বড়দিনের নিজস্বী। বুধবার, পার্ক স্ট্রিটে। —নিজস্ব চিত্র।
ঢাকে কাঠি আগেই বেজেছিল। এ বার উত্সব টইটম্বুর।
বুধবার, ক্রিসমাস ইভে পার্ক স্ট্রিটে এসেই বয়স ভুলে গেলেন, বছর শেষের ছুটিতে শহরে ফেরা এক ঝাঁক মাঝবয়সী গুরুগম্ভীর নরনারী। চিনে খাবারের রেস্তোরাঁয় ঢোকার লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েই রংচঙে শিং, মুখোশ ও সান্তা টুপিতে নিজস্বী তোলার ধূম লেগে গেল।
সন্ধের মুখে ঠিক তখনই সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের অনুষ্ঠানে কেক কেটে শহরের আর্চবিশপ টমাস ডিসুজা, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের অধ্যক্ষ ফেলিক্স রাজদের মহানন্দে কেক খাওয়াচ্ছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
উচ্ছ্বাসের এই সর্বজনীন সংক্রমণেই বড়দিন সকলের উত্সব হয়ে ওঠে। আলোয় ভাসছে পার্ক স্ট্রিট, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, লিন্ডসে স্ট্রিটকে নিয়ে গোটা তল্লাট। ঠিক যেন শারদ-সন্ধ্যার বাগবাজার বা ম্যাডক্স স্কোয়ার। আবার বোধনের আগের রাতের কুমোরটুলিও বলা যায়। ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে তুমুল দর কষাকষি ‘ক্রিসমাস ট্রি’ নিয়ে। নানা মাপের গাছ, দাম ৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা। আলো-টালো দিয়ে সাজাতে বাড়তি খরচ। এ সব সামগ্রী বাড়িতে না-গেলে উত্সব কী করে জমবে? পাশেই কালম্যানের কোল্ড মিটের খুপরি দোকানটাতেও পা ফেলা যাচ্ছে না। টার্কি রোস্ট বা মনপসন্দ সসেজের জন্য হত্যে দিয়ে অজস্র নরনারী। গত কয়েক বছর ধরেই পার্ক স্ট্রিটে ক্রিসমাস ফেস্টিভ্যালের আসরই উত্সবের মেজাজটা বেঁধে দেয়। অ্যালেন পার্কে গানবাজানা চলছে সারা সন্ধে। সেই ফুটপাথ ধরে মানুষের ভিড় ঠেলে এগোনো মুশকিল। খাদ্য-উত্সব উপলক্ষে প্রবল ভিড়ের মধ্যেই এক কোণে দাঁড়িয়ে প্লেট ভাগাভাগি করে ফিশ বল সুপ, মোমো কি কাটলেট সাঁটানো চলছে। ভিড় ঠেলে এগোতে এগোতে হঠাত্ জ্যাকেট খুলে ঘর্মাক্ত যুবকের ঘোষণা, “ওরেব্বাস, অফিশিয়ালি ঘোষণা করছি গরমকাল পড়ে গিয়েছে।”
উত্সবের আমেজের উষ্ণতা পুলিশও হাড়ে-হাড়ে টের পাচ্ছে বলাই বাহুল্য। শহরের সেরা উত্সব-প্রাঙ্গণের জন্য আজ, বৃহস্পতিবার বড়দিনেও থাকবে বিশেষ ব্যবস্থা। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) রাজীব মিশ্র জানান, সন্ধে ছ’টা থেকে রাত ১০টা অবধি পার্ক স্ট্রিটে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। উত্সবের আনন্দ নির্বিঘ্ন রাখতে শহর জুড়ে ১০ হাজারের বেশি পুলিশ নামছে।
পার্ক স্ট্রিট-চত্বর ছাড়াও বিশেষ নজর থাকবে নাইটক্লাব, পাবগুলিতে।
পার্ক স্ট্রিট পাড়ায় পুলিশের ওয়াচ টাওয়ার ও সহায়তা বুথ থাকবে। হঠাত্ অঘটন সামলাতে থাকবে কুইক রেসপন্স টিম।
মধ্যরাতের ব্রাহ্ম মুহূর্তে যথারীতি ভিড় উপচে পড়ে সেন্ট পলস্ ক্যাথিড্রাল চার্চ, সেন্ট থমাস চার্চের মতো প্রধান গির্জাগুলোয়। সেন্ট পল্স ক্যাথিড্রালের প্রার্থনায় মুখ্যমন্ত্রীও সামিল হয়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy