Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সেপ্টেম্বরেও অস্থিরতা থাকবে বাজারে

অনেকটা উচ্চতা থেকে একটি বল মাটিতে পড়লে ড্রপ খেয়ে আবার বেশ কিছুটা উপরে ওঠে। কতটা উঠবে তা নির্ভর করে বলে কতটা হাওয়া আছে, তার উপর। গত সোমবার সেনসেক্স এক ঝটকায় নামে ১৬২৪ পয়েন্ট বা ৫.৯৪ শতাংশ।

অমিতাভ গুহ সরকার
শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৫ ০১:৫১
Share: Save:

অনেকটা উচ্চতা থেকে একটি বল মাটিতে পড়লে ড্রপ খেয়ে আবার বেশ কিছুটা উপরে ওঠে। কতটা উঠবে তা নির্ভর করে বলে কতটা হাওয়া আছে, তার উপর। গত সোমবার সেনসেক্স এক ঝটকায় নামে ১৬২৪ পয়েন্ট বা ৫.৯৪ শতাংশ। নিফটি পড়ে ৪৯০ অঙ্ক। একটি কাজের দিনে এত বড় পতন বাজার দেখেনি। তবে পরের দিনেই সূচক ঘুরে দাঁড়ায় এবং সেনসেক্স আবার ঢুকে পড়ে ২৬ হাজারের ঘরে। সোমবার ২৫,৭৪২ অঙ্কে নেমে আসা সেনসেক্স সপ্তাহ শেষ করে ২৬,৩৯২ অঙ্কে। অর্থাৎ সোমবার খোয়া যাওয়া ১৬২৪ অঙ্কের ৬৫০ অঙ্ক উদ্ধার হয় একই সপ্তাহে।

ড্রপ খাওয়ার পরে বল এতটা উঠেছে, কারণ ভারতের বলে ভাল ‘হাওয়া ভরা’ ছিল। অর্থমন্ত্রী এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উভয়েরই মতে ভারতের অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী। এই ধরনের আন্তর্জাতিক ঝটকা সইবার ক্ষমতা সে অর্জন করেছে। সুতরাং আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। ৭,০০০-এর ঘরে পিছলে যাওয়া নিফটি-ও আবার ঢুকে পড়েছে ৮ হাজারের ঘরে। সোমবার ১৬২৪ অঙ্ক পতনের পর ৯৭৪ অঙ্ক উদ্ধার করা এখনও সেনসেক্সের বাকি আছে। তাই সবাই তাকিয়ে চলতি সপ্তাহের দিকে।

বাজার খানিকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে ঠিকই, কিন্তু প্রশ্ন হল সঙ্কট কি কেটে গিয়েছে? পুরো পরিস্থিতির বিচারে বলতে হবে, তা সাময়িক ভাবে সামাল দেওয়া গিয়েছে। সঙ্কট কেটে গিয়েছে, তা কিন্তু এখনই বলা যাচ্ছে না। চিনের মুদ্রা ইউয়ানের অবমূল্যায়নের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বের বিভিন্ন অর্থনীতিতে বোঝাপড়ার কাজ আরও কিছু দিন চলবে। চিন পরবর্তী পদক্ষেপ কী করে, তাও দেখার। এই কারণে সেপ্টেম্বরে সূচকে অস্থিরতা থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। একটু সাবধানে বিচরণ করতে হবে এমন এক বাজারে।

সোমবার বাজারের মহাপতনে সাফ হয়ে গিয়েছিল কমবেশি ৭ লক্ষ কোটি টাকার সম্পদমূল্য। ভারতের মোট জনসংখ্যা (আনুমানিক ১২৫ কোটি) দিয়ে এই লোকসানকে ভাগ করলে দেখা যায়, জন প্রতি ভারতবাসীর গড় ক্ষতির পরিমাণ ৫,৬০০ টাকা। শেয়ার বাজারে প্রকৃত লগ্নিকারীর সংখ্যা ধরলে লোকসানের পরিমাণ আরও অনেক বেশি হবে। মুম্বই শেয়ার বাজারে নথিবদ্ধ লগ্নিকারীর সংখ্যা ২ কোটি ৮৬ লক্ষ ৮৮ হাজার। এই হিসেবে প্রত্যক্ষ লগ্নিকারী পিছু লোকসান হয়েছে কমবেশি ২ লক্ষ ৪৩ হাজার ৯০০ টাকা। ভাগ্য ভাল, এর ৪০% এরই মধ্যে উদ্ধার হয়েছে। তবে গল্প এখনও অনেকটাই বাকি।

এ ধরনের পতনে ও পরক্ষণে উত্থানে হাত কামড়ান বেশির ভাগ লগ্নিকারী। ‘পতনের ঠিক আগে কেন বিক্রি করলাম না’ অথবা ‘কেন লগ্নি করলাম’ এবং ‘পতনের পরপরই কেন রুপোর দামে সোনা কিনলাম না’। এই ব্যাপারটি সব উত্থান-পতনেই ঘটে। সঠিক সময়ে কেনা এবং বিক্রি করা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না। হলে বাজারে সকলেরই লাভ হত। সেটা তো সম্ভব নয়। তবে যাঁরা ঝুঁকি নিয়ে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তাঁরা বহু ক্ষেত্রে লাভবান হন।

এ বারের পতনকে অনেকটাই সামলে দিয়েছে দেশি লগ্নি সংস্থাগুলি। সঙ্কটের মুখে বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলিকে সব সময়েই বিপুল আকারে শেয়ার বিক্রি করতে দেখা যায়। গত সোমবারও এরা বিক্রি করেছিল ৫১৪২ কোটি টাকার শেয়ার, যা এক দিনে এ যাবৎ সর্বোচ্চ। বৃহস্পতিবারও এরা বিক্রি করে ৩৩৪৮ কোটি টাকার শেয়ার। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওই দিন বাজার ওঠে ২ শতাংশেরও বেশি। এর জন্য অবশ্যই ধন্যবাদ প্রাপ্য দেশি অর্থ সংস্থাগুলির।

এখন বড় প্রশ্ন, সাধারণ মানুষ এই বাজারে কী করবেন? পরামর্শ হল, পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখুন। গুজবে ভর করে সিদ্ধান্ত নেবেন না। ব্লু-চিপ শেয়ারের দর বেশি নামলে অল্প অল্প করে সংগ্রহ করুন। কিনতে পারেন ঝুঁকে পড়া ভাল মিড-ক্যাপ শেয়ারও। এক লপ্তে নয়, শেয়ার কিনুন খেপে খেপে প্রত্যেকটি পতনে। অল্প সময়ে বেশি ফারাক পেয়ে গেলে বিক্রি করে লাভ ঘরে তোলার কথাও ভাবতে পারেন। তবে দীর্ঘ মেয়াদের কথা মাথায় রেখেই শেয়ার কেনা ভাল। বড় মেয়াদে ভারতীয় অর্থনীতি আরও এগোবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

অন্য দিকে, সুদ আরও কমার সম্ভাবনা একদম উড়িয়ে দেননি রঘুরাম রাজন। সুদ কমলে ছোট মেয়াদেই বাজার কিছুটা ঊর্ধ্বগতি পাবে। একই সঙ্গে মাথায় রাখতে হবে, চিনের আর্থিক অবস্থা বিশ্ব বাজারের কাছে বড় আশঙ্কার কারণ। অবশ্য আশা জাগাচ্ছে মার্কিন অর্থনীতি। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সেপ্টেম্বরে সম্ভবত সুদ বাড়ানোর পথে হাঁটবে না মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক। এই অনুমান মিলে গেলে, তা ভারতীয় বাজারকে শক্তি জোগাবে।

অস্থির বাজারে এসআইপি-র পথে মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি করা বরং বুদ্ধিমানের কাজ হবে। যাঁরা কর বাঁচাতে ইএলএসএস প্রকল্পে লগ্নি করতে চান, তাঁরা এখনই সক্রিয় হতে পারেন। একটি পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, সোমবার বাজারের অবাধ পতনের দিনে মিউচুয়াল ফান্ডে নতুন লগ্নি ছিল কমবেশি ১৫০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ‘ব্ল্যাক মানডে’ সবার কাছে কালো সোমবার ছিল না। সময় মতো সুযোগ নিতে পারলে সাফল্য সহজে করায়ত্ত হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

september share market unrest share market unrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE