Advertisement
১৭ মে ২০২৪

ন্যানো না থাক, কাজ আছে সানন্দের কারখানায়

দিক নির্দেশের তীর চিহ্ন দিয়ে লেখা ‘ন্যানো প্ল্যান্ট’। অর্থাৎ, ন্যানো কারখানা। সিঙ্গুরে জমিজটের জেরে ২০০৮ সালে যা উঠে এসেছিল গুজরাতের সানন্দ-এ।

কর্মীরা কাজে ব্যস্ত। কেউ ‘বডি শপে’ তো কেউ যন্ত্রাংশ জোড়়ার অ্যাসেম্বলিতে। সানন্দতে।

কর্মীরা কাজে ব্যস্ত। কেউ ‘বডি শপে’ তো কেউ যন্ত্রাংশ জোড়়ার অ্যাসেম্বলিতে। সানন্দতে।

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত
সানন্দ শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৮ ০৩:০২
Share: Save:

আমদাবাদ ছাড়িয়ে ৩৫ কিলোমিটার এগোতেই সানন্দ-ভিরামগাঁ সড়়কের বাঁ দিকে জ্বলজ্বল করছে সাইনবোর্ড। দিক নির্দেশের তীর চিহ্ন দিয়ে লেখা ‘ন্যানো প্ল্যান্ট’। অর্থাৎ, ন্যানো কারখানা। সিঙ্গুরে জমিজটের জেরে ২০০৮ সালে যা উঠে এসেছিল গুজরাতের সানন্দ-এ।

এই প্রথম সাংবাদিকদের জন্য কারখানাটির দরজা খুলল টাটা মোটরস। উঁকি দেওয়ার ঔৎসুক্য ছিলই। একে তো রাজ্য থেকে উঠে এসে এখানে। তার উপর ন্যানো সে ভাবে বাজারে চলেনি। এখন তৈরি নামমাত্র। দেখার আগ্রহ ছিল, ন্যানো কারখানা টাটাদের অন্যান্য গাড়ির আঁতুড় হল কী ভাবে? সত্যিই কি সুযোগ হারিয়েছে সিঙ্গুর?

ঘণ্টা কয়েকের সফরে লাভ-ক্ষতির হিসেব কষা শক্ত। কিন্তু অন্তত দেখা গেল, ন্যানো না চললেও কারখানা চলছে দিব্যি। সংস্থার দাবি, তাদের ৬০ শতাংশেরও বেশি যাত্রী গাড়ি এখন তৈরি হচ্ছে এখানেই।

মঙ্গলবার সকালে দেখা গেল, কর্মীরা কাজে ব্যস্ত। কেউ ‘বডি শপে’ তো কেউ যন্ত্রাংশ জোড়়ার অ্যাসেম্বলিতে। দু’টি শিফটে কাজ। চাহিদার দৌড়ে পিছিয়ে পড়া ন্যানোর থেকে ঢের বেশি তৈরি হয় টিয়াগো ও টিগর। মূলত যে দুই মডেলকে হাতিয়ার করে দেশে যাত্রী গাড়ির বাজারে ঘুরে দাঁড়িয়েছে টাটারা।

আরও পড়ুন: হোগলায় ঢেকে জমি, চাষ দূর, সিঙ্গুরকে চেনাই দায়

সানন্দ-এ টাটা

• কারখানা চালু হয় ২০১০ সালের জুন মাসে।

• সংস্থার দাবি, সবচেয়ে কম সময় ও লগ্নিতে নির্মিত গাড়ি কারখানা।

• জমি মোট ১,১০০ একর। ৭৪১ একর টাটা মোটরসের। সহযোগী যন্ত্রাংশ সংস্থার জন্য ৩৫৯ একর।

• ন্যানো সে ভাবে চলেনি। এখন তৈরি খুবই কম। কিন্তু টাটাদের অন্যান্য গাড়ি (টিগর, টিয়াগো) তৈরি হয় এখানেই।

• দিনে দু’শিফটে মোট ৪০০টি।

• কারখানায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মিলিয়ে কর্মসংস্থান ৪,৫০০।

• অনুসারী শিল্পের ৩০টি কারখানায় কাজ আরও ২,২০০ জনের।

• ভবিষ্যতের বিভিন্ন নতুন মডেলের গাড়ি তৈরির বন্দোবস্ত। ব্যবস্থা বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরিরও।

• টাটাদের পরে গুজরাতে পা রেখেছে ফোর্ড ইন্ডিয়া, মারুতি-সুজুকি, হোন্ডার মতো সংস্থা।

• ওই শিল্পের অন্যতম পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠেছে পশ্চিমি রাজ্যটি।

কর্তারা জানাচ্ছেন, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মিলিয়ে কারখানায় কর্মী ৪,৫০০ জন। তার প্রায় ৬০% সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা। গড়় বয়স ২৬ বছর। ৩০টি সহযোগী যন্ত্রাংশ সংস্থায় আরও প্রায় ২,২০০ জন কর্মরত। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, যন্ত্রাংশ শিল্প বাদ দিয়ে শুধু মূল কারখানায় লগ্নির অঙ্ক প্রায় ২,৫০০ কোটি টাকা।

আমদাবাদ থেকে সানন্দ ৩৫ কিলোমিটার মতো। কলকাতা থেকে সিঙ্গুর প্রায় ৪০ কিলোমিটার। সিঙ্গুরেও জমি নেওয়ার সময়ে স্থানীয়দের কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল টাটারা। অনেককে পাঠানো হয়েছিল প্রশিক্ষণ নিতে। তা হলে এ ভাবে তাঁরাও সিঙ্গুরে কারখানায় কাজ পেতেন কি? উত্তর আর জানা যাবে না কোনও দিনই।

আরও পড়ুন: টাটা ন্যানোর মৃত্যুঘণ্টা: স্বপ্নের অপমৃত্যু না ভবিতব্য?

সিঙ্গুরে টাটারা ৯৯৭ একরে কারখানা গড়তে গিয়েছিল। এখানে ১,১০০ একর। সামনে চওড়া রাস্তা। পরে কারখানা সম্প্রসারণের জন্য বন্দোবস্ত। এই কারখানাকে যাত্রী গাড়ির ব্যবসায় ঘুরে দাঁড়়ানোর ‘কর্নার স্টোন’ বলছেন প্রেসিডেন্ট ময়াঙ্ক পারিক। সিঙ্গুর অধ্যায়ের সময়ে তিনি ছিলেন মারুতি-সুজুকির অন্যতম কর্তা। ‘দল বদলের’ অনুভূতি কেমন? তাঁর জবাব, ‘‘তখন ছিলাম দেশের বৃহত্তম গাড়ি সংস্থায়। আর এখানে আঁকার জন্য পড়ে পুরো ক্যানভাস।’’

টাটাদের হাত ধরে লগ্নির ছবি এঁকেছে গুজরাতও। এক দশক আগে টাটারা যখন নতুন ঘর খুঁজছেন, গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরাসরি রতন টাটাকে এসএমএসে লগ্নির আহ্বান জানান। দিন তিনেকের মধ্যে সানন্দে জায়গা মিলেছিল। বাকিটা ইতিহাস।

কথায় বলে, লগ্নির টানে লগ্নি আসে। বড় শিল্পের টানে আসে অনুসারী শিল্প। দু’ই সত্যি হতে দেখেছে পশ্চিমি রাজ্যটি। টাটা মোটরসের টানে এসেছে যন্ত্রাংশ শিল্পের বিভিন্ন সংস্থা। একে একে গুজরাতে পা রেখেছে ফোর্ড ইন্ডিয়া, মারুতি-সুজুকি, হোন্ডা। অনেকে বলেন, সিঙ্গুরে ন্যানো প্রকল্প ভেস্তে না গেলেও নাকি ঠিক এমনটাই হতে পারত? সত্যি? বলা কঠিন।

মাঝে ন্যানো নিয়ে নানা বিতর্ক হয়েছে। কখনও কর্মী বিক্ষোভ। কখনও বাজারে তার মুখ থুবড়ে পড়া। সানন্দে কারখানা গড়ায় আর্থিক সুবিধা পাওয়া নিয়ে টাটাদের কটাক্ষ করেছেন রাহুল গাঁধী। টাটা গোষ্ঠী থেকে বিতাড়িত চেয়ারম্যান সাইরাস মিস্ত্রিও তোপ দেগেছেন ন্যানো প্রকল্পের যৌক্তিকতা নিয়ে। কিন্তু সব কিছুর পরেও সানন্দে কাজের সুযোগ তৈরি আটকায়নি।

গাড়ি থেকে বাড়ি, সোনা থেকে শেয়ার, বিমা থেকে মিউচুয়াল ফান্ড - বিনিয়োগের সাতকাহন আমাদের ব্যবসা বিভাগে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sanand Tata motors Nano
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE