ঘরে-বাইরে ভাল খবরের প্রবাহ অব্যাহত। ফলে বাজার তুঙ্গে। সর্বকালীন উচ্চতায়। ‘বুল’ দেখতে এখন আর স্পেনে যেতে হবে না। দালাল স্ট্রিটে বুলের ছড়াছড়ি। দূরবিন দিয়েও ‘বেয়ার’-দের দেখা মিলছে না। একই সঙ্গে দেশের ভিতরে এবং বাইরে এতটা অনুকূল হাওয়া সচরাচর দেখা যায় না। ফলে লাগামছাড়া দুই শেয়ার-সূচক সেনসেক্স ও নিফটি। ২৭ হাজারকে অনেকটা পিছনে ফেলে সেনসেক্স এখন ২৮ হাজারে প্রথম পা রাখার অপেক্ষায়। নিফটির পরের লক্ষ্য ৮,৫০০ অঙ্কে পৌঁছনো।
গত সপ্তাহে সেনসেক্স মোট উঠেছে ১,০১৫ পয়েন্ট। শতাংশের হিসেবে ৩.৭৮ শতাংশ। শুক্রবার মুম্বই সূচক বাড়ে ৫২০ পয়েন্ট। মাত্র এক দিনে লগ্নিকারীদের খাতায় লাভ বাড়ে প্রায় ১.৫০ লক্ষ কোটি টাকা। বোঝাই যাচ্ছে, ঝুঁকির পাশাপাশি এই ধরনের লাভ শুধু শেয়ারেই সম্ভব। শেয়ার বাজারের এই উত্থানে দ্রুত বাড়ছে সমস্ত ইক্যুইটি ফান্ডের ন্যাভ। আবার খুচরো লগ্নিকারীরা ভিড় জমাতে শুরু করেছেন শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের জগতে।
এ বার এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কোন কোন ভাল খবরের প্রভাবে বাজার এতটা তুঙ্গে।
• নির্মাণ শিল্পে বিদেশি লগ্নির বিধিনিষেধ শিথিল করেছে কেন্দ্র।
• মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ বাজার থেকে বন্ড কেনা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলেও পাশাপাশি স্থির করে যে, সুদ বাড়ার আশু কোনও সম্ভাবনা নেই।
• মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক বন্ড কেনা বন্ধ করলেও অপ্রত্যাশিত ভাবে ব্যাঙ্ক অব জাপান বাজার থেকে বন্ড কেনার মাত্রা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে বিশ্ব বাজারে টাকার জোগান কমার আশঙ্কা অনেকটাই হ্রাস পায়।
• আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দামে আরও পতন।
• ভারতেও পেট্রোল-ডিজেলের দাম আরও কমে আসার উজ্জ্বল সম্ভাবনা। সপ্তাহ শেষে দাম আবার কমানোও হয়।
• ডিজেলের দরে সরকার নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই তারা নির্মাণ শিল্পে বিদেশি লগ্নির পথ সুগম করল। ফলে মোদী সরকার যে দ্রুত আর্থিক সংস্কারের পথে হাঁটবে, সে সম্পর্কে বাজার বিশেষ আশাবাদী।
• অব্যাহত রয়েছে বিদেশি লগ্নি- প্রবাহ। শুক্রবার ভারতীয় বাজারে বিদেশি সংস্থার লগ্নির পরিমাণ ছিল ১,৭৫০ কোটি টাকা। জানুয়ারি থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত লগ্নির মোট পরিমাণ প্রায় ৭৮,০০০ কোটি টাকা।
• চাঙ্গা ভাব বিশ্ব বাজারে।
• বেশ কয়েকটি নামী কোম্পানির ভাল ত্রৈমাসিক ফল প্রকাশ।
• মূল্যবৃদ্ধির হার কমতে থাকায় আগামী দিনে সুদ কমার সম্ভাবনা।
প্রশ্ন হল, বাজারের এই তেজী ভাব কত দিন বজায় থাকবে। বাজার এতটাই দ্রুত উঠেছে যে, আগামী দিনে সংশোধনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অনেকেরই ধারণা, এতটা উত্থানের পরে বাজারের একটু জমাট বাঁধা (কনসলিডেশন) প্রয়োজন। ছোট-খাটো সংশোধনের পরে আবার ওঠার চেষ্টা করবে দুই মূল সূচক। মাঝারি থেকে দীর্ঘ মেয়াদে বাজার চাঙ্গা থাকার সম্ভাবনা প্রবল।
গত সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছে একগুচ্ছ কোম্পানি ফলাফল। নামীদের মধ্যে ভাল ফল করেছে মারুতি-সুজুকি, আই সি আই সি আই ব্যাঙ্ক, ভারতী এয়ারটেল, ইয়েস ব্যাঙ্ক, এ সি সি, আই টি সি, গ্যাস অথরিটি-সহ বেশ কিছু সংস্থা। যে-সব সংস্থার ফল তেমন ভাল হয়নি, তাদের মধ্যে আছে এনটিপিসি, আইডিবিআই ব্যাঙ্ক, মহীন্দ্রা অ্যান্ড মহীন্দ্রা, এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক, গ্রাসিম ইন্ডাস্ট্রিজ, ডাঃ রেড্ডি’জ ল্যাব, ই আই এইচ ইত্যাদি সংস্থা।
এত ভালর মধ্যে একটি খারাপ খবর হল, ৮টি মূল পরিকাঠামো শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধির হার গত আট মাসের মধ্যে সবথেকে নীচে নেমে আসা। সেপ্টেম্বরে এই সব শিল্পের বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ১.৯ শতাংশ। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আর্থিক বছরের দ্বিতীয় ভাগে বিভিন্ন শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধির যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে।
শেয়ার বাজার যখন তুঙ্গে, তখন ‘উল্কাপতন’ লক্ষ করা গিয়েছে সোনার বাজারে। গত সপ্তাহে যে-গতিতে শেয়ার উঠেছে, কমবেশি সেই গতিতেই পড়েছে সোনার দর। শনিবার হলমার্ক গয়নার সোনার দর নেমে এসেছে প্রতি দশ গ্রামে ২৫,৫৫০ টাকায়। বিশ্ব অর্থনীতিতে উন্নতির হাওয়া লাগায় পড়তে শুরু করেছে সোনার দাম। ভারতে ধনতেরাসের সময়ে সোনার দর একটু ঊর্ধ্বমুখী হলেও, ঠিক তার পর থেকেই নামতে শুরু করেছে। সোনা কেনার জন্য এখন সময়টা মন্দ নয়।
বিনা মাসুলে এটিএম ব্যবহারের সুবিধা কমানো হয়েছে গত শনিবার থেকে। এ বার থেকে নিজের ব্যাঙ্কের এটিএম থেকে বিনা মাসুলে মাসে ৫ বার পর্যন্ত টাকা তোলা এবং অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করা যাবে। এর পর প্রতিটি লেনদেনে দিতে হবে ২০ টাকা করে। অন্য ব্যাঙ্কের এটিএম বিনা মাসুলে ব্যবহার করা যাবে মাসে তিন বার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy