Advertisement
১১ মে ২০২৪

অল্প বয়সেই ঝুঁকি নেওয়া ভাল

এখনই ফ্ল্যাট কিনে ইএমআই-এর চাপে পড়বেন কেন? তার আগে বরং লম্বা মেয়াদে বড় তহবিল গড়তে শেয়ার কেনার কথা ভাবুন। জানাচ্ছেন, শৈবাল বিশ্বাসসঞ্চয় কত, এখন কতটা জমাতে পারছেন, আগামী দিনে কী ভাবে কতটা জমানো উচিত ও আদপে কতটা জমানো সম্ভব— এই গোটা চারেক শর্ত বিচার করেই আর্থিক পরিকল্পনা রূপায়ণের রাস্তা তৈরি করতে হয়।

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৩৪
Share: Save:

পরিচিতি: মনোজিৎ (২৯)
স্ত্রী (২৯) মা (৫৮)

কী করেন: সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত কলেজের সহ-অধ্যাপক

লক্ষ্য: কলকাতায় ফ্ল্যাট কেনা। অবসরের সঞ্চয়। উপযুক্ত স্বাস্থ্যবিমা

মনোজিৎ সঞ্চয়ের তালিকা দিয়েছেন। কিন্তু কত সম্পদ তৈরি হয়েছে, তার হিসেব দেননি। সমস্যা হল, সম্পদের খতিয়ান না-পেলে কতখানি মজবুত আর্থিক জমির উপর দাঁড়িয়ে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করতে হবে, সেটা স্পষ্ট হয় না। লক্ষ্য পূরণের জন্য বাস্তবসম্মত পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে যা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, সঞ্চয় কত, এখন কতটা জমাতে পারছেন, আগামী দিনে কী ভাবে কতটা জমানো উচিত ও আদপে কতটা জমানো সম্ভব— এই গোটা চারেক শর্ত বিচার করেই আর্থিক পরিকল্পনা রূপায়ণের রাস্তা তৈরি করতে হয়। এখানে মনোজিতের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই যতটা সম্ভব পথ দেখানোর চেষ্টা করছি।

আরও ভাল স্বাস্থ্যবিমা

সাধারণ মানুষকে এখন সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় রাখে অসুখ-বিসুখ, ডাক্তারের খরচ। যা প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে। সুতরাং আচমকা বড় রোগে পড়ে সর্বস্ব খোয়ানোর থেকে আগেই স্বাস্থ্যবিমা করে সেই খরচ সামাল দেওয়ার ব্যবস্থা করা বুদ্ধিমানের কাজ। মনোজিৎ প্রয়োজনের এই জায়গাটা বুঝেছেন বলেই বর্তমান বিমাটি নিয়ে সন্তুষ্ট নন। আমি বলব, বিমামূল্য বাড়াতে গিয়ে বেশি প্রিমিয়াম গুনতে হলেও ভাল। না-হলে যখন টাকার দরকার পড়বে, তখন পস্তানো ছাড়া কোনও পথ থাকবে না। মনোজিতের ২ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবিমা রয়েছে। যার আওতায় স্ত্রী, মা, শ্বশুর, শাশুড়ি ও তিনি নিজে আছেন। আমার মতে—

• বর্তমান পলিসিটিকে তিন ভাগে ভাগ করুন। একটি নিজের ও স্ত্রীয়ের ফ্যামিলি ফ্লোটার। দ্বিতীয়টি মায়ের জন্য। তৃতীয়টি শ্বশুর ও শাশুড়ির জন্য আর একটি ফ্যামিলি ফ্লোটার।

• বিমার টাকার অঙ্ক বাড়াতে অন্য কোনও সংস্থা থেকে টপ আপ করান।

খেয়াল রাখুন, টপ আপ পলিসির বিমামূল্য যেন যথেষ্ট বেশি হয়। কারণ বয়স বাড়লে ও রোগে কাবু হলে ফের টপ আপের সুযোগ আর না-ও মিলতে পারে। মিললেও খরচ পড়বে বিপুল।

• যেটা আছে ও যেটা কিনবেন, দু’টো প্রকল্পেই সাবলিমিট আছে কি না দেখুন। সাবলিমিট থাকা প্রকল্প কিনবেন না।

অনেক পলিসিতে ডাক্তার, ঘর -ভাড়া, পরীক্ষা-নিরীক্ষার মতো নানা খাতে বা নানা রোগের জন্য নির্দিষ্ট অঙ্ক বরাদ্দ থাকে। যেমন ধরুন, কিডনির পাথর অপারেশন করাতে হয়তো ১ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু এই রোগের জন্য পলিসিতে সর্বোচ্চ ৪০,০০০ টাকার সাবলিমিট ধার্য রয়েছে। সে ক্ষেত্রে বাকি ৬০,০০০ বিমা থেকে পাবেন না।

বর্তমান প্রকল্পে সাবলিমিট থাকলে অন্য কোনও বিমা সংস্থায় তা সরাতে পারেন। একে বলে পলিসি পোর্টিং। নিয়ম অনুযায়ী, এ জন্য আগের সংস্থার আওতায় থাকাকালীন পলিসিটিতে যে যে সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, নতুন সংস্থাতেও অবিকল তা-ই পাবেন। চিকিৎসার খরচ হিসেবে যতটা টাকা পাওয়ার কথা, তা-ও দাবি করতে পারবেন। অবশ্য চাইলে
পুরনোটি পাল্টে বর্তমান সংস্থারই নতুন কোনও পলিসি কিনতে পারেন। যেটি হবে একটি কম্পোজিট পলিসি, মানে কোনও সাবলিমিট থাকবে না।

• এ ছাড়াও দেখে নিন নিম্নলিখিত সুবিধা আছে কি না— কোনও কারণে মাঝপথে প্রিমিয়াম দিতে না-পারলে, পরে ফের সেই পলিসি নতুন করে চালুর সুবিধা। মাসে মাসে নিখরচায় চেক-আপের ব্যবস্থা। হাসপাতালে ভর্তির আগে ও পরের খরচ পাওয়া ইত্যাদি। লক্ষ্য হতে হবে, বইতে পারার মতো খরচে প্রকল্প থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা আদায় করে নেওয়া।

অবসরের তহবিল

মনোজিৎ মিউচুয়াল ফান্ডে এসআইপি করেন, শেয়ারে টাকা ঢেলে অবসরের তহবিল তৈরি করতে চান।

লম্বা মেয়াদের লক্ষ্য পূরণের জন্য বড় অঙ্কের টাকা জমাতে শেয়ারে লগ্নির জুড়ি নেই। বিশেষত জিনিসপত্রের দাম যেখানে লাফিয়ে বাড়ছে ও যত দিন যাচ্ছে কমছে সুদ। শেয়ারে ঝুঁকি বেশি। তবে মনোজিতের বয়স তিরিশের কম হওয়ায় অনেক দিন চাকরি আছে। ভবিষ্যতে রোজগারও বাড়বে। সুতরাং নিয়মিত শেয়ারে টাকা খাটানো খুব কঠিন হবে না। অবশ্যই ভাবনা-চিন্তা করে শেয়ার বাছতে হবে, যাতে বড় রিটার্নের সম্ভাবনা বেশি থাকে। এর পরে বয়স যখন বাড়বে, তখন ধীরে ধীরে সরাসরি শেয়ার থেকে ঋণপত্র ভিত্তিক লগ্নিতে সরতে হবে।

এসআইপি-ও দীর্ঘ মেয়াদে অল্প অল্প করে জমিয়ে বড় তহবিল তৈরির পক্ষে ভাল। আরও যে-সব সঞ্চয় করতে পারেন, সেগুলি হল—

• ভলান্টারি পিএফে টাকা রাখুন।

• পিপিএফে বরাদ্দ আরও বাড়ান।

• আপৎকালীন প্রয়োজন মেটাতে লিকুইড ফান্ডে লগ্নি করুন।

• বেতন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইকুইটি ফান্ডে এসআইপি-র অঙ্ক বাড়ান।

• সুযোগ পেলে করমুক্ত বন্ড কিনুন।

• বাজারে আজকাল বেশ কিছু ভাল সংস্থা প্রথম বার শেয়ার ছাড়ছে। এগুলোতে নজর রাখুন। সুযোগ থাকলে কেনার কথা ভাবতে পারেন।

জীবনবিমা

আমি সব সময়েই বলি জীবনবিমা কোনও লগ্নি বা সঞ্চয়ের পথ নয়। এটি আপনার পরিবারকে আচমকা নেমে আসা দুর্ঘটনার হাত থেকে সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা। তাই আমার মতে—

• ভাল টার্ম পলিসি কিনুন। সব ঠিক থাকলে, মেয়াদ শেষে বিমার টাকা ফেরত পাবেন না। কিন্তু কম প্রিমিয়াম দিয়ে অনেক বেশি বিমামূল্যের সুবিধা মেলে বলে, পরিবারের সুরক্ষা নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন।

• সঙ্গে নিন অ্যাক্সিডেন্টাল ডেথ বেনিফিট (এডিবি) রাইডার। বিমাকারী দুর্ঘটনায় মারা গেলে বিমার টাকা ছাড়াও, এর আওতায় টাকা মেলে। আর শারীরিক ভাবে অক্ষম হলে পলিসির টাকা না-পেলেও, এই রাইডারে টাকা পাওয়া যায়।

• বর্তমান পলিসি সারেন্ডার করুন। বা তিন বছর প্রিমিয়াম দেওয়া হয়ে থাকলে, তা পেড-আপ করুন।

নিজের ফ্ল্যাট

কর্মজীবনের শুরুতেই বড় মাপের ব্যাঙ্কঋণ নিয়ে ফ্ল্যাট কেনার ঝোঁক দেখা যায় চাকরিজীবীদের মধ্যে। কিন্তু মনে রাখবেন, সে ক্ষেত্রে ইএমআই অনেকখানি বেশি হলে সঞ্চয় ও লগ্নি মার খাবে। ফলে চাকরি জীবনের শুরু থেকেই জমাতে পারলে, যতটা বড় তহবিল তৈরির সুযোগ থাকে তাতে পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে। কারণ মাসে মাসে সঞ্চয়ের টাকাই থাকবে না হাতে। আমার পরামর্শ—

• ৫- ১০ বছরের লক্ষ্য স্থির করে ফ্ল্যাট কেনার জন্য টাকা জমাতে থাকুন।

• কিছুটা করে টাকা রাখতে থাকুন ডেট ফান্ডে, কিছুটা ইকুইটি ফান্ডে।

পরামর্শদাতা বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ

(মতামত ব্যক্তিগত)

পরামর্শের জন্য লিখুন:

‘বিষয়’, ব্যবসা বিভাগ,

আনন্দবাজার পত্রিকা,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা, পিন-৭০০০০১।

ই-মেল: bishoy@abp.in

ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানাতে ভুলবেন না

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

large funds Share Market
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE