নিজের ও সরকারের বার্তা আম-দরবারে পৌঁছে দিতে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দ ফেসবুক আর টুইটার। সিআইআই, ফিকি-সহ প্রায় সমস্ত বণিকসভার মঞ্চে রাজ্যকে তুলে ধরতে শিল্প তথা অর্থমন্ত্রীর হাতিয়ার ই-গভর্ন্যান্স। অথচ নেট দুনিয়ায় পুরোদস্তুর পা চালাতে কারা কতটা তৈরি, তা মাপতে গিয়ে সেই পশ্চিমবঙ্গেরই কি না ঠাঁই হল একেবারে শেষ সারিতে! ২১টি বড় রাজ্যের মধ্যে ১৭ নম্বরে।
নেটের সুবিধা কাজে লাগাতে কে কতটা তৈরি (ইন্টারনেট রেডি), সম্প্রতি তা খতিয়ে দেখে রিপোর্ট তৈরি করেছে ইন্টারনেট অ্যান্ড মোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (আইএএমএআই)। দেখা হয়েছে, কোথায় নেট-পরিকাঠামো কেমন। যাচাই করা হয়েছে ইন্টারনেট মারফত সরকারি পরিষেবা, নেট-জগতে নাগরিকদের অংশগ্রহণ, তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা (যেমন ই-কমার্স) ব্যবহারের মতো বিষয়। মূলত এই সমস্ত মাপকাঠির ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে রাজ্যগুলির ই-প্রস্তুতির সূচক। সেখানে শীর্ষে মহারাষ্ট্র। তারপরে যথাক্রমে কর্নাটক, গুজরাত, তেলঙ্গানা ও তামিলনাড়ু। আর প্রথম পাঁচ বা দশে ঠাঁই পাওয়া দূর অস্ত্, পশ্চিমবঙ্গের স্থান ১৭ নম্বরে।
সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, শিল্প বা ব্যবসা-পত্তর বেশি থাকলে সাধারণত নেট সংযোগের চাহিদা বাড়ে। এই যোগটুকু বাদ দিলে নেট-পরিকাঠামো কেমন হবে, তার দায় রাজ্যের উপর বর্তায় না। ই-কমার্সে কেনাকাটা কেমন হবে, সেখানেও রাজ্যের হাত নেই। কিন্তু সমস্যা হল, নেটের জন্য তৈরি থাকার দৌড়ে এতখানি পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে আসছে গর্বের ই-গভর্ন্যান্সে সার্বিক সাফল্যের অভাব।
সেই ই-গভর্ন্যান্স, যাতে এই রাজ্য এক অর্থে ভগীরথ। বিনিয়োগে লাল ফিতের ফাঁস কাটতে যেখানে ওই পরিষেবার সফল ব্যবহার নিয়ে প্রায়শই কৃতিত্ব দাবি করেন অর্থমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীও। কিছু দিন আগেও অর্থ তথা তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী অমিত মিত্র দাবি করেছিলেন, সম্প্রতি ই-গভর্ন্যান্সের প্রতিযোগিতায় গুজরাত, মহারাষ্ট্রকে হারিয়ে প্রথম স্থানে উঠে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ। কিন্তু তথ্য পরিসংখ্যান বলছে বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে এই দাবির সঙ্গতি নেই। ই-গভর্ন্যান্সের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত কেন্দ্রের খতিয়ানে রাজ্যের স্থান এমনিতেই তালিকার নীচের দিকে। ওই ভুলের মাসুল গুনে নেট-প্রস্তুতিতেও পিছিয়ে পড়েছে তারা।
কর আদায়ে রাজ্যের অনলাইন পরিকাঠামো যে-নজরকাড়া, তা মানেন অনেকেই। কিন্তু সরকারি শংসাপত্র পাওয়ায় ই-গভর্ন্যান্স পরিষেবার জনপ্রিয়তা তেমন নয়। সরকারের অন্দরেই ক্ষোভ, প্রযুক্তির ব্যবহার হয়তো হয়েছে। কিন্তু সার্বিক ভাবে ই-গভর্ন্যান্সে মসৃণ পরিষেবা দিতে সমস্ত দফতরের যে-সমন্বয় জরুরি, অভার তারই। অনেক সময়ে শুধু করতে হবে বলেই প্রকল্প চালু হয়েছে। আমজনতা কতটা পরিষেবা পাচ্ছেন, তার উপর নজরদারি হয়নি।
সেই কারণে বেহাল দশার ছবি উঠে এসেছে ‘ই তাল’-এ। সারা দেশে বিভিন্ন ই-গভর্ন্যান্স প্রকল্পের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন (ই-ট্রানজাকশন) কেমন হচ্ছে, তার হিসেব রাখে কেন্দ্রের ওয়েব পোর্টাল ই-তাল। সেখানকার তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে ই-গভর্ন্যান্সে প্রতি হাজার মানুষ গড়ে আর্থিক লেনদেন করেন মাত্র ১১২.২০টি। যেখানে কেরলে তা ১,১২২টির বেশি। তেলঙ্গানায় তিন হাজার ছুঁইছুঁই। ন’হাজারের বেশি গোয়ায়। গুজরাত আটশোর উপরে। তুলনায় পিছিয়ে থাকা মেঘালয় এবং ছত্তীসগঢ়ে যথাক্রমে ১৮৪.২০ ও ৪৭৭.২০। পশ্চিমবঙ্গের দ্বিগুণেরও বেশি জনসংখ্যার উত্তরপ্রদেশেও ওই সংখ্যা ১৪৮.৩০। তেলঙ্গানায় মোট ই-লেনদেনের সংখ্যা ১০ কোটির বেশি। অনেক পিছন থেকে উঠে আসা মধ্যপ্রদেশে ৬ কোটির উপরে। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে এ পর্যন্ত মাত্র ১ কোটি ই-ট্রানজাকশন হয়েছে। উল্লেখ্য, এই সমস্ত পরিসংখ্যানেরই সময়কাল চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির দশ তারিখ পর্যন্ত। পশ্চিমবঙ্গ পিছিয়ে ই-গভর্ন্যান্স মাধ্যমে দেওয়া পরিষেবার সংখ্যাতেও। অন্ধ্র, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ যেখানে যথাক্রমে ১৮২, ১৫১ ও ১২৯টি পরিষেবা দেয়, সেখানে রাজ্যে তা ৭০।
আর এই পিছিয়ে পড়ার মাসুল গুনেই এ বার নেট-প্রস্তুতিতেও শেষ সারিতে বসতে হচ্ছে রাজ্যকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy