Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

থিম পুজোর ভিড়ে কমছে সাবেক প্রতিমার চাহিদা

মহালয়ার ভোরে পিতৃপক্ষের অবসানে তর্পণের ভিড় তো ছিলই। সঙ্গে ছিল কুমোরটুলি থেকে ঠাকুর বেরোনোর লম্বা লাইন। সোমবার, দেবীপক্ষের সূচনায় প্রতিমা মণ্ডপে নিয়ে যাওয়ার ব্যস্ততাও ছিল তুঙ্গে।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৫ ০২:৩৩
Share: Save:

মহালয়ার ভোরে পিতৃপক্ষের অবসানে তর্পণের ভিড় তো ছিলই। সঙ্গে ছিল কুমোরটুলি থেকে ঠাকুর বেরোনোর লম্বা লাইন। সোমবার, দেবীপক্ষের সূচনায় প্রতিমা মণ্ডপে নিয়ে যাওয়ার ব্যস্ততাও ছিল তুঙ্গে। কিন্তু পুজো উদ্যোক্তাদের হৈ-হুল্লোড়ের মাঝেও মন খারাপের ছাপ পটুয়াপাড়ার শিল্পীদের চোখে-মুখে।

এই প্রথম কুমোরটুলির অধিকাংশ শিল্পীদের গড়া প্রতিমা এখনও স্টুডিওয় পড়ে। শিল্পীরা জানাচ্ছেন, অন্য বছর যারা বায়না দেন তাঁদের মধ্যে বেশ কিছু উদ্যোক্তা প্রতিমা নেবেন না বলে আগেই জানিয়েছেন। বায়না ছাড়াই যাঁরা মহালয়ার আগে প্রতিমা কিনতে আসেন, তাঁদেরও দেখা মেলেনি সে ভাবে।

পাঁচ পুরুষ ধরে কুমোরটুলিতে প্রতিমা গড়ছেন শিল্পী জয়দেব পাল। তাঁর কথায়, ‘‘গত বছর ১৮টি প্রতিমা বিক্রি হয়েছিল। এ বার ১০টি প্রতিমা তৈরি করি। কিন্তু এখনও পাঁচটা বিক্রিই হয়নি।’’ কেন? শিল্পীর উত্তর, ‘‘চারদিকে থিম পুজোর রমরমা। তাই হয়তো কুমোরটুলি থেকে সাবেক মূর্তি নেওয়ার ঝোঁক ক্রমেই কমছে।’’

শিল্পী সুজিত পাল, সমীর পাল বা মধুময় পালদেরও একই অভিজ্ঞতা। সুজিতবাবুর কথায়, ‘‘তিন জন বাঁধা খদ্দের এ বার ঠাকুর নেবেন না বলে আগেই জানিয়েছিলেন। গত বারের চেয়েও কম প্রতিমা গড়েছি। তা সত্ত্বেও তিনটি ঠাকুর পড়ে আছে।’’ কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সাংস্কৃতিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিৎ পালের বক্তব্য, প্রতিমা বিক্রি না হওয়ার জন্য থিম পুজো অনেকটা দায়ী। কুমোরটুলি প্রগতিশীল ও সাজশিল্প সমিতির সম্পাদক অপূর্ব পাল জানান, এ বার বাজারও খুব মন্দা।

সমীক্ষা বলছে, গত বছর কুমোরটুলিতে প্রতিমা তৈরি হয়েছিল প্রায় ৬০০০। এ বছর শুরুতেই দেড়শো ঠাকুর কম তৈরি হয়েছে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমেছে সাবেক প্রতিমা কেনার চাহিদাও। অনেক শিল্পী বলছেন, প্রতিযোগিতার বাজারে বহু বড় পুজো গ্রাস করেছে ছোট পুজোগুলিকে। কিছু ছোট পুজো এখন প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। সে কারণেও বিক্রি হচ্ছে বেশ কম।

শিল্পী নিমাই পাল গত পুজোয় ২৯টি প্রতিমা বিক্রি করেছিলেন। নিমাইবাবু জানাচ্ছেন, এ বার ন’জন অনেক আগেই ঠাকুর নেবেন না বলে জানিয়েছিলেন। থিমের প্রতি আকর্ষণ বাড়ায় বাইরের শিল্পীদের দিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ সারছেন অনেকে। কুমোরটুলি সাংস্কৃতিক সমিতির মুখপাত্র বাবু পালের অভিজ্ঞতা, থিম তো আছেই। প্রতিমার দাম বাড়াও এর জন্য দায়ী। তিনি জানান, কলকাতা ছাড়াও জেলা থেকে অনেক অর্ডার আসত। এ বছর অনেকেই জেলার কাছাকাছি শিল্পীদের কাছে ঠাকুর কিনে নিচ্ছেন।

সব মিলিয়ে এই শারদপ্রাতের উজ্জ্বল আলোর মাঝেও অনেক শিল্পীর মুখ কিন্তু নিষ্প্রভই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE