Advertisement
০৪ মে ২০২৪

অটুট বৃদ্ধির জাদু নিয়ে প্রশ্ন সর্বত্র

চব্বিশ ঘণ্টা আগে মোদী সরকারের পরিসংখ্যান দেখিয়েছে, ধাক্কা তো দূর অস্ত্‌, কার্যত নোট বাতিলের আঁচই লাগেনি অর্থনীতির গায়ে! আইএমএফ, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে শুরু করে প্রায় সমস্ত নামী প্রতিষ্ঠানের পূর্বাভাসকে তুড়ি মেরে অক্টোবর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকেও তা থেকে গিয়েছে ৭ শতাংশে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৭ ০২:১১
Share: Save:

চব্বিশ ঘণ্টা আগে মোদী সরকারের পরিসংখ্যান দেখিয়েছে, ধাক্কা তো দূর অস্ত্‌, কার্যত নোট বাতিলের আঁচই লাগেনি অর্থনীতির গায়ে! আইএমএফ, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে শুরু করে প্রায় সমস্ত নামী প্রতিষ্ঠানের পূর্বাভাসকে তুড়ি মেরে অক্টোবর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকেও তা থেকে গিয়েছে ৭ শতাংশে। কিন্তু কোন জাদুতে এমনটা সম্ভব হল, এখনও তার হদিস পাচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। প্রশ্ন তুলেছেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমও। পরিস্থিতি সামাল দিতে বুধবার মাঠে নামতে হয়েছে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। তাঁর দাবি, পরিসংখ্যানকে মিথ্যে বলে অপপ্রচার করছেন নিন্দুকরা।

এ দিন জেটলি বলেছেন, ‘‘নোট বাতিলের প্রভাব পড়েছে বলেই অক্টোবর-ডিসেম্বরে বৃদ্ধি ৭ শতাংশে নেমেছে। এখন নতুন নোট যথেষ্ট এসে গিয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে বৃদ্ধির হার আরও বাড়বে।’’ কিন্তু বিরোধী থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ— অনেকেই মনে করছেন সংশয়ের অবকাশ থেকেই যাচ্ছে ওই ৭ শতাংশের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে।

চিদম্বরমের কথায়, ‘‘বৃদ্ধির হার দেখে অবাক হয়েছি। আইএমএফ, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতো প্রতিষ্ঠানের পূর্বাভাসের সঙ্গে এর কোনও মিল নেই। অথচ অতীতে এরা ঠিক পূর্বাভাসই দিয়েছে।’’ আবার আগামী দিনে বৃদ্ধির হার আরও চাঙ্গা হওয়া নিয়ে জেটলির দাবিকে খণ্ডন করে প্রাক্তন মুখ্য পরিসংখ্যানবিদ প্রণব সেনের বক্তব্য, অক্টোবর-ডিসেম্বরের পরিসংখ্যানে নোট নাকচের প্রভাব যদি না-ও পড়ে থাকে, জানুয়ারি-মার্চে তা প্রকট হবেই। তখন বৃদ্ধির হার ৬% বা তার কম হতে পারে।

প্রণববাবুর মতে, নোট নাকচের পরেও হয়তো সংস্থাগুলি কারখানা থেকে শো-রুমে পণ্য পাঠিয়েছে। তা বিক্রি হয়নি। কিন্তু এ বার শো-রুম বা গুদামে পণ্য জমতে থাকলে, কারখানায় উৎপাদন কমানো হবে। ফলে জানুয়ারি-মার্চে সেই ধাক্কা টের পাওয়া যাবে। কোটক-মহীন্দ্রার অর্থনীতিবিদ উপাসনা ভরদ্বাজের মতে, নোটবন্দির ধাক্কা সবচেয়ে বেশি লেগেছিল অসংগঠিত ক্ষেত্রে। কিন্তু সেই ছবি পরিসংখ্যানে ফুটে ওঠেনি।

শুধু তা-ই নয়। অর্থনীতির কোনও যুক্তি দিয়েই বৃদ্ধির হার অটুট থাকার জাদুকে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন, নোট বাতিলের পরে লোকের হাতে নগদ টাকা ছিল না। ফলে কেনাকাটা কমে গিয়েছিল। দোকান-বাজারে পণ্য তখন জমে থেকেছে। অথচ সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, নোট নাকচ সত্ত্বেও ব্যক্তিগত খরচ বেড়েছে ১০%!

‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ নিয়ে বিস্তর ঢাক পেটানোর পরেও শিল্পমহল লগ্নির ঝুলি হাতে এখনও এগিয়ে আসেনি। তার উপর কেনাকাটা কমলে, তার সঙ্গে কারখানায় উৎপাদন কমবে, তা-ই স্বাভাবিক। অথচ সেই নোট বাতিলের সময়েই নতুন লগ্নি ৩.৫% বেড়েছে বলে পরিসংখ্যানে দাবি।

মঙ্গলবার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অর্থনীতিবিদ বলেছিলেন, ‘‘এমন চললে চিনের মতো ভারতের পরিসংখ্যানও আর কেউ বিশ্বাস করবেন না।’’ জে পি মর্গ্যানের অর্থনীতিবিদ সাজ্জিদ চিনয়ের মতে, ‘‘আগের পূর্বাভাসের সঙ্গে এ দিনেরটি একেবারে মিলে যাওয়াও বিশ্বাস করা শক্ত।’’ উল্লেখ্য, জানুয়ারিতে পরিসংখ্যান মন্ত্রকের পূর্বাভাস ছিল, চলতি অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার হবে ৭.১%। কিন্তু নোট বাতিলের প্রভাব ওই হিসেবে ধরা হয়নি। আর এ বার সেই হিসেব কষেও পূর্বাভাসকে সেই ৭.১% রেখেছে কেন্দ্র। অর্থাৎ, বৃদ্ধিতে টোলই ফেলেনি নোট নাকচ!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Economy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE