আশাহত। অর্থমন্ত্রী। ছবি: পিটিআই।
ঐকমত্য সেই অধরাই। বিভিন্ন রাজ্যের বিরোধিতায় ফের থমকে গেল পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) বিল সংসদে পেশ হওয়া।
২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে জিএসটি চালু করতে মরিয়া মোদী সরকার। যে-কারণে সংসদে চলতি অধিবেশনেই তা পেশ করতে চেয়েছিল তারা। এই কর চালুর জন্য অনেক দিন ধরেই আশা নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে শিল্পমহলও। কিন্তু আপাতত কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এবং শিল্পমহলের উদ্বেগ বাড়িয়ে আবার আটকে গেল জিএসটি। সংস্কারের এই সিঁড়িতে পা বাড়িয়ে হোঁচট খেল মোদী সরকার। ইউপিএ সরকারের মতোই। যদিও অনেকে মনে করছেন, অর্থনীতির চাকায় গতি ফেরাতে কেন্দ্র এখন এতটাই মরিয়া যে, প্রয়োজনে রাজ্যগুলির কিছু দাবি মেনে নিয়েও দ্রুত জিএসটি চালুর পথ প্রশস্ত করার চেষ্টা করবেন জেটলি।
জিএসটি বিল নিয়ে ঐকমত্য গড়ে তুলতে বিভিন্ন রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসেছিলেন জেটলি। আশার আবহও তৈরি হয়েছিল এই আলোচনা ঘিরে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা কার্যত একজোট হয়ে খারিজ করেছেন কেন্দ্রের জিএসটি বিলের খসড়া। যার মানে, এখন ফের নতুন করে ওই খসড়া তৈরি করতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে।
জিএসটি নিয়ে বরাবরই রাজ্যগুলির আশঙ্কা, তা চালু হলে তাদের রাজস্বে টান পড়বে। সেই দুশ্চিন্তা দূর করতে তাদের দীর্ঘ দিনের দাবি মেনে কেন্দ্রীয় কর বাবদ ৩৩ হাজার কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ তিন বছরে মিটিয়ে দেওয়ার কথা বলেন জেটলি। অর্থ মন্ত্রকের আশা ছিল, তাতে কিস্তিমাত হবে। কিন্তু রাজ্যগুলি একজোট হয়ে দাবি তুলেছে, তিন নয়, ক্ষতিপূরণ দিতে হবে পাঁচ বছর। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, পরিস্থিতি যা, তাতে সেই দাবি হয়তো মেনেও নিতে হবে কেন্দ্রকে। তা ছাড়া, ওই ক্ষতিপূরণের আশ্বাস শুধু মুখের কথায় মানতে রাজি নয় রাজ্যগুলি। বরং তারা চায়, বিলের খসড়াতেই তার প্রতিশ্রুতি থাকুক।
একই সঙ্গে রাজ্যগুলির দাবি, তাদের হাত থেকে পেট্রোপণ্যের উপর কর বসানোর ক্ষমতা কাড়া যাবে না। সব সময়েই তা রাখতে হবে জিএসটি-র আওতার বাইরে। দিতে হবে প্রবেশ কর বসানোর অধিকারও। বিভিন্ন রাজ্যের এই সব দাবি নিয়ে সরব পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। সরব প্রধানমন্ত্রীর নিজের রাজ্য গুজরাতও। এ নিয়ে তৈরি রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের এমপাওয়ার্ড কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুল রহিম রাথের-এর কথায়, “পুরনো দাবি মেনেই খসড়া বিল তৈরি করতে হবে।”
জিএসটি চালুর জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে কেন্দ্রকে। তার জন্য রাজ্যগুলির তরফ থেকে সম্মতি প্রয়োজন। বিলটি সংসদে পাশ হওয়ার পরে তাতে অনুমোদন লাগবে দেশের অন্তত অর্ধেক রাজ্যের বিধানসভারও। কিন্তু রাজ্যগুলি বেঁকে বসায় সেই সম্ভাবনা এখন অথৈ জলে।
জিএসটি একবার চালু হলে, তার আওতায় আসবে যুক্তমূল্য কর (ভ্যাট), উৎপাদন শুল্ক, পরিষেবা কর-সহ অনেক করই। ফলে শিল্পমহল মনে করে, তাতে তাদের কর সংক্রান্ত ঝক্কি কমবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চাঙ্গা হবে অর্থনীতি। আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়বে ২%।
এই সব কথা মাথায় রেখে জিএসটি চালুর জন্য ২০০৭-’০৮ সাল থেকেই কমানো শুরু হয়েছিল কেন্দ্রীয় বিক্রয় করের হার। যার দরুন ওই বছর রাজ্যগুলির মোট ক্ষতি হয়েছিল ১১ হাজার কোটি টাকা। আগামী বাজেটে তা মেটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কেন্দ্র। কথা হয়েছে ২০১০-’১১ সাল পর্যন্ত রাজস্ব ক্ষতিও কিস্তিতে মিটিয়ে দেওয়ার। কিন্তু সেই টাকাও এখন থোক হিসেবে চাইছে রাজ্যগুলি। ফলে সব মিলিয়ে ফের গাড্ডায় জিএসটি-ও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy