নোনাডাঙা তথ্যপ্রযুক্তি পার্কে রোল্টা ইন্ডিয়ার জমির বেড়া ভেঙে রাস্তা তৈরির কাজ আপাতত বন্ধ করল কেএমডিএ। সরকারি সূত্রে খবর, এ নিয়ে তৈরি হওয়া সমস্যা পাকাপাকি ভাবে মিটিয়ে ফেলতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্যও। তথ্যপ্রযুক্তি এবং নগরোন্নয়ন রাজ্যের এই দুই দফতরের মন্ত্রীর বৈঠকের পর বিষয়টি পাকাপাকি ভাবে মিটে যাওয়ার সম্ভাবনা। ফলে এখনকার মতো রাজ্য সরকারের মৌখিক প্রতিশ্রুতির উপর আস্থা রেখেই নিজেদের প্রকল্প গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে চাইছে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাটি।
গত মাসেই অভিযোগ উঠেছিল যে, ওই অঞ্চলে রাস্তার কাজের জন্য রোল্টা ইন্ডিয়ার জমির অস্থায়ী বেড়া ভেঙে ফেলেছে কেএমডিএ। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাটির জমির একাংশের উপর দিয়েই রাস্তা তৈরি শুরু করে দিয়েছে তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর ছিল, ওই নোনাডাঙাতেই বিজ্ঞানী মণি ভৌমিকের নামে নির্মীয়মাণ প্রকল্প মণি ভৈমিক সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ উদ্বোধন করতে যেতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সম্ভাবনা মাথায় রেখে চটজলদি রাস্তা তৈরি করতে নামে কেএমডিএ। আর তা করতে গিয়েই রোল্টার জমির উপর কাজ শুরু করে দেয় তারা। সমস্যার সূত্রপাত সেখানে। গত ১৯ অগস্ট এই সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল আনন্দবাজার পত্রিকার পাতায়। যার পর আপাতত ওই রাস্তার কাজ বন্ধ রেখেছে কেএমডিএ। সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকারও।
জমি ‘দখল’ করে কেএমডিএ-র ওই চটজলদি রাস্তা তৈরির সিদ্ধান্তে যে রোল্টা ইন্ডিয়া বিপাকে পড়েছিল, তারাই আবার কল্যাণীতে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইনফর্মেশন টেকনোলজি প্রকল্পে অন্যতম বিনিয়োগকারী। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, রোল্টাকে কেএমডিএ প্রথমে বলেছিল, রাস্তা তৈরির জন্য যে জমি তাদের চলে যাচ্ছে, হয় তার দাম তারা রাজ্য সরকারের কাছ থেকে ফেরত নিক, নয়তো জমি দিয়ে দেওয়া হবে নোনাডাঙা পার্কের অন্য কোথাও। কিন্তু এই দুই প্রস্তাবই বাস্তবসম্মত নয় বলে তা মানতে চায়নি সংস্থা।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে নোনাডাঙায় সাড়ে পাঁচ একর জমি লিজ নেয় রোল্টা ইন্ডিয়া। কিন্তু চার বছর কেটে যাওয়ার পরও ন্যূনতম পরিকাঠামোর অভাবে সেখানকার তথ্যপ্রযুক্তি পার্কে প্রকল্প শুরু করতে পারেনি রোল্টা-সহ তিন সংস্থা। তথ্যপ্রযুক্তি দফতরেরই অভিযোগ, প্রতিশ্রুতি মাফিক নিকাশি, জল, রাস্তা ও বিদ্যুৎ সংযোগের মতো প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি করে দেয়নি কেএমডিএ। ফলে ওই পার্কে আটকে রয়েছে ৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ। ঝুলে রয়েছে অন্তত ১২ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগও।
নোনাডাঙা তথ্যপ্রযুক্তি পার্কে জমি নিয়েছে এইচএসবিসি, রোল্টা এবং এইচসিএল। রাজ্য সরকারের নির্ধারিত দামেই তা নিয়েছিল ওই তিন সংস্থা। একর প্রতি দর পড়েছিল এক কোটি কুড়ি লক্ষ টাকা। ২০০৮-’০৯ সালের মন্দা কাটিয়ে সেই সময় ছন্দে ফিরছিল তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প। স্থগিত থাকা সম্প্রসারণ পরিকল্পনা ফের বাস্তবায়িত করতে চাইছিল এইচএসবিসি, রোল্টা ও এইচসিএল। রাজ্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, জমি পাওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে তাদের প্রকল্প চালু করে দেওয়ার কথা। কিন্তু প্রথমে প্রতিশ্রুতি দিলেও নিকাশি, জল, রাস্তা ও বিদ্যুৎ সংযোগের মতো পরিকাঠামো তৈরি করে দেয়নি রাজ্য। আর সেই কারণেই প্রকল্পের কাজও এগোনো যায়নি বলে অভিযোগ সংস্থাগুলির।
নোনাডাঙায় সাড়ে তিন একর জমির উপর ক্যাম্পাস তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে এইচএসবিসি-র। জমি নেওয়ার সময় তারা জানিয়েছিল, চালু হওয়ার পর সেখানে কর্মী সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় চার হাজার। ২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগে এই তথ্যপ্রযুক্তি পার্কে সাড়ে পাঁচ একর জমির উপর ক্যাম্পাস গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে বছরে ৪৪% হারে ব্যবসা বাড়ানো রোল্টা ইন্ডিয়ার। পাঁচ হাজারেরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হওয়ার কথা সেখানে। দেড় একর জমিতে নিজস্ব কেন্দ্র তৈরি করতে চায় এইচসিএল-ও।
নীতিগত ভাবে তাঁর দল ও সরকার যে বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের (সেজ) বিরোধী, তা গোড়া থেকেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার বদলে ছোট-ছোট জমিতে তথ্যপ্রযুক্তি হাব গড়ে তুলতে একাধিক মঞ্চ থেকে লগ্নিকারীদের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, জেলায়-জেলায় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকে ছড়িয়ে দেওয়ার কথাও। অথচ সেখানে খাস কলকাতার বুকেই নিখাদ সরকারি টানাপোড়েনে বছরের পর বছর ঝুলে রয়েছে নোনাডাঙা তথ্যপ্রযুক্তি পার্কের মতো প্রকল্প।
বেড়া ভেঙে নেওয়া জমিতে রাস্তা তৈরি আপাতত বন্ধ হয়েছে। এ বার পার্কের সমস্যাও পুরোপুরি মেটে কি না, তার উত্তর দেবে সময়ই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy