জল সার দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু গোড়া কিছুতেই শক্ত হচ্ছে না। লকলকিয়ে বাড়ছে বটে, তবে মাঝেমধ্যেই দমকা হাওয়ায় ডগা ভেঙে যাচ্ছে। সেনসেক্স-নিফটির অবস্থা অনেকটা এই রকমই। সম্প্রতি বেশ কিছু সদর্থক খবর পেয়েছিল ভারতীয় বাজার। কিন্তু ওঠার মুখেই বাধা এল জাপানের অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে। আগেও কয়েক বার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিকূল হাওয়া সেনসেক্স-নিফটির ডগা ভেঙেছে। ফলে নির্দিষ্ট গণ্ডি ছেড়ে বাজার কিছুতেই উপরে উঠতে পারছে না।
সম্প্রতি ২৬,৫০০ পেরোনোর পরে সেনসেক্স ফের নেমেছে ২৫ হাজারের কাছাকাছি। দেশের ভেতরে বেশ কিছু ভাল খবরের মধ্যে যে-বিষয়টি বাজারকে কিছুটা দোলাচলে রেখেছে, তা হল বর্ষা। আবহাওয়া দফতর বলছে, বর্ষা এ বার স্বাভাবিকের থেকে ভাল হবে। ভারতীয় অর্থনীতির কাছে এটি অত্যন্ত সদর্থক খবর। কিন্তু বর্ষা আসার আগেই দেশের বেশ কিছু অঞ্চল পুড়ে খাক হয়ে গেল। ফলে বর্ষা ভাল হবে সেই আশায় বাজার যতটা উঠেছিল, তাতে খানিকটা জল ঢেলেছে বর্তমান খরা পরিস্থিতি।
তবে দেশ-বি দেশ থেকে যে-সব তথ্য বাজারকে আশা জোগাচ্ছে, তা মোটামুটি এই রকম—
১) মার্চে ভারতের পরিকাঠামো শিল্পগুলির গড় উৎপাদন বেড়েছে ৬.৪%, যা ১৬ মাসের মধ্যে সব থেকে বেশি। উৎপাদন ভাল রকম বেড়েছে সিমেন্ট, সার, বিদ্যুৎ, ইস্পাত তেল শোধন ইত্যাদি শিল্পে, যা সার্বিক ভাবে শিল্প পুনরুজ্জীবনের ইঙ্গিত দেয়।
২) এপ্রিলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমিয়েছে। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে থাকলে ভবিষ্যতে সুদ আরও কমবে। এতেও শিল্প চাঙ্গা হবে। গত সপ্তাহে গৃহঋণে সুদ কমানোর কথা ঘোষণা করেছে স্টেট ব্যাঙ্ক।
৩) এপ্রিলে দেশে আকর্ষণীয় হারে বেড়েছে গাড়ি বিক্রি। যার মধ্যে আছে মারুতি-সুজুকি, হুন্ডাই, মহীন্দ্রা, রেনো, ফোর্ড ইত্যাদি সংস্থা। ভাল রকম বেড়েছে মোটর বাইক বিক্রিও। গাড়ি শিল্পে উৎপাদন এবং বিক্রি বৃদ্ধি অর্থনীতির একটি সুলক্ষণ। এর ফলে চাহিদা বাড়ে অন্য অনেক শিল্পে।
৪) এখনও পর্যন্ত প্রকাশিত চতুর্থ তথা বার্ষিক কোম্পানি ফলাফলকে খুব খারাপ বলা যাবে না। বেশ কিছু নামী সংস্থা ভাল ফল প্রকাশ করেছে। এদের মধ্যে আছে রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ টিসিএস, ইনফোসিস, এইচডিএফসি, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, ইন্ডাসইন্ড ব্যাঙ্ক, ইয়েস ব্যাঙ্ক, গ্রাসিম, মারুতি-সজুকি।
৫) আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, এ বার বর্ষা ভাল হবে। আকাশ সদয় হলে কৃষি এবং শিল্প উভয়ই উপকৃত হবে। চাঙ্গা থাকবে বাজার।
৬) বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম বাড়ছে। এর ফলে তেল-নির্ভর অর্থনীতিগুলি কিছুটা চাঙ্গা হলে তা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ভাল।
৭) চাঙ্গা হতে শুরু করেছে ইউরোপ। ফলে ওই সব দেশে পণ্য ও পরিষেবার চাহিদা বাড়বে। উপকৃত হবে ভারতীয় রফতানি শিল্প।
৮) গত তিন মাসে বাড়ি বিক্রি ফের বেড়েছে কিছু শহরে। এটিও অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরার অন্যতম লক্ষণ। এর ফলে উপকৃত হবে ইস্পাত, সিমেন্ট, বৈদ্যুতিক পণ্য, রং-সহ বেশ কিছু শিল্প।
৯) গত কয়েক দফায় মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক সুদ বাড়ায়নি। আশু তা বাড়ানোর সম্ভাবনাও কম। ফলে ফের ভারতমুখী হয়েছে বিদেশি লগ্নিকারীরা। ভারতের শেয়ার বাজার মহলেরও ভয় কেটেছে
অর্থাৎ ভাল খবরের ঘাটতি নেই। ভবিষ্যতে বাজার ভাল হবে এই আশায় মূলত এসআইপির পথ ধরে লগ্নি বাড়ছে মিউচুয়াল ফান্ডে। এরই মধ্যে চাঙ্গা হয়েছে নতুন ইস্যুর বাজার। ভাল লাভের সন্ধান পাচ্ছেন নতুন ইস্যুর সফল লগ্নিকারীরা। লাভের খাতায় ফিরেছেন সোনায় লগ্নিকারীরাও। পাকা সোনা ফের ৩০,৫০০ টাকায়। ফলে অনেকেরই লোকসান প্রায় শূন্যে নেমেছে। বেড়েছে অন্যদের লাভের মাত্রা। ব্যাঙ্ক ও অন্যত্র সুদ কমায় আশা করা যায় লগ্নিযোগ্য তহবিলের একাংশ শেয়ার বাজারে আসবে। আগামী দিনে বাজার চাঙ্গা থাকলে মানুষ বেশি ভরসা পাবে।
২০১৫-’১৬ অর্থবর্ষে আয়কর দফতর ২.১০ কোটি রিফান্ড (মোট মূল্য ১.২২ লক্ষ কোটি টাকা) পাঠিয়েছে আয়করদাতাদের অ্যাকাউন্টে। মোট রিফান্ডের ৯৪% গিয়েছে অনলাইনে ফাইল করা রিটার্ন বাবদ অ্যাকাউন্টে। প্রায় ৪০ দিন হল আগের অর্থবর্ষ শেষ হয়েছে। এ বার একটু উদ্যোগী হতে হবে আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য। শুরু করতে হবে ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষে কর সাশ্রয়ের লক্ষ্যে লগ্নি।
এ দিকে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এপ্রিলে রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমালেও বহু ব্যাঙ্কই জমায় নতুন করে সুদ ছাঁটেনি। সুদ কমলেই আর্থিক উন্নয়ন গতি পাবে, এ কথা যদিও মানতে নারাজ শীর্ষ ব্যাঙ্ক-কর্তা রঘুরাম রাজন। তাঁর মতে, জমায় সুদ কমলে ওই খাতে আয় একই রাখতে মানুষ খরচ কমিয়ে বেশি সঞ্চয় করবেন। এতে পণ্যের চাহিদা কমবে। শ্লথ হবে উন্নয়ন। ব্যাপারটি ভেবে দেখার মতো!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy