ভোগান্তির পথে। উদ্বোধনের পরে দিনভর এমনই যানজটে আটকে রইল পরমা উড়ালপুল। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।
উদ্বোধন করার পরেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, এই উড়ালপুল চালু করে দেওয়ায় শহরের পথে গাড়ির গতি বাড়বে। যানজটের ফাঁস থেকে মুক্তি পাবেন সাধারণ মানুষ। তবে ঘোষণাই সার, শুক্রবার উড়ালপুলে গাড়ি চলা শুরু হতেই যানজটের গেরোয় ফাঁসল পরমা উড়ালপুল।
এ দিন দুপুর থেকেই দেখা যায়, উড়ালপুলের উপরে পার্ক সার্কাস-মুখী লেনে দীর্ঘ লাইন। সেই লাইন চলে উড়ালপুলের উপরে প্রায় দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত। বিকেল গড়িয়ে লাইনও বেড়েছে। বিশেষত অফিস-ফেরত অনেকেই তাড়াতাড়ি গন্তব্যে পৌঁছতে চেয়ে উড়ালপুলে উঠে আটকে পড়েছেন। ছবিটা বদলায়নি রাতের দিকেও। উল্টে অনেককেই উড়ালপুলে গাড়ি থেকে নেমে অধৈর্য হয়ে ঘোরাফেরা করতে দেখা গিয়েছে। এই যানজটের প্রভাব গিয়ে পড়ে উল্টোডাঙা-লেকটাউনেও।
যদিও রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের দাবি, ‘‘আগে বাইপাস এবং পার্ক সার্কাস সাত মাথার মোড়ে যতটা যানজট হত, পরমা উড়ালপুল তৈরির পরে তা অনেকটা কমে গিয়েছে।’’
নতুন উড়ালপুলে এমন যানজট কেন? অনেকেই মনে করছেন, অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় তাড়াহুড়ো করে উড়ালপুল চালু করে দেওয়াতেই এই সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
কিন্তু কাজ শেষের আগেই উদ্বোধন কেন? বিরোধীদের মতে, সামনেই দুর্গা পুজো। সঙ্গে রয়েছে আগামী ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোট। সেই অঙ্ক মাথায় রেখে সাধারণ মানুষের সমর্থন পেতেই প্রকল্পটি অসমাপ্ত অবস্থায় সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হল বলে মনে করছেন তাঁরা।
কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি সূত্রের খবর, র্যাম্প-সহ নয় কিলোমিটার দীর্ঘ এই উড়ালপুলের মাত্র ৪.৩ কিলোমিটার তৈরি হয়েছে। শুক্রবার সাধারণ মানুষের জন্য সেটিই খুলে দেওয়া হয়। এর ফলে বাইপাসের উপরে চাপ কমেছে ঠিকই, কিন্তু পার্ক সার্কাস সাত মাথার মোড় থেকে বিভিন্ন দিকের রাস্তায় রাত পর্যন্ত যানজটের ফাঁসে আটকে থাকে গাড়ি। যা সামলাতে নাভিশ্বাস উঠে যায় ট্রাফিক পুলিশের।
পরমা উড়ালপুলের জন্য যে পার্ক সার্কাস মোড়ে এক ধাক্কায় ট্রাফিকের চাপ অনেকখানি বেড়েছে, তা স্বীকার করেছেন এ দিন ঘটনাস্থলে থাকা ট্রাফিক পুলিশের আধিকারিকেরাও। ট্রাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, এমনিতেই পার্ক সার্কাস সাত মাথার মোড় হওয়ায় ট্রাফিকের একটা সমস্যা থাকে। তার উপরে এ দিন বাইপাস থেকে সব গাড়ি উড়ালপুল ব্যবহার করায় গাড়ির চাপ অন্য দিনের থেকে এক লাফে অনেকটা বেড়েছে। সেই সঙ্গে উড়ালপুলের মাঝখানে এজেসি বসু রোড-মুখী র্যাম্পটি তৈরি না হওয়ায় সব গাড়ি উড়ালপুল ধরে পার্ক সার্কাস মোড় হয়ে এজেসি বসু রোডের দিকে যাচ্ছে। ট্রাফিকের চাপ কমাতে পরমা উড়ালপুলের উপরে থাকা গাড়িগুলিকে আগে ছাড়তে গিয়ে দেখা দিয়েছে অন্য বিপত্তি। উল্টো দিকের এজেসি বসু রোড উড়ালপুলে আটকে পড়েছে যানবাহন।
শুধু তা-ই নয়। পার্ক সার্কাস মোড়ে এ দিন এক দিকের গাড়ি ছাড়তে গিয়ে অন্য দিকের গাড়িকে আটকে রাখায় জন্য অন্য রাস্তাগুলিও যানজটের গেরোয় পড়েছে। এ দিন সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউ, সুরাবর্দি অ্যাভিনিউ, সিআইটি রোডের দিকেও গাড়ি আটকে পড়ে। ফলে নাজেহাল হন সাধারণ মানুষ, নিত্যযাত্রী থেকে পুজোর বাজার করতে বেরোনো লোকেরা। অনেকেই প্রশ্ন করেন, উড়ালপুল তৈরি করে তবে কী লাভ হল? বরং ভোগান্তি বাড়ল বলেই মনে করছেন তাঁরা। অনেকের মতে, পুজোর আগে তাড়াহুড়ো করে উড়ালপুল খুলে না দিয়ে কাজ শেষের পরে খুললেই ভাল হতো। বিশেষত ট্রাফিক পুলিশের আধিকারিকদের আশঙ্কা, পুজোয় এই যানজট বাড়বে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy