Advertisement
২১ মে ২০২৪

স্ট্যাম্প ডিউটি কমানোর পক্ষে শীর্ষ ব্যাঙ্ক

এ বার নির্মাণ শিল্পের সুরে সুর মিলিয়ে সব রাজ্যকেই স্ট্যাম্প ডিউটির হার কমাতে বলছে খোদ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। বুধবার ঋণনীতি পেশ করতে গিয়ে এই পরামর্শ দিয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

গার্গী গুহঠাকুরতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৫০
Share: Save:

২০০৯-এর মন্দা, নোট সঙ্কট থেকে জিএসটি। একের পর এক ধাক্কায় রাজ্যের নির্মাণ শিল্পকে বরাবর বৈতরণী পার করিয়েছে কম দামি আবাসনই। কিন্তু এই বাজারের বাড়বাড়ন্তের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে চড়া স্ট্যাম্প ডিউটি। পশ্চিমবঙ্গে এই কাঁটার ধার সবচেয়ে বেশি বলে অভিযোগ।

এ বার নির্মাণ শিল্পের সুরে সুর মিলিয়ে সব রাজ্যকেই স্ট্যাম্প ডিউটির হার কমাতে বলছে খোদ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। বুধবার ঋণনীতি পেশ করতে গিয়ে এই পরামর্শ দিয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। এই দফায় সুদ কমানোর পথে না-হাঁটায় নির্মাণ শিল্প কিছুটা হতাশ হলেও এই প্রস্তাবে তারা খুশি। তারা মনে করছে, বিভিন্ন রাজ্য স্ট্যাম্প ডিউটি ছাঁটলে কম দামি আবাসনের ক্রেতাদের সামনে নিজেদের মাথার উপর ছাদ জোটানোর সুযোগ বাড়বে। তার কারণ বাড়ি কেনার খরচ কমবে। সাধারণ ভাবে সব ক্রেতারই এর জেরে সুবিধা হবে।

নির্মাণ সংস্থাগুলির সংগঠন ক্রে‌ডাই এই নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে সরকারি কোষাগারে রাজস্বের এই অন্যতম মূল উৎস ছাঁটতে কতগুলি রাজ্য উদ্যোগী হবে, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে ক্রেডাই।

এ রাজ্যে স্ট্যাম্প ডিউটি ও রেজিস্ট্রেশন মিলিয়ে খরচ ৮.১ শতাংশ। ক্রেডাই সূত্রের খবর, এই একই করের হার গুজরাতে ৩.৫ শতাংশ, মহারাষ্ট্রে ৫ শতাংশ। দিল্লি ও রাষ্ট্রীয় রাজধানী সংলগ্ন অঞ্চলে ৬ শতাংশ। মহিলাদের জন্য এখানে আরও কমে তা এখন ৪ শতাংশ।

ক্রেডাইয়ের অন্যতম কর্তা হর্ষবর্ধন পাটোডিয়া বলেন, ‘‘এই চড়া হারে স্ট্যাম্প ডিউটি দিতে গিয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ক্রেতারা। কারণ এই বাড়তি খরচ গৃহঋণের হিসেবে ধরা থাকে না। ফলে বাড়ি হাতে পাওয়ার শেষ ধাপে স্ট্যাম্প ডিউটি ও রেজিস্ট্রেশন খরচের চাপ তাঁদের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।’’ এই করের বোঝা সাধ্য আর সাধ পূরণের মধ্যে ফারাক তৈরি করে দিচ্ছে বলে মনে করছে নির্মাণ শিল্পমহল।

কোথায় কত

• পশ্চিমবঙ্গ ৮.১%

• গুজরাত ৩.৫%

• মহারাষ্ট্র ৫%

• দিল্লি ও সংলগ্ন অঞ্চল ৬%

তথ্যসূত্র: ক্রেডাই

অথচ এ রাজ্যে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত আবাসনের বাজার বরাবর নির্মাণ সংস্থাগুলির আস্থা কেড়েছে। যে -ছবি কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্যেও ফুটে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় এখনও পর্যন্ত যত বাড়ি তৈরি ছাড়পত্র পেয়েছে, তার ৮২ শতাংশই দশটি রাজ্যের দখলে। এই দশের মধ্যে উঠে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ। ৫ লক্ষের বেশি বাড়ির ছাড়পত্র পেয়ে প্রথম স্থানে অন্ধ্রপ্রদেশ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে তামিলনাড়ু ও মধ্যপ্রদেশ। তার পরে রয়েছে কর্নাটক ও গুজরাত। গুজরাতের সঙ্গে মাত্র ৩০ হাজারের ফারাক পশ্চিমবঙ্গের।

বিশেষজ্ঞ সংস্থা নাইট ফ্র্যাঙ্কের অর্থনীতিবিদ স্যমন্তক দাসের মতে, স্ট্যাম্প ডিউটি কম থাকলে এই তালিকায় রাজ্য আরও উপরে ঠাঁই পেতে পারত। সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় প্রায় ১ লক্ষ ৪৫ হাজার বাড়ি তৈরির ছাড়পত্র পেয়েছে রাজ্য। এই প্রকল্পের খাতে কেন্দ্রের আর্থিক সহায়তা বাবদ রাজ্যে এসেছে দু’হাজার কোটি টাকার বেশি।

চলতি বছরের প্রথম ছ’মাসে বিক্রির হার ১১ শতাংশ কমেছে। তবে এরই মধ্যে হাল ধরেছে কম দামি আবাসন। মোট নতুন প্রকল্পের ৭১ শতাংশই কম দামি আবাসনের দখলে। আর পণ্য-পরিষেবা কর বা জিএসটি চালু হওয়ার পরে সেই বাজার টিকিয়ে রাখতে স্ট্যাম্প ডিউটি কমানো আরও জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। ক্রেডাই বেঙ্গলের সদস্য অরিহান্ত পারেখ বলেন, ‘‘জিএসটি ও স্ট্যাম্প ডিউটি মিলিয়ে ২০ শতাংশের বেশি কর দিতে হচ্ছে। সাধারণ ক্রেতার পক্ষে এই বাড়তি চাপ নেওয়া খুবই কঠিন। তাই চাহিদা থাকলেও বাজার তেমন উঠছে না।’’

তথ্য পরিসংখ্যান বলছে কলকাতায় বছরে তৈরি হয় মধ্যবিত্ত দের জন্য ১৫ থেকে ১৭ হাজার ফ্ল্যাট। ক্রেডাই বেঙ্গলের প্রেসিডেন্ট নন্দু বেলানির দাবি, চলতি বছরে এই সংখ্যাটা দাঁড়াবে প্রায় ২২ হাজার। চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়েই এই জোগান বাড়ছে বলে তিনি মনে করেন। কিন্তু এই চাহিদার সদ্ব্যবহার করতে চাই কর ছাঁটাই। ক্রেডাইয়ের দাবি, বাজারের আয়তন বড় হলে রাজ্যের কোষাগারও বেশি করে ভর্তি হবে। সে ক্ষেত্রে কর কমালেও রাজস্বে টান পড়বে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE