মোদী সরকারের নোট বাতিলের ধাক্কায় ফের মুখ পুড়ল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের।
নিজেদের ইতিহাসে সম্ভবত এই প্রথম বার আয়-ব্যয়ের হিসেবই প্রকাশ করতে পারল না শীর্ষ ব্যাঙ্ক। ৩০ জুন যে সপ্তাহ শেষ হয়েছে, তার আয়-ব্যয়ের হিসেব (ব্যালান্স শিট) তারা তৈরি করে উঠতে পারেনি। কারণ, বাতিল পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট নিজেদের ঘরে কতখানি ফিরেছে, সে হিসেব এখনও কষে উঠতে পারেনি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এমনকী বাজারে কত টাকা আছে, শেষ দু’টি হিসেবে তা-ও জানাতে পারেনি তারা।
বিরোধীরা এ জন্য অভিযোগের আঙুল তুলেছেন মোদী সরকারের দিকে। তাঁদের যুক্তি, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতো নামী ও ঐতিহ্যশালী প্রতিষ্ঠানকে হাসির খোরাক করে তুলছে কেন্দ্র। তাঁদের মতে, শীর্ষ ব্যাঙ্ক-কে কার্যত হাতের পুতুল করে ইচ্ছেমাফিক নোট নাকচের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা। আর তার জেরেই বারবার অপদস্থ হতে হচ্ছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও তার গভর্নর উর্জিত পটেলকে। কিছু দিন আগে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সামনে নোট বাতিল নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে যেতে বাধ্য হন বলে অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধীরা।
বাজারে যত নোট থাকে, সেগুলি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দায় হিসেবে আয়-ব্যয়ের খাতায় লেখা হয়। কারণ, যাঁর হাতে ১০০ টাকার নোট রয়েছে, সেটি নিয়ে গেলে তাঁকে ১০০ টাকা ‘মেটানোর’ প্রতিশ্রুতি দেন গভর্নর। ফলে সেই হিসেব অস্পষ্ট হলে, আয়-ব্যয়ের অঙ্ক পাওয়াও শক্ত।
গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পটেল জানান, এখনও নোট গোনা শেষ হয়নি। আরও যন্ত্র দরকার। তা কিনতে নাকি বরাত দেওয়া হয়েছে। যা শুনে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের কটাক্ষ, ‘‘নোট বাতিলের এত মাস পরে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এখন নোট গোনার যন্ত্র কিনছে! তারা কি ভাড়া করার কথা শোনেনি?’’
৮ নভেম্বর রাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন নোট বাতিল করেন, তখন ওই দুই নোটে বাজারে ১৫.৪৪ লক্ষ কোটি টাকা ছিল। পুরনো পাঁচশো টাকার নোট সংখ্যা ছিল ১৭১৬.৫ কোটি। ৬৮৫.৮ কোটি ছিল হাজারের নোট। কিন্তু তার কতটা শেষমেশ ফেরত এসেছে, সে তথ্য প্রকাশ করেনি অর্থ মন্ত্রক বা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
বিরোধীদের সন্দেহ, আসলে সরকারি হিসেবের থেকেও বেশি নোট ফেরত এসেছে। উর্জিত নিজে বলেছেন, নেপালে যে-সব বাতিল ভারতীয় নোট ছিল, তা এখনও ফেরত আসেনি। তা ছাড়া, সমবায় ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরে বদলে দেওয়া নোটের সবটা জমা পড়েনি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঘরে।
নোট নাকচের পরে প্রথম দু’সপ্তাহে কত নোট জমা পড়ছে, সেই তথ্য প্রকাশ করেছিল শীর্ষ ব্যাঙ্ক। তার পরেই বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘আরবিআই সম্মানিত ও বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠান ছিল। মোদী সরকারের আমলে তারা ব্যালান্স শিট প্রকাশ করতে পারছে না!’’
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিজস্ব বছর শুরু হয় ১ জুলাই থেকে। শেষ হয় ৩০ জুন। সেই ৩০ জুন শেষ হওয়া সপ্তাহের আয়-ব্যয়ের হিসেব প্রকাশ করতে না-পারা আরও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সূত্রের অবশ্য দাবি, অগস্টের বার্ষিক রিপোর্টে এই সব তথ্য থাকবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy