদস্য-সচিব রতন ওয়াটাল।
• আংশিক সময়ের তিন সদস্য সুরজিৎ ভাল্লা, রথীন রায় এবং অসীমা গয়াল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy