পুজোর আর বাকি এক সপ্তাহ। মল্লিকঘাট ফুলবাজারেও তাই ব্যস্ততা তুঙ্গে। মাঝে টানা বৃষ্টিতে সিঁদুরে মেঘ দেখেছিলেন ফুল ব্যবসায়ী ও চাষিরা। এখন বৃষ্টি বন্ধ হওয়ায় উৎসবের মরসুমে জোগানে ঘাটতি থাকবে না বলেই আশাবাদী তাঁরা।
এশিয়ার সর্ববৃহৎ এই ফুলবাজার থেকে শহরের বিভিন্ন বাজারে ফুল সরবরাহ হয়। এই মল্লিকঘাটেই প্রতিদিন কোলাঘাট থেকে ফুলের পসরা নিয়ে আসেন বছর আটত্রিশের অজয় প্রতিহারি। তাঁর বাগান কোলাঘাট থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে মাগুরিয়া গ্রামে। মল্লিকঘাট বাজারে যাতায়াত করছেন টানা ২২ বছর। অজয়বাবুর কথায়, ‘‘এ বার বাগানের অনেকটা অংশ টানা বৃষ্টিতে ডুবে গিয়েছিল। নষ্ট হয়ে গিয়েছিল বেশ কিছু ফুল। আপাতত বৃষ্টি বন্ধ হয়েছে, এটাই যা ভরসার। যেটুকু ফুল বাঁচানো গিয়েছে, তা বিক্রি করে কেমন দাম পাব জানি না।’’ একই কথা আর এক ফুল বিক্রেতা শম্ভু সামন্তেরও। হাওড়ার ঘোড়াঘাটা থেকে চার কিলোমিটার দূরে এক গ্রাম থেকে মল্লিকঘাট বাজারে ফুল নিয়ে আসেন তিনি। তিনিও জানালেন, এ বারের দীর্ঘ বৃষ্টিতে ফুল চাষিদের খুব ক্ষতি হয়েছে।
মল্লিকঘাটের এ রকম দৈনিক ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছেন খন্যানের খোকন চট্টোপাধ্যায়, রাজারাম প্রসাদ, শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বা দেউলটির অসীম শাসমল। জবা, টগর, অপরাজিতা— এমন হরেক ফুল নিয়ে প্রতিদিন মল্লিকঘাটে আসেন অসীমবাবু। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ চাষিদের থেকে ফুল কিনে তা বিক্রি করেন মল্লিকঘাটের কারবারিদের কাছে। মাঝে বৃষ্টিতে ফুলের যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠে বাজার আবার চাঙ্গা হবে কি না, কেমনই বা দাম পাওয়া যাবে, সেই চিন্তাই এখন কুরে কুরে খাচ্ছে খোকনবাবু, রাজারামবাবু বা অসীমবাবুদের। কারণ, বছরের অন্য সময়ের চেয়ে এই উৎসবের মরসুমেই ফুলের চাহিদা থাকে আকাশছোঁয়া।
মল্লিকঘাট ফুলবাজারের ব্যবসায়ীরা জানালেন, রজনীগন্ধা বিকোচ্ছে কেজি প্রতি সাড়ে তিনশো টাকায়। দোপাটির দাম প্রতি কিলো ৬৫, গাঁদা ৫৫। এক হাজার জবা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা দরে। কোলাঘাট-দেউলটি-হাউর-পাঁশকুড়া থেকে আনা পদ্ম প্রতি ১০০টি বিকোচ্ছে সাড়ে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। অসীমবাবু বলেন, ‘‘পদ্ম চাষে মাস তিনেক সময় লাগে। এ বার বৃষ্টির কারণে চাষিরা খুব ফাঁপরে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে এই সব ফুল তাঁদের রাখতে হচ্ছে হিমঘরে।’’
অসময়ের বৃষ্টিতে ফুল চাষের ক্ষতির পাশাপাশি জলে-কাদায় কার্যত নরক হয়ে ওঠে হাওড়ার এই ফুলবাজারও। নাকাল হন ফুল সরবরাহকারী থেকে শুরু করে বিক্রেতা, খদ্দের সকলেই। বিক্রিবাট্টাও হয় না সে ভাবে। এখন তাই সকলের একটাই প্রার্থনা, বৃষ্টি নেমে তাঁদের ব্যবসা যেন আর মার না খায়।
সেই আশাতেই এখন বুক বাঁধছে মল্লিকঘাট ফুলবাজার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy