শিবশঙ্করের খোঁজে জাল ফেলা হয়েছে বাগজোলা খালে। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র
দুর্ঘটনার পরে কেটে গিয়েছে দু’দিন। কিন্তু জাল ফেলে, ডুবুরি নামিয়ে শনিবারও খোঁজ মিলল না বাগজোলা খালে পড়ে যাওয়া যুবক শিবশঙ্কর মিস্ত্রির। যত দেরি হচ্ছে, উদ্ধারের কাজও ততই কঠিন হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা।
বৃহস্পতিবার রাতে তীব্র গতিতে আসা একটি মোটরবাইক কেষ্টপুর সেতুর রেলিংয়ে ধাক্কা মেরে উল্টে যায়। তিন আরোহী খালে পড়ে যান। তাঁদের মধ্যে সঞ্জয় বিশ্বাস ও গোপাল দাস উঠতে পারলেও শিবশঙ্কর উঠতে পারেননি। ওই রাতেই শুরু হয় তল্লাশি। উদ্ধারকাজে নামা কর্মীরা বৃহস্পতিবার জানিয়েছিলেন, খালে আবর্জনার স্তূপ থাকায় পদে পদে বাধা পাচ্ছেন তাঁরা। শুক্রবার কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনার বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ডুবুরিরা জলে নামেন। কিন্তু পাঁকের মধ্যে নেমে কাজ করতে গিয়ে তাঁরা সমস্যায় পড়েন।
শনিবার সকালে আসে ‘ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স’ (এনডিআরএফ)। আবর্জনার স্তূপ দেখে তারা পুলিশকে জানায়, খাল পুরো পরিষ্কার না হলে নেমে কাজ করতে অসুবিধা হবে। তাঁদের এক আধিকারিকের মন্তব্য, “ডুবুরিরা জলে নেমে কাজ করেন, পাঁকে নয়।” দু’দিন ধরে যাঁরা খাল পরিষ্কারের কাজে নেমেছেন তাঁরা জানাচ্ছেন, এই দুর্ঘটনা না ঘটলে বোঝাই যেত না যে, খালটি কতটা দূষিত ও অপরিষ্কার হয়ে রয়েছে। ডুবুরিরা জানান, খালটি যথেষ্ট গভীর। কিন্তু প্রায় দু’মানুষ সমান পাঁক জমে থাকায় উদ্ধারকাজে বারংবার বাধা পাচ্ছেন তাঁরা। তাঁরা জানান, খালের ভিতরে ঝাঁঝালো বিষাক্ত গন্ধে অক্সিজেন সিলিন্ডারও কাজ করছে না।
শিবশঙ্করের বন্ধু গোপাল দাস জল থেকে ওঠার পরে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে তাঁর পরিবার সূত্রে খবর। বিশেষজ্ঞদের মতে, ওই খালের দূষিত কালো জল মানুষের পেটে কোনও ভাবে চলে গেলে তাঁর অসুস্থ হয়ে পড়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তাই অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করেই কাজ করতে হচ্ছে ডুবুরিদের। এর জেরে শনিবারও ফের প্রশ্নে উঠেছে খাল পরিষ্কারের ব্যাপারে সেচ দফতরের দায়বদ্ধতা নিয়ে।
শিবশঙ্করের বাবা সমরেশ মিস্ত্রি পেশায় দিনমজুর। তাঁর অভিযোগ, “খাল পরিষ্কার থাকলে আমার ছেলেকে এতক্ষণে খুঁজে পাওয়া যেত। জলে পড়ার পরে হয়তো নিজেই উঠে আসতে পারত।” শিবশঙ্করের আত্মীয় প্রদীপ মণ্ডল বলেন, “শিবশঙ্কর ভাল সাঁতার জানত। জল পরিষ্কার থাকলে ও সাঁতরে উঠে আসতে পারত। কিন্তু এই পরিমাণ পাঁকের মধ্যে তো আর সাঁতার কাটা যায় না।”
শনিবারও সকালে ফের খাল পরিষ্কার শুরু হয়। আবর্জনার সঙ্গে তোলা হয় পাঁকও। স্থানীয় লোকজন, পুরকর্মী ও সেচ দফতরের কর্মীরা সাফাইয়ের কাজে হাত লাগান। বাগজোলা খালের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেচ দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার যিশু দত্ত বলেন, “শুক্রবার সকাল থেকেই আমাদের কর্মীরা খাল পরিষ্কারের কাজে হাত দেন। এ দিন খাল অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।” যিশুবাবুর দাবি, “২০১২ সালে আপার বাগজোলার পুরোটাই সংস্কার হয়েছিল। কিন্তু সাধারণ মানুষের সচেতনতার এতটাই অভাব যে, বাগজোলা খালকে ভাগাড় মনে করে তাঁরা সব আবর্জনাই সেখানে ফেলতে শুরু করেন। আমরা বারংবার খালে আবর্জনা না ফেলার আর্জি জানিয়েছি।” পাঁক-আবর্জনা পরিষ্কার করে এ দিন এনডিআরএফ-এর ডুবুরি খালে নামেন। তবে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত খুঁজেও শিবশঙ্করের খোঁজ মেলেনি।
শিবশঙ্কর খালে পড়ে যাওয়ার পরে দূরে ভেসে গিয়েছেন কি না, সে আশঙ্কাও রয়েছে। ২০০৮ সালে কেষ্টপুরের বাগজোলা খালে যখন বাসে পড়েছিল, তখন উদ্ধারকাজে নেমেছিলেন ডুবুরি গোবিন্দ তুড়ি। এ বারও উদ্ধারকাজে ডাক পড়েছে তাঁর। গোবিন্দ বললেন, “সে বার এক জনের দেহ প্রায় পাঁচ-সাত দিন পরে উদ্ধার হয়েছিল ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছুটা দূরে। পাঁকের মধ্যে দেহ ভেসে চলে গিয়েছিল কিছুটা। এ বারও যে তেমন হয়নি কে বলতে পারে?”
এই আশঙ্কায় শুক্রবার সন্ধ্যয় কেষ্টপুরের লকগেট নামিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ঘটনা ঘটেছে বৃহস্পতিবার রাত একটা নাগাদ। তার এক দিন পরে লকগেট বন্ধ করে কতটা লাভ হবে, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। উদ্ধারকর্মীদের একাংশের মতে, লকগেট নামাতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনার সময়ে শিবশঙ্করের বন্ধু সঞ্জয় বিশ্বাস বাইক চালাচ্ছিলেন। তিনি বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার হন। শনিবার তাঁকে বারাসত আদালতে তোলা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy