এক যাত্রায় পৃথক ফল।
কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে ১০০০ কোটি টাকা মূলধনের সরকারি সংস্থা ‘ভারতীয় মহিলা ব্যাঙ্ক’। কিন্তু মূলত মহিলা কর্মী নিয়ে এগিয়ে চলার সেই একই পথে হেঁটে ব্যবসার নতুন রাস্তা খুলে ফেলছে বেসরকারি বিমা সংস্থাগুলি। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মী দক্ষতা গড়ে তোলায় ফারাকই এই সম্পূর্ণ বিপরীত ছবির জন্য দায়ী বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট শিল্পমহল।
ওই ধরনের বেসরকারি বিমা সংস্থায় মহিলা এজেন্টের সংখ্যা ৩৫% বেড়েছে। আর মহিলা কর্মীদের কাঁধে ভর দিয়েই এক লাফে ৩৫ শতাংশের বেশি ব্যবসা বাড়িয়েছে বজাজ অ্যালায়াঞ্জ জেনারেল ইনশিওরেন্স ও রিলায়্যান্স লাইফ-এর মতো সংস্থা। অথচ মহিলা ব্যাঙ্ক মহিলা কর্মী দিয়ে ভরাতে পারেনি সব শূন্যপদ।
২০১৩ সালে ইউপিএ সরকারের আমলে তৈরি হয় মহিলা ব্যাঙ্ক। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেছিলেন, বহু ব্যাঙ্ক পরিচালনার দায়িত্বে মহিলা থাকলেও শুধু মেয়েদের জন্য পৃথক ব্যাঙ্ক নেই। প্রশ্ন তুলেছিলেন, এমন একটা ব্যাঙ্ক তৈরি করা যায় না, যেখানে মূলত মহিলারা ও মেয়েদের পরিচালিত ব্যবসা ঋণ পাবে? যারা মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর আয়ে সহায়তা করবে? যেখানে অধিকাংশ কর্মী হবেন মহিলা? এ সবের উত্তর হিসেবেই মহিলা ব্যাঙ্ক তৈরির সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়।
তবে ১০০০ কোটি টাকার সরকারি পুঁজি নিয়ে আপাত মসৃণ পথে হাঁটা শুরু করলেও শেষ রক্ষা হয়নি ব্যাঙ্কটির। ঢাকঢোল পিটিয়ে তৈরি আরও অনেক সরকারি প্রকল্পের পথে হেঁটেই অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়ে যায় মহিলা ব্যাঙ্ক। তিন বছর কাটতে না-কাটতেই স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে মিশে যাচ্ছে লোকসানের বোঝায় ক্রমশ নুয়ে পড়া এই ব্যাঙ্ক।
অথচ মহিলা কর্মীদের হাতিয়ার করেই জমকালো রঙে ছবি আঁকছে বেসরকারি বিমা শিল্প। যেমন, কলকাতার ৬২ বছরের উষ্ণা আঢ্যি, আমদাবাদের ক্রুশাঙ্গী শাহ বা দিল্লির শীতল গুপ্ত। সাধারণ মানের শিক্ষা ও প্রথাগত চাকরি না-করেও দিব্যি সংসার চালাচ্ছেন বিমা বেচে। বজাজ অ্যালায়াঞ্জ জেনারেল ইনশিওরেন্সের সিনিয়র প্রেসিডেন্ট অনামিকা রায় রাষ্ট্রবরের দাবি, সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বাড়িয়েই ব্যবসার নতুন এই দরজা খুলে ফেলা গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘নিজেদের জীবনের সমস্যা ও অভিজ্ঞতার পুঁজি থেকেই মহিলা এজেন্টরা সহজে গ্রাহকদের চাহিদা চিহ্নিত করতে পারেন।’’ ব্যবসার অঙ্কে যা স্পষ্ট হচ্ছে। ৪০% বাড়ি ও স্বাস্থ্য বিমার ব্যবসা মহিলা কর্মীদের হাত ধরেই আসছে।
শুধু নতুন ব্যবসাই নয়। মহিলা কর্মীদের হাত ধরে বাড়ছে বিমা পুনর্নবীকরণের সংখ্যাও। রিলায়্যান্স লাইফ কর্তৃপক্ষের দাবি, ৮০% পুনর্নবীকরণ বিমা শিল্পেই নজির তৈরি করছে। ৩৫% হারে বাড়ছে নতুন ব্যবসার পরিমাণ। প্রসঙ্গত, রিলায়্যান্স লাইফের ব্যবসার অংশীদার নিপ্পন লাইফ ইনশিওরেন্সের ৯০% এজেন্ট মহিলা।
লাভের টানেই মহিলা কর্মীদের কেন্দ্র করে তৈরি হচ্ছে সংস্থাগুলির সম্প্রসারণ পরিকল্পনা। বাজাজ অ্যালায়াঞ্জ-এর দাবি, বর্তমানে ৩০টি মহিলা শাখা ও ১০০০ মহিলা এজেন্ট রয়েছে। ২০১৪ সালে ১০ জন মহিলা কর্মী নিয়ে তৈরি মাত্র একটি শাখা ছিল। একই হারে মহিলা কর্মী বাড়াচ্ছে রিলায়্যান্স লাইফ। এখন যা ১৭০০। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, এ বছরেই এই সংখ্যা ৩০০০ করতে চায় সংস্থা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy