Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা, হল না, পুলিশের জালে বিদ্যুৎ-চোর

হুকিং-এর দিন শেষ। কলকাতায় বিদ্যুৎ চুরির জন্য নিত্য নতুন বিচিত্র নানা উপায় বার করছে মাফিয়ারা। গত বুধবার একবালপুর থানা এলাকা থেকে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার পরে প্রকাশ্যে এসেছে এই অভিনব কারসাজির একটি উদাহরণ। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম আজম আলি। তিনি এলাকায় একটি অনুষ্ঠান বাড়ির মালিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৪ ০০:০১
Share: Save:

হুকিং-এর দিন শেষ। কলকাতায় বিদ্যুৎ চুরির জন্য নিত্য নতুন বিচিত্র নানা উপায় বার করছে মাফিয়ারা। গত বুধবার একবালপুর থানা এলাকা থেকে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার পরে প্রকাশ্যে এসেছে এই অভিনব কারসাজির একটি উদাহরণ। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম আজম আলি। তিনি এলাকায় একটি অনুষ্ঠান বাড়ির মালিক।

পুলিশ জানায়, ওই অনুষ্ঠান বাড়ির মিটার আজম আলির বাবা আকবর আলির নামে। তাঁর মৃত্যুর পরে আজমই সেটি চালাচ্ছিল। চারতলা ওই বাড়িতে দু’টি বিয়ের আসরও বসতে পারে। সিইএসসি সূত্রে খবর, আজম মাটি খুঁড়ে একটি তার দিয়ে সিইএসসি-র ভূগর্ভস্থ কেব্ল লাইন ট্যাপ করে। পরে বাড়ির মেঝে খুঁড়ে ভিতর দিয়ে বাড়ির দেওয়াল কেটে কেব্লটি নিয়ে যায় দোতলায়। কেউ যাতে কেব্লটি দেখতে না পায়, সে জন্য আজম মেঝে, দেওয়াল সর্বত্রই সিমেন্ট-বালি দিয়ে গেঁথে ফেলেছিল। ট্যাপিং করা ওই তারের মাধ্যমেই বিদ্যুৎ চুরি করে এত দিন রমরমিয়ে অনুষ্ঠান বাড়ি চালিয়ে এসেছে সে।

সিইএসসি সূত্রের খবর, আজম বৈদ্যুতিক ওয়্যারিংয়ের মধ্যে ‘চেঞ্জ ওভার’ সুইচ লাগিয়ে নিয়েছিল। অর্থাৎ যখন বিয়েবাড়ি চলত, তখন সুইচ বদলিয়ে আজম চুরি করা বিদ্যুৎ ব্যবহার করত। অন্য সময়ে ব্যবহার করত সিইএসসি-র লাইন। ফলে আলোর রোশনাইয়ে বিয়েবাড়ি ভেসে গেলেও, বিল উঠত খুব সামান্যই। বিভিন্ন সূত্র মারফত সিইএসসি-র কর্তারা সম্প্রতি জানতে পারেন, আজম বিদ্যুৎ চুরি করে বিয়েবাড়ির ব্যবসা চালাচ্ছে। এর পরেই সিইএসসি-র কয়েক জন আধিকারিক একবালপুর থানার পুলিশকে নিয়ে ওই বাড়িতে হানা দেন।

সংস্থার এক কর্তা জানান, প্রথমে তাঁরা বিদ্যুৎ চুরির উৎসটাই ধরতে পারছিলেন না। মেন সুইচ বন্ধ করে দেওয়ার পরেও দেখা যাচ্ছিল বাড়িতে পুরো বিদ্যুৎ পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে। পরে তদন্তকারীরা মেঝে ও দেওয়ালের ভিতরে লুকিয়ে থাকা তারের খোঁজ পান। মেঝে খোঁড়ার পরে প্রায় ৩০-৪০ ফুট দেওয়াল কেটে তার বার করা হয়। এর পরেই সিইএসসি-র অভিযোগের ভিত্তিতে আজমকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

সিইএসসি-র এক কর্তা জানান, বিদ্যুৎ চুরির রাজত্বে আজম আলি রাঘব বোয়ালদের মধ্যেই পড়ছে। যে ভাবে বুদ্ধি করে বিদ্যুৎ চুরির পাকা ব্যবস্থা সে করে ফেলেছিল, তাতে এত দিনে কমপক্ষে ১০-১২ লক্ষ টাকা সংস্থার ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। তবে সিইএসসি-র বিদ্যুৎ পরিষেবা এলাকার মধ্যে আজম আলির ‘চুরি বিদ্যা’ একটা সাধারণ উদাহরণ মাত্র বলেই বিদ্যুৎ কর্তাদের একাংশের মত। সংস্থা কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ দিন ধরেই অভিযোগ করছেন, কলকাতায় তাঁদের পরিষেবা এলাকার মধ্যে কয়েকটি অঞ্চলে রীতিমতো বিদ্যুৎ মাফিয়াদের রাজত্ব চলছে। সিইএসসি-র কর্তারা বলছেন, তাঁদের পরিষেবা এলাকার মধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট ‘সাপ্লাই সিস্টেম’ চালু হয়ে গিয়েছে। আর তাতেই মাথায় হাত পড়েছে কর্তৃপক্ষের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ekbalpur electricity theft
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE