তোমার নাম, আমার নাম
ভিয়েতনাম, ভিয়েতনাম...
চেনা এই স্লোগানের হাত ধরেই একটা সময় একাত্মবোধ করত এই শহর, এই রাজ্য। সে দেশের রাজনীতি, সংস্কৃতির হালহকিকত ঢুকে পড়েছিল কলকাতার আনাচে-কানাচে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের তপ্ত আন্দোলনে, চায়ের আড্ডায়।
সময় গড়িয়েছে অনেকটা। বদলে গিয়েছে এ শহরের রাজনৈতিক সমীকরণ। আর এই পাল্টে যাওয়া সময়েই ফিরে এল ভিয়েতনামের স্মৃতি। তবে রাজনীতি নয়, হেঁশেলের হাত ধরে। সৌজন্যে সাউথ সিটি মলের তাই রেস্তোরাঁ ‘বেঞ্জারং’। সেখানেই সপ্তাহখানেক আগে শুরু হয়েছে ভিয়েতনামি খাদ্য উৎসব। চলবে আগামী ২৪ অগস্ট পর্যন্ত।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পুবঘেঁষা একফালি দেশ ভিয়েতনাম। সেখানকার খাওয়াদাওয়ায় মূলত পাঁচ স্বাদের রাজপাট। যে পাঁচটি স্বাদকে সে দেশের মানুষ তুলনা করেন কয়েকটি পদার্থের সঙ্গে ধাতুর সঙ্গে ঝাল-মশলা, কাঠের সঙ্গে টক, আগুনের সঙ্গে তেতো, জলের সঙ্গে নোনতা এবং মাটির সঙ্গে মিষ্টি। ফিশ সস, শ্রিম্প পেস্ট, সয় সস, ভাত, তাজা শাকপাতা, ফল এবং সব্জিতে মোড়া বিভিন্ন পদে লেমনগ্রাস, বেসিল, আদা, পুদিনা, ভিয়েতনামি মিন্ট, ধনে, দারচিনি, বার্ডস আই চিলি ও লেবুপাতার স্বাদে ভরপুর। খাঁটি ভিয়েতনামি রান্নায় তাজা উপকরণের স্বাদ, কম তেলের ব্যবহার এবং শাকপাতা ও সব্জিরই পাল্লা ভারী। তবে উত্তর থেকে দক্ষিণে পাল্টে যায় সেই স্বাদ। ঠান্ডা আবহাওয়ায় মশলাপাতির তেমন জোগান না থাকায় উত্তর ভিয়েনামের হেঁশেলে কম মশলার রান্নার জয়জয়কার। লঙ্কার বদলে গোলমরিচেই সুস্বাদু হয় তাদের রান্না। তুলনায় দক্ষিণ ভিয়েতনামের পদ বরং অনেকটা মশলাদার। ভিয়েতনামি হেঁশেলের এই দুই ঘরানাতেই কাঁকড়া, চিংড়ি ও নানা ধরনের সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি এখন প্রচুর চিকেন, পর্ক এবং বিফ ব্যবহার করা হয়। এ সব কিছুই হাজির করা হয়েছে বেঞ্জারং-এর ভিয়েতনামি পার্বণে।
ঘামঝরা দুপুরে জিরিয়ে নিতে এক পেয়ালা আইস কফি দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। খাস ভিয়েতনামের এই কফি স্বাদে-গন্ধে সাধারণ ফিল্টার কফির তুলনায় বেশ জোরদার। আমেজে ডুবতে ডুবতেই জমে যাক ভোজের আয়োজন। ও দেশের রীতি মানলে স্টার্টার, মেন কোর্স বা ডেজার্ট একে একে আসার কথা নয়। তারা সবাই থাকে একত্রে সাজানো। সেখান থেকেই পছন্দমতো তুলে নেওয়া যায় নিজের পাতে।
ভিয়েতনামি ভোজে ভাতের পাতলা আস্তরণে মোড়া সেদ্ধ করা চিংড়ির স্প্রিং রোল, বেসিল পাতার তরতাজা সুগন্ধী টোফু রোল, চালের গুঁড়োয় ক্রিসপি চিকেন স্প্রিং রোল বা মিন্সড বিফ অন লেমনগ্রাসের মতো স্টার্টার, বানানা ব্লসম উইথ চিকেন কিংবা স্কুইডের স্যালাড, বিফ, নুডল ও নানা সব্জিতে ঠাসা ফো বো স্যুপ পেরিয়ে পৌঁছে যান মেনকোর্সে। মুগডাল-চালে অনেকটা বাঙালির তেল-মশলাহীন খিচুড়ির ধাঁচে মুং-বিন স্টিকি রাইস, গ্লাস নুডল উইথ ক্র্যাব মিটের সঙ্গে চেখে দেখতে পারেন নারকেলের দুধে রাঁধা জাম্বো প্রন, চিকেন বা সব্জি, মাটির পাত্রে তৈরি সুইট অ্যান্ড স্পাইসি স্বাদে ক্লে-পট ফিশ বা টোফুর মতো একগুচ্ছ পদ। শেষ পাতে থাক খাঁটি নিরামিষ মুগডালের কেক, ক্রিস্টাল বানানা কেক বা নানা সব্জির মিষ্টিমুখ। সঙ্গে আইসক্রিম।
স্বাদে-গন্ধে বাঙালি রসনার উপযোগী বা ‘কলকাতাকরণ’-এর পথে না হেঁটে খাস ভিয়েতনাম থেকে আসা শেফ এবং গুয়েন থি নো এবং বেঞ্জারং-এর ব্র্যান্ড শেফ রামকুমার এবং ওরিয়েন্টাল ক্যুইজিন শেফ আলি জোসেফ কলকাতার জিভে জল আনতে নিয়ে এসেছেন একেবারে খাঁটি ভিয়েতনামি এই খানা-খাজানা। সাউথ ইস্ট এশিয়ান ক্যুইজিনের গন্ধে সমস্যা হলে খানিক কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে ফিশ সসের পরিমাণ। তবে এ কালের সুখাদ্য-যাপনের রীতি বলছে কলকাত্তাইয়া খাদ্যরসিকেরা যে কোনও দেশের খাবার তার নিজস্ব স্বাদে চাখতেই আজকাল বেশি পছন্দ করছেন।
অতএব, মধুরেণ সমাপয়েৎ? উঁহু, ‘কেকে-ন’ই বা মন্দ কী!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy