এক বছর আগেও যে দাম ছিল চড়া, তা নেমে এসেছে ছ’বছরের সব থেকে নীচে। বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দর ব্যারেলে ১১০ ডলার থেকে কমতে-কমতে এখন ৫০ ডলারেরও তলায়। কেন? এতে সুবিধা কাদের? কারাই বা বেকায়দায়? এক নজরে তারই সুলুক-সন্ধান।
• বিশ্ব বাজারে কেন এমন হু হু করে পড়ছে তেলের দাম?
অর্থনীতির সহজ সূত্র মেনে। দুনিয়া জুড়ে এখন তেলের যা চাহিদা, সেই তুলনায় জোগান অনেক বেশি। ফলে দর কমছে।
• হঠাৎ এমন কেন?
গত ছ’বছর ধরেই ক্রমশ বাড়তে-বাড়তে আমেরিকায় তেলের উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে। সেই সঙ্গে সেখানে উৎপাদন বেড়েছে শেল গ্যাসের (যা পাথরের খাঁজে থাকে)। ফলে তেল আমদানি কমিয়ে দিয়েছে ওবামার দেশ।
অন্য দিকে, মন্দার ধাক্কা এখনও কাটিয়ে ওঠেনি ইউরোপ। তেলের চাহিদা সেখানেও কম। তার উপর উন্নত প্রযুক্তিতে গাড়ির মাইলেজ বাড়ছে। বাড়ছে বিদ্যুৎ ও গ্যাস চালিত গাড়ি। ফলে তেলের চাহিদা তলানিতে।
মরিয়া হয়ে প্রায় সব তেল উৎপাদক দেশই পাখির চোখ করছে এশিয়াকে। কিন্তু সেখানেও চিনের বৃদ্ধির হার সুবিধার নয়।
• তা হলে তো ভারতের লাভ?
অবশ্যই। এখন অশোধিত তেল আমদানি হচ্ছে ব্যারেল-পিছু ৪৫.৮৬ ডলারে। আগের আর্থিক বছরে (২০১৩-’১৪) যা ছিল ১০৭ ডলার। এখনও পর্যন্ত সব মিলিয়ে বেঁচেছে প্রায় ৬৫০ কোটি ডলার। কেন্দ্রের আশা, মার্চ পর্যন্ত যদি গড় দাম ৬০ ডলারও থাকে, তবে আরও ১,২৫০ কোটি ডলার সাশ্রয় হবে।
• কিন্তু দেশে তেলের দাম তো তেমন কমেনি?
নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে পরপর তিন বার পেট্রোল-ডিজেলের উপর শুল্ক বসিয়েছে কেন্দ্র। তাই বাজার দর বদলায়নি।
• এ তো তা হলে মোদী-সরকারের কাছে মেঘ না চাইতেই জল?
কিছুটা তা-ই। ভারতের আমদানি খরচের বড় অংশ যায় তেল কিনতে। জাতীয় আয়ের প্রায় ৯%। সেই খরচ কমেছে। যা বিদেশি মুদ্রার আয়-ব্যয়ের ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পক্ষে ভাল। তা ছাড়া, ভর্তুকি বাবদ খরচও কমছে।
অন্য দিকে, শুল্ক বাবদ বাড়তি আয় রাজকোষ ঘাটতি বেঁধে রাখায় সহায়ক হতে পারে।
শুধু তা-ই নয়। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলির মুনাফা বৃদ্ধির আশায় তাদের শেয়ার দর বেড়েছে। ফলে বিলগ্নিকরণ করে মোটা টাকা আনার পরিকল্পনা করছেন অর্থমন্ত্রী।
• তা হলে চিন্তা কাদের?
বিপদে পড়েছে রাশিয়া, ইরান, ভেনেজুয়েলা, নাইজেরিয়া, ইকুয়েডর, ব্রাজিলের মতো দেশগুলি। তেলই এদের অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি। ওই সব দেশের অর্থনীতি ধাক্কা খেলে ফের বিশ্বজোড়া মন্দার আশঙ্কায় মাঝেমধ্যে ঝাঁকুনি খাচ্ছে বিভিন্ন দেশের শেয়ার বাজার। সম্প্রতি ভারতেও এক দিন ওই আতঙ্কে ৮৫৫ পয়েন্ট পড়েছিল সেনসেক্স।
• ‘ওপেক’ তেল উৎপাদন কমাচ্ছে না কেন?
তেল উৎপাদনকারী দেশগুলির সংগঠন ‘ওপেক’-এ জোর ঝগড়া বেঁধেছে। ইরান, ভেনেজুয়েলা, আলজেরিয়া উৎপাদন কমাতে চায়। কিন্তু সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহিরা নারাজ। তাদের আশঙ্কা, উৎপাদন কমালে লাভ হবে প্রতিযোগীদের।
• ষড়যন্ত্রের গন্ধ?
অনেকের সন্দেহ, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহি মিলে জোর ধাক্কা দিতে চাইছে রাশিয়া ও ইরানকে। তাতে মদত দিচ্ছে আমেরিকা। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সময়েও তেলের দাম হু হু করে কমেছিল।
• আরও পড়বে তেলের দাম?
সম্ভবত। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, অচিরেই দাম নেমে যেতে পারে ৪০ ডলারের নীচে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy