দিল্লির নির্বাচন সমাপ্ত। বাজার কাটিয়ে উঠেছে রাজধানীতে বিজেপি-নিধনের সাময়িক ধাক্কা। সমাপ্ত তৃতীয় ত্রৈমাসিক ফলাফল প্রকাশের পালাও। ভালমন্দ ফলাফল অনুযায়ী বিভিন্ন শেয়ার এবং সামগ্রিক ভাবে গোটা বাজার আগুপিছু করে গুছিয়ে নিয়েছে নিজের জায়গা। চোখ এখন পুরোপুরি বাজেটের দিকে।
আজ থেকে জোরকদমে শুরু হয়ে যাবে বাজেট নিয়ে জল্পনা-কল্পনা। বাজেট থেকে কী কী পাওয়া যেতে পারে এবং কোন শর্ত স্বার্থবিরোধী হতে পারে, সেই চিন্তায় বাজার এখন রোজই আন্দোলিত হবে। বাজেট প্রস্তাব পেশ করার আগের দু’সপ্তাহে মোদী-জেটলির কলম দেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে কোন ছবি আঁকে, তা নিয়ে চলছে নানা অনুমান। অন্য কোনও প্রতিকূল খবর বাজার না-পেলে বাজেটকে কেন্দ্র করে নানা আশা সূচককে আগামী দু’সপ্তাহ চাঙ্গা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এটি ধরেই নেওয়া হয়েছিল, বাজেটের আগে একটি ‘বুল রান’ হবে এবং সেনসেক্স প্রথম বারের জন্য টপকে যাবে ৩০ হাজারের সীমা। বাজার এগোচ্ছিলও সেই লক্ষ্যে। বাদ সাধল দিল্লির নির্বাচন। কেন্দ্রে সুপ্রতিষ্ঠিত শাসক দলের দিল্লিতে এমন ভরাডুবি বাজারের অঙ্কে ধরা ছিল না। ফলে একটি মাঝারি মাপের পতন দেখল বাজার। তবে এই কলমে আমরা যেমন বলেছিলাম, পতনের মেয়াদ ছিল নিতান্তই সাময়িক। দিল্লিতে এত বড় পরাজয় সত্ত্বেও তার প্রভাব বাজেটে পড়বে না অরুণ জেটলির এই বার্তায় আবার প্রাণ ফেরে বাজারে। প্রতিশ্রুত আর্থিক সংস্কারের পথ থেকে সরকার পিছু হটছে না অর্থমন্ত্রীর এই অঙ্গীকারে শক্তি ফিরে পায় শেয়ার বাজার। সব আশঙ্কা ঝেড়ে ফেলে এরই মধ্যে সেনসেক্স ফিরে এসেছে ২৯ হাজারের ঘরে। বাজেট সূচককে ৩০ হাজার পার করাতে পারে কি না, তা-ই এখন দেখার।
তবে দিল্লির পরাজয়ে থমকে দাঁড়িয়েছে মোদীর বিজয়রথ। যে-ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে, তা আশু সারানোর মোক্ষম অস্ত্র হল বাজেট। মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া জনগণকে আবার সরকারমুখী করার জন্য বাজেটে কিছু জনমোহিনী চমকের কথা সরকার ভাবতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এটি বিজেপি সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট। দীর্ঘকালীন পরিকল্পনার একটি রূপরেখাও বাজেটে থাকার কথা। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ২৮ তারিখে অরুণ জেটলির মুখ থেকে কী কী শোনা যেতে পারে।
• পরিকাঠামো শিল্পে বড় লগ্নি এবং এই শিল্পে লগ্নিতে করছাড়।
• গাড়ি এবং নির্মাণ শিল্পে শুল্কছাড়ের ব্যবস্থা। শুল্ক কমানো হতে পারে মেয়াদি ভোগ্যপণ্যের উপরও।
• ইকুইটিতে লগ্নিকারীদের দীর্ঘ মেয়াদে ধরে রাখার জন্য কমানো হতে পারে ডিভিডেন্ড বণ্টন কর। এই সুবিধা সম্প্রসারিত করা হতে পারে মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রেও।
• ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে গত বাজেটে এক লক্ষ টাকার উপর (৮০সি ধারায় অতিরিক্ত লগ্নি-সহ) বাড়তি করছাড়ের সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। এ বার এ ক্ষেত্রে বড় কিছু আশা করা হচ্ছে না। কিছু পাওয়া গেলে তা বোনাস হিসেবে গণ্য হবে। সাধারণ মানুষকে খুশি করার জন্য ছোট কিছু থাকলেও থাকতে পারে।
• পেনশনে করছাড় বিবেচনা করা হতে পারে।
• করছাড়ের ব্যাপারে স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়ামের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে কেন্দ্র।
• পণ্য-পরিষেবা কর চালু করার ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশ থাকতে পারে।
প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি টানতে বিশেষ সুবিধার কথা থাকতে পারে বাজেটে। আসতে পারে রফতানিতে উৎসাহ দেওয়ার জন্য বিশেষ প্রকল্প ও সংস্কারমুখী নতুন কিছু প্রস্তাব।
এ বারের ত্রৈমাসিক ফলাফলে বিশেষ ভাবে হতাশ করেছে ব্যাঙ্কিং শিল্প। অনুৎপাদক সম্পদের বহর ভাল রকম বেড়েছে বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্কের। শেষ সপ্তাহে কিছুটা মুখরক্ষা করেছে স্টেট ব্যাঙ্ক এবং এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক। তবে হতাশ করেছে ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। বছরের তৃতীয় তিন মাসে স্টেট ব্যাঙ্কের নিট মুনাফা ২২৩৪ কোটি থেকে বেড়ে পৌঁছেছে ২৯১০ কোটি টাকায়। বেসরকারি এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের লাভ ২০.২% বেড়ে হয়েছে ২৭৯৪ কোটি টাকা।
স্টিল অথরিটির লাভ বেড়েছে ৯%। খারাপ ফলের তালিকায় আছে ও এন জি সি এবং ইন্ডিয়ান অয়েল। ৯৪৫৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার কারণে ওএনজিসির নিট মুনাফা কমে প্রায় অর্ধেক (৩৫৭১ কোটি টাকা) হয়েছে। ইন্ডিয়ান অয়েলের লোকসান পৌঁছেছে ২৬৩৭ কোটি টাকায়। অন্য দিকে লোকসান থেকে লাভের খাতায় ফিরেছে ভারত পেট্রোলিয়াম।
শিল্প ঝিমিয়ে থাকার কারণে বারবারই উঠে আসছে সুদ ছাঁটাইয়ের প্রস্তাব। বাজেটের মাধ্যমে সরকার শিল্পকে চাঙ্গা করার কী কী প্রস্তাব দেয়, তা-ই এখন দেখার। আগাম ইঙ্গিত মিলেছে বর্ষা এ বার স্বাভাবিক হতে পারে। আমাদের অর্থনীতির কাছে এটি অবশ্যই একটি বড় খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy