Advertisement
২১ মে ২০২৪
দাওয়াইয়ে সাড়া দেয়নি বাজার

আরও ত্রাণের অপেক্ষায় লগ্নিকারীরা

গত মঙ্গলবার এক ধাক্কায় ৭৭০ পয়েন্ট খুইয়ে বসে সেনসেক্স।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

অমিতাভ গুহ সরকার
শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:২৬
Share: Save:

গাড়ি, ভোগ্যপণ্য, উৎপাদন, পরিকাঠামো— অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ বহু ক্ষেত্রেই এখন দুশ্চিন্তার ছায়া। এই সবের মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন একগুচ্ছ দাওয়াই ঘোষণা করেছেন ঠিকই, কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই পদক্ষেপে পুরোপুরি ভরসা রাখতে পারেনি বাজার। এই অবস্থায় কেন্দ্রের কাছে জিএসটি হ্রাস-সহ আরও বেশ কিছু পদক্ষেপের আশায় রয়েছে শিল্প মহল। অদূর ভবিষ্যতে বাজার কী ভাবে সাড়া দেবে, তা কিছুটা নির্ভর করছে এর উপরে।

গত মঙ্গলবার এক ধাক্কায় ৭৭০ পয়েন্ট খুইয়ে বসে সেনসেক্স। যা ১১ মাসে এক দিনে সবচেয়ে বড় পতন। ডলারের নিরিখে বিপুল পতন হয় টাকারও। ১ ডলারের দাম ৯৭ পয়সা বেড়ে হয় ৭২.৩৯ টাকা। শুক্রবার সেনসেক্স ৩৩৭ পয়েন্ট উঠলেও, তাকে বাজারের ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ ভাবলে ভুল হবে। এমনকি, ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণের সিদ্ধান্তও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শেয়ারে প্রাণ ফেরাতে ব্যর্থ হয়েছে। ডলারের দাম বাড়ায় কিছুটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছে একমাত্র তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি।

আসলে যে সমস্ত কারণের জন্য বাজারের পরিস্থিতি এতটা খারাপ, তা কিন্তু রাতারাতি কাটার নয়। টানা প্রায় এক বছর ধরে কমে চলেছে গাড়ি বিক্রি। অগস্টের ছবিটাও একই। বৃহত্তম গাড়ি নির্মাতা মারুতি-সুজুকি, টাটা মোটরস, হুন্ডাই-সহ অধিকাংশ সংস্থার বিক্রি বিপুল কমেছে। চাহিদা এতটা নামায় উৎপাদন ছাঁটতে বাধ্য হয়েছে অনেক সংস্থা। মারুতি তাদের দু’টি কারখানায় দু’দিন উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। বিরূপ প্রভাব পড়ছে যন্ত্রাংশ, ইস্পাত, টায়ার, রং শিল্পেও। কাজ হারাচ্ছেন বহু মানুষ। এই অবস্থায় গাড়ি নির্মাতারা কেন্দ্রের কাছে জিএসটি কমানোর আবেদন জানিয়েছে। আয় কমলেও সরকারকে এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এখানেই শেষ নয়। অগস্টে কারখানায় উৎপাদন নেমেছে ১৫ মাসের মধ্যে সবচেয়ে নীচে। জুলাইয়ে দেশের আটটি প্রধান পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ২.১%। নির্মাণ শিল্পের অবস্থাও বেহাল। সেখানেও কাজ হারানোর আশঙ্কায় বহু মানুষ।

অর্থনীতির ছবি


• বৃদ্ধির হার ৫%
(এপ্রিল-জুন)
• গাড়ি বিক্রি (-) ৩০%
(অগস্ট)
• প্রধান আটটি ২.১%
পরিকাঠামো ক্ষেত্র

শিল্পের দাবি


• গাড়ির জিএসটি ২৮% থেকে কমানো।
• সিমেন্টের জিএসটি ২৮% কমিয়ে ১৮% করা।
• মোট ১ লক্ষ কোটি টাকার ত্রাণ প্রকল্প।

আশার দিক


• প্রথম ইনিংসে ঘাটতির পরে দ্বিতীয় ইনিংসে দেশ জুড়ে বর্ষার দাপট।
• এপ্রিল-জুন প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি ২৮% বৃদ্ধি।

সব মিলিয়ে যা পরিস্থিতি, তাতে শেয়ার বাজার এখন যে জায়গায় দাঁড়িয়ে, সেখানেই যদি থাকতে পারে সেটাই স্বস্তির। ভাল খবর একটাই। দেরিয়ে এলেও বর্ষা মোটামুটি পুষিয়ে দিয়েছে আগের ঘাটতি। চাষবাস ভাল হলে গ্রামীণ অর্থনীতি মুখ তুলবে।

ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণের উপর সুদের হার রেপো রেটের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এতে মার্জিন কমবে ব্যাঙ্কের। পাশাপাশি অনেক ব্যাঙ্কই এখন জমার উপরে সুদ কমানোর পথে হাঁটছে। শেয়ার বাজার ঝুঁকে থাকায় ঝিমিয়ে আছে মিউচুয়াল ফান্ডের ন্যাভও। ফলে মানুষ বুঝতে পারছেন না এই পরিস্থিতিতে কোথায় লগ্নি করা ঠিক হবে। সুদিন চলছে একমাত্র সোনায় লগ্নিতে। তবে সোনার দাম যে জায়গায় পৌঁছচ্ছে, তাতে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। পরে সময় মতো লগ্নি করতে হবে অর্থনীতির চাকা ঘোরার মুখে।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nirmala Sitharaman Automobiles Infrastructure
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE