প্রহারে জখম সেই বিবেককুমার তিওয়ারি। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা। শিশুকন্যাকে কোলে নিয়ে হাওড়া স্টেশনে নিউ কমপ্লেক্সের ক্যাব রোড ধরে হাঁটছিলেন এক দম্পতি। আচমকাই পিছনে ‘টেররিস্ট কিডন্যাপ করকে ভাগ রহা হ্যায়, পাকড়াইয়ে!’ বলে চিৎকার। আশপাশের অন্য যাত্রীদের মতোই থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন তাঁরাও। চমকে পিছন ফিরে সোদপুরের বাসিন্দা ওই দম্পতি, দীপঙ্কর ও সুতপা চট্টোপাধ্যায় দেখেন, চিৎকার করতে করতে সটান তাঁদের দিকেই ছুটে আসছেন এক যুবক। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁদের সামনে পৌঁছে গিয়ে দীপঙ্করবাবুর গালে সপাটে চড় কষালেন তিনি। ফের চেঁচালেন, ‘‘লড়কিকো উতরাইয়ে, কিডন্যাপ করকে ভাগ রহা হ্যায়! টেররিস্ট!”
হতভম্ব দম্পতিকে ঘিরে ততক্ষণে ভিড় জমতে শুরু করেছে। দীপঙ্করবাবু বলার চেষ্টা করছিলেন, সঙ্গে থাকা মহিলা তাঁর স্ত্রী, শিশুটিও তাঁদেরই মেয়ে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! উত্তেজিত যুবকটি ফের তাঁকে মারতে ঘুষি পাকাতেই ভয় পেয়ে কেঁদে ওঠে তাঁর কোলে থাকা শিশুকন্যা। এর পরে ‘মা’ বলে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সুতপাদেবীর কোলে।
এই দৃশ্য দেখে ভুল ভাঙে ঘটনাস্থলে জড়ো হওয়া জনতার। তাঁরা বুঝতে পারেন, ওই যুবকই ভুল করেছেন। ওই যুবক অবশ্য এতেও ক্ষান্ত হননি। উল্টে ফের ওই দম্পতিকে ‘কিডন্যাপার’ বলে মারতে যেতেই এ বার তাঁকে পাল্টা চড় কষিয়ে দেন দীপঙ্করবাবু। এর পরেই উত্তেজিত জনতার কিল-চড়-ঘুষি নেমে আসে ওই যুবকের উপরে। মারের চোটে নিমেষে মাথা ফেটে রক্ত বেরোতে থাকে তাঁর। খবর পেয়ে রেল পুলিশ এসে পড়ায় কোনও মতে রক্ষা পান ওই যুবক। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে এবং ওই দম্পতিকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে পুলিশের কাছে সমস্ত ঘটনা জানানা দীপঙ্করবাবুরা। তাঁদের বিরুদ্ধে মারধরের পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন ওই যুবকও।
ঘটনার তদন্তে নেমে রেল পুলিশ জানতে পারে, এ দিন এক অসুস্থ আত্মীয়কে ট্রেনে তুলতে এক বছরের মেয়েকে নিয়ে হাওড়া স্টেশনে এসেছিলেন ওই দম্পতি। স্টেশনে পৌঁছতে দেরি হয়ে যাওয়ায় মেয়েকে কোলে নিয়ে নিউ কমপ্লেক্সে পৌঁছে ২৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন তাঁরা। তখনই ওই যুবক এসে এই কাণ্ড ঘটান।
রেল পুলিশ জানায়, বছর তিরিশের ওই যুবকের নাম বিবেককুমার তিওয়ারি। বাড়ি ঝাড়খণ্ডের ধানবাদে। বিবেক হায়দরাবাদের একটি সংস্থায় চাকরি করেন। এ দিন সেখান থেকেই হাওড়ায় এসে ধানবাদ যাওয়ার জন্য হাওড়া স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। তখনই এই ঘটনা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পরে রেল পুলিশের ধারণা, ওই যুবক মানসিক বিকারগ্রস্ত। পুলিশের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে নানা অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেছেন বিবেক। তাঁর এখনও ধারণা, শিশুটিকে অপহরণ করা হয়েছে। রেল পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানান, দু’পক্ষ অভিযোগ করায় কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি। সকলকেই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy